সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

সিটি নির্বাচন : ইসি ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

১৫ মার্চ গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সে মতে প্রতিদ্ব›দ্বী দল ও প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা, ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়া, ভোট চাওয়া, দলীয় কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রচারে অংশ নেয়া ইত্যাদি ঠিকঠাক মতোই চলছিল। হঠাতই ঘটে ছন্দপতন। হাইকোর্টের একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাচনের নয় দিন আগে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ করে ৬ মে রিটটি দায়ের করা হলে আদালত সেইদিনই তিন মাসের জন্যে নির্বাচন স্থগিত করে দেন। রিট আবেদনটি দায়ের করেন সাভার আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম আজহারুল ইসলাম।
প্রচার-প্রচারনার শেষ পর্যায়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ বজ্রাঘাততুল্য। শুধু গাজীপুরবাসীই নয়, গোটা দেশের মানুষ এতে বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষও দেখা দেয়। এর আগে এভাবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও আদালতের আদেশে তিন মাসের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। আদালতে অনুরূপ রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাচনের কার্যক্রম থেমে যায়। আদালতের দেয়া সেই তিন মাসের স্থগিতাদেশের সময়সীমা ইতোমধ্যেই পার হয়ে গেছে। এরপর কি হয়েছে, কেউ জানেনা। অনেকের ধারণা, সহসা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। একটি নিষ্পত্তিকৃত বিষয় নিয়ে এবিএম আজহারুল ইসলাম দ্বিতীয়বার রিট আবেদন করতে গেলেন কেন, এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই। ২০১৫ সালে তারই দায়ের করা রিটের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার তদন্ত ও গণশুনানি করে ৪ মার্চ, ২০১৮ প্রজ্ঞাপন জারি করে, যাতে উল্লেখ করা হয়, তিনি যে ছয়টি মৌজাকে সাভারের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করেছেন, তা ১৯৭৮ সালে জয়দেবপুরের প্রশাসনিক এলাকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর আর কখনোই পরিবর্তন হয়নি। গত সিটি কর্পোরেশনসহ সব নির্বাচনে ওই ছয় মৌজার ভোটাররা গাজীপুরের অধিবাসী হিসাবেই ভোট দিয়েছে। এহেন প্রজ্ঞাপনের পর ওই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলার কিংবা রিট আবেদন করার কোনো সুযোগই ছিল না। তা সত্তে¡ও তিনি আবেদনটি করেন এবং সে আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত স্থগিতাদেশ ও রুল জারি করেন।
নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়, রিটের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কিছুই জানা ছিলনা। রিটের শুনানির দিন নির্বাচন কমিশনের কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে ইতোমধ্যে কিছু তিক্ত আলোচনাও হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সংবিধানের ১২৫ ধারার গ অনুচ্ছেদের কথা উঠে এসেছে। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনকে যুক্তিসঙ্গত নোটিশ না দিয়ে এবং তাদের যুক্তি না শুনে আদালত তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, এমন কোনো নির্বাচনের ব্যাপারে অন্তবর্তীকালীন বা অন্য কোনো আদেশ অথবা নির্দেশনা জারি করবেন না। বলা নিষ্প্রয়োজন, সংবিধানের ওই বিধানটি গ্রাহ্যতা পায়নি। নির্বাচন কমিশনকে ‘জানানো’ কিংবা নির্বাচন কমিশনের ‘জানা’র বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে। এটা যে নিত্যান্তই কাঁকতালীয় তা মানতে নারাজ পর্যবেক্ষক-বিশ্লেষকদের অনেকেই। তারা মনে করেন, এর পেছনে ক্ষমতাসীন মহলের ‘হাত’ থাকতে পারে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থগিত হওয়ার প্রেক্ষিতেও একই ধরনের কথা উঠেছিল। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তাদের মেয়র প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছিল। অনানুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। এতে কিছুটা হলেও প্রতীয়মান হয়েছিল, নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মেয়রপ্রার্থী খুব একটা সুবিধা করতে পারবেন না। এটা ক্ষমতাসীন মহলের জন্য ছিল উদ্বেগজনক ও অস্বস্তিকর। জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের ফলাফল নেতিবাচক হলে তার প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে, এরূপ ধারণা অমূলক ছিলনা। এহেন প্রেক্ষাপটেই ভাটারা এলাকার যে দুটি ইউনিয়নকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেই দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন। রিটের পক্ষে যুক্তি দেখানো হয় যে, সংযুক্ত এলাকাগুলোর ভোটার তালিকা চূড়ান্ত না করে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। হাইকোর্ট শুনানি শেষে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়ায় ক্ষমতাসীন মহলে এক ধরনের সন্তোষ ও স্বস্তির ভাব লক্ষ্য করা যায়।
এইভাবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা ও ভোটারদের আবেগ-অনুরাগ মূল্যায়ণ করে অনেকের মধ্যেই এ প্রত্যয় দৃঢ়মূল হয়, এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ। এতে ক্ষমতাসীন মহলে স্বভাবতই বিচলনের সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায়, নির্বাচনের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ এই বিচলনের আপাতত অবসান ঘটায়, তবে এ নিয়ে রাজনৈতিক। নাগরিক ও নির্বাচনপর্যবেক্ষক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। বিএনপির মেয়র প্রার্থী স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দেন। তার দেখাদেখি আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীও অনুরূপ ঘোষণা দেন। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনও আপিলের ঘোষণা প্রদান করে। যথারীতি তিন তরফেই আপিল আবেদন দায়ের করা হয়। গত ১০ মে আবেদন তিনটির ওপর শুনানি শেষে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে ২৮ জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশনা দেন। এখন নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব, নির্দেশিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা।
পরপর দুটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশের পেছনে আইনগত দিক যা বা যতটুকুই থাকুক, জনমত কিন্তু ক্ষমতাসীন মহলের বিপক্ষেই গেছেন। এইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন আপিল করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি, বরং ‘যা হয়েছে, ভালোই হয়েছে’, এমনভাব দেখিয়েছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পরও নির্বাচন কমিশন একই মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে। প্রথমে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ও পরে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আপিল করার ঘোষণা না দিলে নির্বাচন কমিশন আপিলের তাকিদ অনুভব করতো কিনা তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ আছে। এটা কোনো স্বাধীন ও সক্ষম নির্বাচন কমিশনের পরিচয় বহন করেনা। একথা সকলের স্বীকার করেন, গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের জন্য ছিল এসিড টেস্ট। এ দুই সিটিতে সুষ্ঠু, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারলে নির্বাচন কমিশনের ভাবমর্যাদা, গ্রহণযোগ্যতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পেতো। তার প্রতি জনগণের আস্থা বাড়তো, যা জাতীয় নির্বাচনের জন্য তা একটি প্লাস পয়েন্ট হিসাবে পরিগণিত হতো। নির্বাচন কমিশন এই সুযোগটি কাজে লাগতে যথোচিত আন্তরিকতার পরিচয় দিতে পারেনি। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আগের নির্ধারিত তারিখে করা যে সম্ভব নয়, সেকথা জানিয়ে দিতে নির্বাচন কমিশনের দেরী হয়নি। অথচ কবে নাগাদ নির্বাচনটি হবে তার ঘোষণা এত জলদি দিতে পারেনি।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ঘোষিত-নির্ধারিত ১৫ মে’তেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সঙ্গতকারণেই সকলের দৃষ্টি এখন খুলনার দিকে। এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হবে কি না তা নিয়ে অবশ্য সন্দেহ-সংশয়ের কমতি নেই। নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার শেষ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা-উত্তাপ লক্ষ্য করা গেছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের এক পেশে আচরণ ও ভূমিকাও কারো চোখ এড়িয়ে যায়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, দলটির ‘শতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এবং তিন শতাধিক নেতাকর্মীর বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছে, হুমকি-ধামকি দিয়েছে, যাকে পেয়েছে তাকেই পিটিয়েছে, ভাংচুর করেছে। নেতাকর্মীদের অনেকেই ঘরছাড়া, তারা গ্রেফতার আতংকে রয়েছেন। বিএনপির অভিযোগ, বিএনপিকে মাঠ থেকে উঠিয়ে দিতে পুলিশ লাগাতার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ অবশ্য এ দাবি অস্বীকার করেছে। বলেছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিএনপির স্থানীয় নেতারা বলছেন, মামলা নেই, এমন কর্মীদেরও ঢালাওভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে,‘অপরাধীদের’ ধরার ব্যাপারে এতটা তাকিদ ও দায়িত্ববোধ তো এর আগে পুলিশের মধ্যে দেখা যায়নি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর অপরাধী ধরার নামে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও উড়োতাড়া করার লক্ষ্য যে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে তাদের দূরে রাখা, তা কি ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে? খুলনায় এখন প্রধান আলোচ্য বিষয় পুলিশের অভিযান। রাতদিন লাগাতার গ্রেফতার অভিযান চলছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই পুলিশী অভিযানের ব্যাপারে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মাঠে নেই, মাঠে আছে পুলিশ। তারাই আমাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা বাহুল্য, ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থীর সুবিধায় পুলিশের এই ভূমিকা অগ্রহণযোগ্য। শুধু খুলনায় নয়, গাজীপুরেও পুলিশের একই ভূমিকা লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, যেদিন এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থগিত হয় সেদিন পুলিশ বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের বাসভবন ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখে। একই সঙ্গে তার বাসার আশপাশে অভিযান চালিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ ১৩ জনকে আটক করে। ছয় ঘণ্টা পর আবদুল্লাহ আল নোমানকে ছেড়ে দেয়া হলেও বাকীদের আটকে রাখা হয়। পরদিন ওই ১২জন সহ ১০৩ জনের নাম উল্লেখ করে টঙ্গী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে পুলিশ। এজহারে অজ্ঞাতনামা আরো একশ থেকে দেড়শজনকে আসামী করা হয়। মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে একটি লেগুনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের অভিযোগ আনা হয়। পরে একটি পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়: ‘যে লেগুনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের অভিযোগে পুলিশ গাজীপুর বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়েছে সেটি অক্ষত অবস্থায় পড়ে রয়েছে টঙ্গী থানার প্রাঙ্গনে। আর মামলার আসামীদের অধিকাংশই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিএনপি মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের নিকটাত্মীয় ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বশীল ব্যক্তি।’ পত্রিকাটিতে কথিত লেগুনার একটি ছবিও প্রকাশিত হয়। এভাবে মিথ্যা অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে মামলা সাজানো এবং সেই মামলার গ্রেফতার ও হয়রানি করার আসল উদ্দেশ্য কি, সেটা বুঝতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, কোনো দলের নয়। দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে তার চাকরির শর্তাবলী মেনে চলা ও সর্বক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা অত্যাবশ্যক। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে পুলিশ কেন্দ্র করে যা করছে তা ‘বাড়াবাড়ি’ বললেও যথেষ্ট বলা হয় না।
বিএনপির তরফে পুলিশের এহেন ভূমিকা ও কার্যকলাপের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছে। দুই সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত কয়েকজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার বা সরিয়ে দেয়ার দাবিও জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সে ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ আওয়ামী লীগের অভিযোগের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বিন্দুমাত্র বিলম্ব করেনি। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অভিযোগ, তিনি বিএনপির পক্ষে কাজ করছেন। কোনো এক সময় তিনি বিএনপির ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলেন, একথাও জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম নির্বাচন কমিশনে এ অভিযোগ জানানোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচন কমিশন একজন জয়েন্ট সেক্রেটারীকে খুলনায় নিয়োগ দিয়েছে রিটার্নিং অফিসারের কাজে ‘সহযোগিতার’ জন্য। আইনবিধিতে যাই থাক, এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন একটি বিরল নজির স্থাপন করেছে। অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠা ও নিশ্চিত করা প্রধান পূর্বশর্ত। নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে তার সক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারেনি। খুলনায় ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থায়ই নির্বাচন কমিশন নেয়নি। আবার বিএনপির মেয়র প্রার্থীর কর্মীসমর্থকদের প্রতি হুমকি-হামলা, পুলিশের গ্রেফতার অভিযান ও ভীতি প্রদর্শনের বিরুদ্ধেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ক্ষমতাসীন দল যে কোনো মূল্যে এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জিততে চায়। এছাড়া বিকল্প নেই, এমন কথা দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনেকেই জাহির করেছেন। দেখা যাচ্ছে, পুলিশ এবং স্বয়ং নির্বাচন কমিশন সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এ ধরনের অসম মাঠে কিভাবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে, জনগণের রায়ের যথাযথ প্রতিফলন ঘটতে পারে, সেটাই প্রশ্ন।
খুলনার ভোটাররা শংকা ও আতংকে আছে। তারা ঠিক মতো ভোট দিতে যেতে পারবে কিনা, গিয়ে ছহিসালামতে ঘরে ফিরে আসতে পারবে কিনা সেটা যেমন একটা প্রশ্ন তেমনি নির্বাচনের ফলাফল তাদের পছন্দের অনুকূলে নিশ্চিত হবে কিনা সেটাও কম বড় প্রশ্ন নয়। এই আশংকা থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার সেনা মোতায়েনের দাবি জানানো হলেও নির্বাচন কমিশন তা গ্রাহ্যে আনেনি। ক্ষমতাসীন দল অবশ্য বরাবরই সেনা মোতায়েনের বিরোধিতা করে আসছে। এ ব্যাপারে পর্যবেক্ষকদের সবাই একমত, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠিত না হয় তাহলে নির্বাচন কমিশনের প্রতি গণআস্থা যতটুকু অবশিষ্ট আছে, তাও শেষ হয়ে যাবে। এই নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। দেখা যাক, এ পরীক্ষায় নির্বাচন কমিশন সফলভাবে উত্তীর্ণ হতে পারে কিনা। আমরা চাই, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ, শান্তিপূর্ণ এবং ব্যাপক ভোটারের অংশগ্রহণমূলক হোক।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন