পরিচ্ছন্ন ও নির্মল বাতাসের নগরী হিসাবে পরিচিত রাজশাহীর মানুষ এখন ভুগছে শব্দদূষণে। চিকিৎসকরা বলছেন নগরীর ১১ শতাংশ মানুষ এখন কানের সমস্যায় ভুগছেন। সকাল থেকেই মধ্য রাত অবদি যানবাহনের তীব্র হর্ণের শব্দে অতিষ্ট নগরবাসী। এনিয়ে সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসন উদ্বিগ্ন। ইতোমধ্যে রাজশাহী শহরের দুটি এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। এলাকা দুটি হলো, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং আদালতপাড়া। এলাকা দুটিতে গাড়ির হর্ণ বাজানো নিষেধ। ঠিকই হর্ণ বাজাচ্ছে নীরব এলাকায়। নীরব এলাকায় হর্ণ বাজালে ব্যবস্থা নেয়ার কথা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের। অথচ রাজশাহী মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে এ ব্যাপারে কোন মামলায় হয়নি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এলাকায় একটি সাইনবোর্ড লাগিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। এতে লেখা আছে, আদালত এলাকা হর্ণ বাজানো নিষেধ। আর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প এর আওতায় রাজশাহী সিটি করর্পোরেশন এবং পরিবেশ অধিদফতর যৌথভাবে রামেক হাসপাতালের আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুসারে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস, আদালত বা একই জাতীয় অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান এবং তার চারিদিকে ১০০ মিটার পযর্ন্ত এলাকাও নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতর এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় রাজশাহী শহরে একটি জরিপ চালিয়ে দেখেছে, নীরব এলাকায় মাত্রার দ্বিগুণেরও বেশী শব্দ।
রাজশাহী শহরের ১৫টি স্থানের বর্তমান পরিস্থিতি জানা গেছে। স্থানগুলোর প্রতিটিতেই শব্দের মাত্রা শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ নির্দেশিত মানমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ। নীরব এলাকায় শব্দের মানমাত্রা দিনে ৫০ এবং রাতে ৪০ ডেসিবল। পরিবেশ অধিদফতরের জরিপে দেখা গেছে, দুটি নীরব এলাকার মধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এলাকায় শব্দ দূষণের সর্ব্বোচ মাত্রা ১১৯ দশমিক ৪ ডেসিবল। আর সর্বনিম্ন ৫৪ দশমিক ৭ ডেসিবল। দিনে, সন্ধ্যায় ও রাতে এ এলাকায় শব্দের গড় মাত্রা ১২৫ দশমিক ৫ ডেসিবল, যা দ্বিগুণেরও বেশি।
রামেক হাসপাতাল এলাকায় গড়ে ১০০ দশমিক ৫ ডেসিবল মাত্রার শব্দ থাকে। ওই জরিপে প্রতিটি স্থানে ১৫ জন করে ব্যাক্তির সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। এতে অর্ধেক উত্তরদাতা শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রন) বিধিমালা ২০০৬ সম্পর্কে জানেন না বলে জানিয়েছেন। আর ৯৫ শতাংশ উত্তরদাতা কখনও শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগ করতে দেখেননি বলে জানিয়েছেন। উত্তরদাতাদের মধ্যে থেকে গত ছয় মাসে প্রায় ১১ শতাংশই কানের সমস্যার কারণে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একজন কর্মচারী বলেন, অফিসের সামনের রাস্তাটি নীরব এলাকা। সাইনবোর্ডও লাগানো আছে। কিন্তু কখনো কি হর্ণ বাজানো বন্ধ হয়েছে? নীরব এলাকায় হর্ন বাজানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে আরএমপিও ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার শারমিন আকতার বলেন, নীরব এলাকায় হর্ণ বাজালে ট্রাফিক আইনে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে। তবে আমি আসার পর এ ধরনের কোন মামলা দেখিনি। অন্যান্য ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের কারনে নিয়মিতই মামলা করা হচ্ছে। জরিমানা আদায় হচ্ছে। রাজশাহী সিটি করর্পোরেশনের সচিব মশিউর রহমান বলেন, কয়দিন আগেও একটা কর্মশালায় এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন