শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

অস্তিত্ব সঙ্কটে রাজবাড়ীর ৪ নদী

ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) থেকে মো. নজরুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নদীমাতৃক জেলা রাজবাড়ী। জেলার ১,০৯২.২৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে মধ্যে রাজবাড়ীকে ঘিরে পদ্মা, চন্দনা, গড়াই ও হড়াই নদীর বিস্তার। কালের বিবর্তনে বর্তমানে প্রায় প্রতিটি নদীর পানি শুকিয়ে তার চলার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। ভারত গঙ্গার উৎস থেকে শুরু করে মাঝ পথেই সিংগভাগ পানি সরিয়ে নিচ্ছে। ফলে পর্যাপ্ত পানি ফারাক্কা পয়েন্টে পৌছাতে পারছে না। ফারাক্কার বিরুপ প্রভাবে শীতকালেই প্রমত্তা রাজবাড়ী পদ্মা নদীসহ জেলা গুরুত্বপূর্ণ ৪টি নদী শুকিয়ে মরা নদীতে পরিণত হচ্ছে। পদ্মার বুকে জেগে উঠেছে বিশাল বিশাল চর। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পরিবেশ, চাষাবাদ ও নৌ যোগাযোগ।
শীতের শুরু থেকে শুকিয়ে যাচ্ছে বর্ষায় ডুবিয়ে থাকা রাজবাড়ীর পদ্মা, গড়াই, চন্দনা ও হড়াই নদীসহ শতাধিক খাল। পানি শুকিয়ে বালুর চরে পরিণত হচ্ছে নদী ও খালগুলো। ফলে পদ্মার চরসহ সকল নদীর বিতৃর্ণ এলাকা জুড়ে ইরি-বোরো, বাদাম ও সবজি চাষাবাদে সেচ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অনাবাদি হয়ে পড়ছে বিস্তৃত ফসলি জমি। পানি সেচ সুবিধা থাকলে আবাদযোগ্য সব জমিতে ইরি-বোরো ও সবজি চাষাবাদ করতে পারত কৃষকরা। এতে জড়িত হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্য বদলে যেত। ঘুরে যেত জেলার অর্থনীতির চাকা। এলাকার ধান ও সবজিসহ নানা ফসল উৎপাদনে এসব খাল ও নদী গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে আসছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। ফলে প্রতি বছর বর্ষায় উজান থেকে নেমে আসা পলিতে এসব খাল ও নদী ক্রমশ ভরাট হতে থাকে। হ্রাস পেতে থাকে পানির গভীরতা। ফলে বর্ষায় এসব খাল ডুবে উপচে পড়ে জনপদে। আর শীতে শুকিয়ে প্রায় মৃত হয়ে পড়ে। এতে দেখা দেয় সেচ সঙ্কট। ব্যাহত হয় ধান ও সবজি চাষাবাদ। গত দুই দশক ধরে চলছে এ অবস্থা।
রাজবাড়ী জেলার উত্তরে পদ্মা নদী, পশ্চিম থেকে পূর্বে পদ্মা ও যমুনার সঙ্গমস্থল দৌলতদিয়ার সামান্য উত্তরে আরিচা ঘাট। জেলার উত্তর দিকে প্রমত্তা পদ্মা নদী হাবাসপুর-সেনগ্রাম-ধাওয়াপাড়া ঘাট পর্যন্ত সরলভাবে প্রবাহিত হয়ে রাজবাড়ী জেলা শহরের কিঞ্চিৎ পশ্চিম হতে উত্তরে বাঁক নিয়ে দৌলতদিয়া পর্যন্ত প্রবাহিত। দৌলতদিয়া সামান্য উত্তরে আরিচার ভাটিতে পদ্মা যমুনার সাথে মিলিত হয়েছে। পদ্মার অপর পারে পাবনা ও মানিকগঞ্জ জেলা। দক্ষিণে পদ্মার শাখা গড়াই নদী। গড়াইয়ের ওপারে ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলা। এ জেলার পূর্বে ফরিদপুর ও পশ্চিমে কুষ্টিয়া জেলা। পশ্চিমে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার শেষ প্রান্ত গফুগ্রাম থেকে ১৫ কিঃমিঃ দুরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐতিহাসিক কুঠিবাড়ী কুষ্টিয়ার শিলাইদহ। জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রাচীন নদী হড়াই, চত্রা ও চন্দনা মৃত প্রায়। এক সময়ের প্রমত্তা হড়াই নদী এখন অনেকটা খালে পরিণত হয়েছে। সরকারি রেকর্ডেও এটি নদী হিসেবে নয়, স্থান পেয়েছে সমতল ভূমি হিসেবে!
এ জেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রধান নদী পদ্মা রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া হতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা এলাকা পর্যন্ত বিতৃত্ব। শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় সৃষ্ট ভাঙ্গণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে রাজবাড়ীর নদীর তীরবর্তি জনপদ। রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, পদ্মার নদীর রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাধ নির্মাণের জন্য ৩৪২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সাড়ে ৪ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাধ নির্মাণ ও ৪.৭ কিলোমিটার পদ্মার চর ড্রেজিং করা হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নৌ যোগাযোগের মাধ্যেমে ব্যবসা বৃদ্ধি করে আসছে এ জেলার জনসাধারণ। সুনামগঞ্জ থেকে কয়লা বহর করে দৌলতদিয়া ঘাটে পৌছাতে ৫/৭ দিন লাগলেও নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় তার ২০/২৫ দিন সময় লেগে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এতে করে পড়ছে আর্থিক সঙ্কটে।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক জানা গেছে, এ সকল এলাকায় স্থানীয় প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজসহ চর ড্রেজিং এর কাজের জন্য ইতি মধ্যে কারিগরি দল গঠিত হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ডিপিপি প্রস্তুতির কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পগুলো অনুমোদন সাপেক্ষে কাজগুলো বাস্তবায়ন করা হলে অবশ্যই জন সাধারণ নদী ভাঙন হতে রক্ষা পাবে। গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরী ঘাট ও এর আশে পাশের এলাকা দীর্ঘদিন যাবৎ পদ্মা নদীর ভাঙণ কবলিত এলাকা। এ প্রেক্ষিতে গত ১৬/১৭ অর্থ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক জিও ব্যাগ ড্রাম্পিং করে অস্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজের মাধ্যমে ঘাটগুলো সচল রাখা হয়। ইতোমধ্যে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া- মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরী ঘাটগুলো স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১টি প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে হাইড্রোলিজিকাল স্ট্যাডি চলিতেছে। যার ফলাফলের উপর ১টি ডিপিপি প্রকল্প তৈরি করে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাধ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। দৌলতদিয়া ফেরী ঘাটসহ প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার এলাকায় এবং পাটুরিয়া প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় এ স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
selina ২৪ এপ্রিল, ২০১৮, ৮:৩৭ এএম says : 0
No water flow in rivers virtually no Bangladesh .
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন