মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

শব্দদূষণের শেষ কোথায়?

মো. তোফাজ্জল হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ঢাকা শহরে শব্দদূষণের মাত্রা পৃথিবীর অন্যান্য শহরের তুলনায় অধিক। শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মানুষকে রক্ষা করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব হলেও সরকার শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে উল্লেখ করার মতো ভূমিকাই রাখেনি বা রাখছে না। বাহ্যিকভাবে শব্দদূষণ ক্ষতিকর মনে না হলেও মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের প্রায় সব এলাকাতেই শব্দদূষণের মাত্রা দুই থেকে তিনগুণ বেশি। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ঢাকার জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ মানুষ বধিরতায় আক্রান্ত হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আবাসিক এলাকায় শব্দের মাত্রা দিনের বেলা ৫৫ ডেসিবেল, রাতে ৪৫ ডেসিবেল হওয়া উচিত, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৬৫ ডেসিবেল, রাতে ৫৫ ডেসিবেল, শিল্পাঞ্চলে দিনে ৭৫ ডেসিবেল, রাতে ৬৫ ডেসিবেলের মধ্যে শব্দমাত্রা থাকা উচিত। আর হাসপাতালে সাইলেন্স জোন বা নীরব এলাকায় দিনে ৫০, রাতে ৪০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা থাকা উচিত। বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের শব্দ পরিমাপ করে দেখেছে, যেখানে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে দেড় গুণ বেশি। ঢাকায় যানবাহন ও হর্নের শব্দই শব্দদূষণের মূল কারণ। শব্দদূষণের মাত্রা যে পর্যায়ে যাচ্ছে তাতে শিল্প-কারখানা, পরিবহন এবং সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে শব্দের সুনির্দিষ্ট তীব্রতা সম্পর্কিত স্পষ্ট আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। কিন্তু পরিবেশ সংশ্লিষ্ট বিশাল অধিদপ্তর, মন্ত্রী, জেলা অফিস, আইন সবই রয়েছে। তারপরেও শব্দদূষণের মাত্রার লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিবশে সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ক্ষমতাবলে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ প্রণয়ন করা হয়। বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদন্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদন্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডি দন্ডিত হওয়ার বিধান থাকলেও বাস্তবে এই আইনের তেমন প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে নীরবে শব্দ সন্ত্রাস বেড়েই চলেছে।
রাজধানীর শব্দদূষণ নিয়ে ২০১৩ সালে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। পবা জরিপ করে ঢাকার বিভিন্ন স্থানের শব্দের মাত্রা নিরূপণ ও পর্যবেক্ষণ করে যে তথ্য পেয়েছিল, তাতে প্রতিটি জায়গায় শব্দের মাত্রা ছিল সহনীয় মাত্রার চেয়ে দুই গুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্যমতে, শব্দের সহনীয় মাত্রা ৪৫ থেকে ৫০ ডেসিবেল। ৬০ ডেসিবেল শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তি নষ্ট করার জন্যই যথেষ্ট। আর ১০০ ডেসিবেল শব্দে মানুষ চিরতরে হারিয়ে ফেলতে পারে তার শ্রবণশক্তি। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় শব্দদূষণের মাত্রা ৭৮, শাহবাগে ৮২, গুলশানে ৯০, ফার্মগেটে ১০০, গাবতলীতে ১০২ ও সায়েদাবাদে ১০৬ ডেসিবেল। রাজধানীর রাস্তায় চলাফেরা করার সময় প্রায়ই দেখা যায়, গাড়ির চালকগণ হর্ন বাজানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। বিনা প্রয়োজনে হরহামেশাই হর্ন বাজানো হচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বা সংরক্ষিত এলাকা যেমন স্কুল, মসজিদ, হাসপাতালের পাশের রাস্তাগুলোতে হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ থাকলেও কেউ তা মানছে না। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে মেট্রোপলিটন সিটি, বিভাগীয় শহর, পৌরসভাকে নীরব, আবাসিক, মিশ্র বাণিজ্যিক এবং শিল্প এ পাঁচ এলাকায় ভাগ করে পৃথক মাত্রায় শব্দ ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করা হয়। এ আইনে দিনে ও রাতে নির্ধারিত সহনীয় মাত্রায় শব্দ হচ্ছে নীরব এলাকায় ৪৫ ও ৩৫, আবাসিক এলাকায় ৫০ ও ৪০, মিশ্র এলাকায় ৬০ ও ৫০, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ও ৬০ এবং শিল্প এলাকায় ৭৫ ও ৭০ ডেসিবেল। ২০০৬ সালের নভেম্বরে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ করা হলেও সরকারের অনেক মন্ত্রণালয় পরিবেশ এবং শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করছে। হর্ন বাজানো যেখানে সম্পূর্ণ নিষেধ, সেখানে অনেক গাড়ির চালক সিগনালে বা যানজটে দাঁড়িয়ে থাকাকালীন সময়ে অযথা হর্ন বাজাচ্ছে। অথচ এই বিষয়টি দেখার কেউ নেই।
মানুষের কষ্টের কারণ হয় এমনভাবে কোন এবাদত করার ব্যাপারে নবী করীম (সা.) এর স্পষ্ট নিষেধ রয়েছে। তাফসীরে মারেফুল কোরআনের অনুবাদক মুফতী শফী (র.) এর সুযোগ্য পুত্র আল্লামা মুফতী তকী উসমানী তাঁর ‘ইসলাম ও আমাদের জীবন’ গ্রন্থে ‘মাইকের অপব্যবহার’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘কারো সম্পত্তি আত্মসাত করা বা কাউকে দৈহিক কষ্ট দেওয়াই শুধু জুলুম নয়, বরং আরবী ভাষায় জুলুমের সংজ্ঞা এই দেওয়া হয়েছে যে, কোনো জিনিসকে অনুপযুক্ত স্থানে ব্যবহার করাই জুলুম। আর যে ব্যবহার দ্বারা অন্যে কষ্ট পায় শরীয়তের বিধানে তা কবীরা গোনাহ। কিন্তু আমাদের সমাজে অনেক কবীরা গোনাহ এত বহুল প্রচলিত যে, এখন তা গোনাহ হওয়ার অনুভূতিও আর অবশিষ্ট নেই। কষ্ট দেওয়ার এরূপ অত্যন্ত কষ্টদায়ক একটি পন্থা হল মাইকের অপব্যবহার। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উচ্চশব্দে মাইক বাজিয়ে লোকজনকে শুনতে বাধ্য করা শরীয়তে বৈধ নয়।’
সর্বত্র শব্দ দূষণের ক্ষতিকর দিকগুলো আমাদেরকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। উচ্চমাত্রার শব্দের কারণে মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস, বধিরতা, হৃদরোগ, আলসার, মস্তিকের রোগ, কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস, বদমেজাজ বা খিটখিটে মেজাজ, ক্রোধ প্রবণতা, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, রক্তনালীর সংকোচন এবং হার্টের সমস্যার প্রকট বাড়ছে। যানবাহনের হর্ন ও ইঞ্জিনের শব্দ ছাড়াও বিভিন্ন নির্মাণকাজের শব্দ, মেশিনে ইট ও পাথর ভাঙার শব্দ, বিল্ডিং ভাঙার শব্দ, কলকারখানা নির্গত শব্দ, গ্রিলের দোকানে হাতুড়ি পেটার শব্দ, জেনারেটের শব্দ, লাউড স্পিকারের শব্দ, অডিও ক্যাসেটের দোকানে উচ্চ শব্দে গান বাজানোর শব্দও নাগরিক জীবনকে বিষিয়ে তুলছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দ দূষণ যেকোন বয়সী মানুষের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর। তবে কোমলমতি শিশু, ট্রাফিক পুলিশ, রিক্সাচালক, রাস্তার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা শব্দ দূষণের কারণে অধিক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমেরিকান একাডেমী অব নিউরোলজীর তথ্যমতে, যারা প্রতিদিন উচ্চশব্দের মুখোমুখি হয় তাদের ৪২ শতাংশ মানুষ মাইগ্রেনে ভোগেন। অন্যদিকে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় বলা হয়, উচ্চশব্দে কাজ করে অভ্যস্ত মানুষেরা স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকেন এবং এদের ৮ শতাংশ ক্ষেত্রে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। আমেরিকা, কানাডা, রাশিয়া, গ্রেটব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানী, ফ্রান্সসহ বিশ্বের প্রতিটি উন্নত দেশে শব্দদূষণ প্রতিরোধে কঠোর আইন থাকলেও বাংলাদেশে তার ছিটেফোটাও প্রতিফলিত হচ্ছে না। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী স্বাস্থ্য সাময়িকী দ্য ল্যানসেট নিকট অতীতে পরিবেশদূষণজনিত মৃত্যু নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গবেষণায় উঠে এসেছে,বর্তমানে বিশ্বে প্রতি বছর পরিবেশদূষণের কারণে ৯০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুর মিছিলে থাকা শীর্ষ ১০টি দেশে হলো বাংলাদেশ, সোমালিয়া, চাদ, নাইজার, ভারত, নেপাল, সাউথ সুদান, ইরিত্রিয়া, মাদাগাস্কার এবং পাকিস্তান। শব্দ দূষণের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করার প্রয়াসে সরকারকে এখনই উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।

 

চিকিৎসা ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বা চিকিৎসা খাতে বাংলাদেশের মানুষকে নিজের পকেট থেকে সর্বোচ্চ পরিমান অর্থ ব্যয় করতে হয়। বেঁচে থাকার জন্য চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে প্রতি বছর দেশের ১৫শতাংশ মানুষ অর্থনৈতিকভাবে নি:স্ব-বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেল্থ অ্যাকাউন্টের তথ্য অনুসারে, শুধমাত্র জরুরী চিকিৎসার খরচ যোগাতে গিয়ে বাংলাদেশে বছরে ৬৫ লাখ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতের এই বাস্তবতা জাতির উন্নয়ন ও অগ্রতির পথে বড় ধরনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দেশের কোটি কোটি মানুষ নানামাত্রিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে তারা যেভাবে নি:স্ব হয়ে যাচ্ছে তা উদ্বেগজনক। দেশের ওষুধ শিল্পখাতের প্রায় শতভাগ স্বনির্ভিরতা এবং ওষুধ রফতানী থেকে বছরে হাজার কোটি টাকার আয়ের বাস্তবতার পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাতে সরকার প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার পরও চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে লাখ লাখ পরিবারের নি:স্ব হয়ে পড়ার এই বাস্তবতা মেনে নেয়া যায়না। সরকারের নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং বিদ্যমান অনিয়ম, অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি-লুটপাটের কারণেই স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যয়িত অর্থের সুফল থেকে জনগণ বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে।
সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের অনিয়ম,দুর্নীতি ও অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার কারণেই দেশে বেসরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবার প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশ ঘটেছে। বর্তমান বাস্তবতায় সরকারী স্বাস্থ্যসেবা খাত এবং বেসরকারী হাসপাতাল ও চিকিৎসা সেবায় যে অনিয়ম-দুর্নীতির মচ্ছব চলছে তার পুরো দায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। চিকিৎসকদের যথেচ্ছ ভিজিট ফি আদায়, অপ্রয়োজনীয় ডায়গোনস্টিক টেস্টের কমিশন বাণিজ্য, ওষুধ কোম্পানীগুলোর যত্রতত্র ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি এবং অপ্রয়োজনীয় ও ভুল চিকিৎসার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অথচ এসব ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের দায় রয়েছে। অন্যান্য দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত, হাসপাতালের সেবাও ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণে যে ধরনের কঠোর নজরদারি এবং মান নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা সক্রিয় থাকে আমাদের দেশে সে সব প্রশাসনিক ব্যবস্থা থাকলেও এসব ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের কল্যাণে ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় তেমন কোন কাজ করছেনা। সরকারী বেসরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের দুর্নীতি বন্ধ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে সরকাররের কাছে দেয়া সুনির্দ্দিষ্ট প্রস্তাব অনুসারে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও অধিদফতরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয়ার পরও তা বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। দুর্নীতি বন্ধে ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস ও ফি নির্ধারণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ণ করা, সরকারী হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা, গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য নিয়মিত গণশুনানীর ব্যবস্থা করা, ওষুধ ও মেডিকেল যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা এবং দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যবীমা পলিসির ব্যবস্থা করতে সুপারিশ করে দুদক।
দেশের বিশাল সংখ্যক মানুষকে রুগ্ন ও অসুস্থ্য রেখে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। কোটি মানুষের চিকিৎসা ব্যয়ের অর্থ দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটেড মুনাবাবাজির মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের পকেটে যাওয়ার সুযোগ স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। দেশের হাজার হাজার ইউনিয়নে স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র রয়েছে, প্রায় প্রতিটি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সরকারী হাসপাতাল, অবকাঠামো ও জনবল রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান স্বচ্ছ ও সঠিকভাবে পরিচালিত হলে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষকে রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে ভীড় করতে হতোনা। অনিয়ম-দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও মাত্রাতিরিক্ত মুনাফাবাজির কারণে অনেক মানুষ দেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসা সেবার প্রতি আস্থা হারাচ্ছে। অনেকে শেষ সম্বল বিক্রি করে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ দেশে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসক এবং হাসপাতাল রয়েছে। একশ্রেনীর ডাক্তার ও সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনৈতিক মুনাফাবাজি, বাণিজ্যিক ও অপেশাদার মনোভাবের কারণে দেশের পুরো স্বাস্থ্যখাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার সুযোগ বৃদ্ধি এবং চিকিৎসাপ্রার্থী নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি বেসরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবাখাতে বিদ্যমান স্বেচ্ছাচার, অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ করা গেলে দেশের স্বাস্থ্যখাতের চেহারাই পাল্টে যেতে পারে। রাজধানীর বাইরের স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে দেশের কোটি মানুষ নি:স্ব হয়ে পড়ছে। এই বাস্তবতার পরিবর্তন করা জরুরী। সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসকদের রাজনৈতিক দলবাজি বন্ধে রাজনৈতিক নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসা যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষন ও সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে ডাক্তারদের কমিশন বাণিজ্য, ওষুধ বাণিজ্য বন্ধের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় আইন ও নীতিমালা প্রণয়নের সাথে সাথে তার যথাযথ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। সুস্থ্যভাবে বেঁেচ থাকা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন