শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খোশ আমদেদ মাহে রমজান সংখ্যা

রমজান প্রসঙ্গে অনুভূতি বিনিময়

মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পাঠকদের সাথে রমজানের পবিত্রতা ও শুভেচ্ছা বিনিময় করছি। পাঠকদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা নিবেদন ও শুভেচ্ছা এবং প্রার্থনা এই মর্মে যে, তারা যেন রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করেন এবং এর উপকারিতা গ্রহণ করতে পারেন। একই সাথে আমিও আবেদন করছি, সম্মানিত পাঠকগণের প্রতি, তারাও যেন এই কলাম লেখকের জন্য মন থেকে দোয়া করেন, যেন রমজানের উপকারিতা আমিও পাই। আমি মনে করি, পবিত্র রমজান মাস মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট থেকে সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্য একটি বিশেষ উপহার। এটি এক প্রকার ওষুধ যা রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থাপত্র। এটি একটি পারাপারের জন্য ছাড়পত্র। আমি যে তিনটি শব্দ ব্যবহার করেছি তথাÑ উপহার, রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থাপত্র এবং পারাপারের ছাড়পত্র। সেই তিনটি শব্দের প্রেক্ষাপট ও ব্যাখ্যা আমি আলাদা আলাদা উপস্থাপন করছি। তবে প্রথমেই সিয়াম পালন সম্পর্কে কিছু অভিমত বা অনুভ‚তি উপস্থাপন করছি। যারা রোজা রাখেন তাদের অন্তত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগে পড়েন বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ রোজাদাররা, যারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকেন এবং অন্যান্য প্রকাশ্য নিষেধাজ্ঞাসমূহ প্রকাশ্যে মেনে চলেন। দ্বিতীয় ভাগে পড়েন নেককার এবং সালেহিন বান্দারা। সালেহিন শব্দের অনুবাদ সৎকর্মশীল বা সৎকর্মপরায়ণ। এই দ্বিতীয় ভাগের রোজাদারদের জন্য রোজার স্তর আরো বিশদ এবং উচ্চতর। প্রথম পদক্ষেপ হলো শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর সংযম বা রোজা পালন। চোখের রোজা হলো ওইসব দৃশ্য দেখা থেকে বিরত থাকা, যেগুলো দেখা হারাম বা নিষেধ। কানের রোজা হলো ওই সব শব্দ বা কথা শোনা থেকে বিরত থাকা যেগুলো শোনা হারাম বা নিষেধ। চোখের স্বভাব হলো সবকিছুর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা, কানের স্বভাব হলো যা কিছু শোনা যায় তাই শোনা। চোখ বা কান উভয়ের তৃপ্তি মন্দ জিনিস শোনায় বা দেখায়, যদিওবা ওই তৃপ্তি সাময়িক; কিন্তু আত্মা বা নফস বা চিন্তাশক্তি দ্বারা চোখের ও কানের কর্মকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হাতের কাজ হলো ধরা, সাময়িক তৃপ্তির জন্য হাত অনেক সময় অনেক কিছু ধরতে চায়, যেটা ধরা হারাম বা নিষেধ। অথবা হাতের তৃপ্তি নয়, বৃহত্তর অপরাধ সংঘটনে হাত নিজের ক্ষুদ্র ভ‚মিকাটি পালন করে। যথাÑ মানুষ হত্যা, চুরি ইত্যাদি। হাতের রোজা হলো নিয়ন্ত্রিত থাকা যেন নিষিদ্ধ কাজ না করে। হাতকে নিয়ন্ত্রণ করবে নফস বা আত্মা বা চিন্তাশক্তি। মুখের কাজ কথা বলা এবং স্বাদ গ্রহণ করা বা খাওয়া। এই মুখ দিয়ে নিষিদ্ধ বা হারাম বস্তু খাওয়া যায় বা মুখের যে অংশকে ঠোঁট বলে সেটা দিয়ে নিষিদ্ধ বা হারাম বস্তু স্পর্শ করা যায়। মুখ দিয়ে সুন্দর কথাও বলা যায়, অশ্লীল কথাও বলা যায়। মুখের কথা দিয়ে মানুষের মনে এমন কষ্ট দেয়া যায়, যেটা শারীরিক আঘাত পাওয়া থেকে বেশি। যিনি মনে আঘাত পান; তিনি হয়তো মুখে প্রকাশ করেন না এবং সে জন্যই আঘাতকারী বুঝতে পারে না নিজেই নিজের কত বড় ক্ষতি করল। এখানেও মুখের জবানকে সংযত করার প্রয়োজনীয়তা অবিসংবাদিত। সংসার জীবনে অনেকেই অনেককে কটু কথা বলে, ঝগড়া করার জন্য উত্তপ্ত বাক্য ব্যবহার করে, অন্যের বিরুদ্ধে অসত্য প্রচারণা (গিবত) চালায়। রমজান মাসে করণীয় অশ্লীল জবান বন্ধ রাখা এবং ভালো কথা বলা; অন্য কর্তৃক করা গিতবের প্রেক্ষাপটে নিজে গিবত না করা বা অন্যের উত্তপ্ত বাক্যের বিনিময়ে নিজে সংযত থাকা। কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ঝগড়া লাগার আশঙ্কা দেখা দিলে সেটা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য ওই স্থান ত্যাগ করা শুধু এটুকু বলে যে, ‘আমি রোজা আছি।’ মুখের অগ্রভাগ অর্থাৎ ঠোঁট দিয়ে নিষিদ্ধ বা হারাম স্থান স্পর্শ না করাও হচ্ছে পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মুখ ও ঠোঁটকে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব নফস বা আত্মা বা চিন্তাশক্তির। চোখ, কান, হাত ও মুখ যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে রোজা সহজতর ও অধিকতর ফলপ্রসূ হয়। ফজরের নামাজের আগে রোজার নিয়ত করার সময় মনে মনে নিয়ত করা যায় যে, চোখ, কান, হাত ও মুখকে নিয়ন্ত্রণে রাখব এবং এর জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে। অন্য সময়ের তুলনায় রমজানের সময় একজন ঈমানদার ব্যক্তির চিন্তা ও নফসের ওপর শয়তানের পক্ষ থেকে অধিকতর আক্রমণ আসে। এসব শত্রæর উদাহরণ হচ্ছেÑ অবৈধভাবে টাকা প্রাপ্তির হাতছানি, নারী-পুরুষের অবৈধ সম্পর্কে আকর্ষণ বা এমনকি অযাচিত প্রশংসা। এই আক্রমণ প্রতিহত করতে হলে দুটি কৌশল অবলম্বন করা যায়। একটি হচ্ছে আত্মরক্ষামূলক, অর্থাৎ রমজানকে একটি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করত আত্মরক্ষা করা। অপরটি হচ্ছে আক্রমণাত্মক, যেসব লোভ-লালসা, আনন্দ, সৌন্দর্য আত্মাকে আকর্ষণ করে, সেগুলোর দিকে বন্দুকের গুলির মতো বা কামানের গোলার মতো বিতৃষ্ণা অনীহা অপছন্দ ইত্যাদিকে ছুড়ে মারা। এই দুটি কৌশল একই সঙ্গেও ব্যবহার করা যায়। 

মহান আল্লাহ তায়ালা যখন প্রথম মানব-মানবীকে সৃষ্টি করলেন, তখন সেই প্রথম মানব এবং মানবী যথাক্রমে (হজরত আদম (আ:) এবং তার সম্মানিত জীবন সঙ্গিনী বিবি হাওয়া (আ:) তারা উভয়ে বেহেশতে থাকার জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্র্র্তী সময়ে শয়তান তাদেরকে এমন কুমন্ত্রণা দেয়; যার ফলে তারা অতি শীঘ্রই আল্লাহ প্রদত্ত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফেলেছিলেন। এই অমান্য করার ফলে তাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। পবিত্র কুরআনের বর্ণনা থেকে যতটুকু ব্যাখ্যা পাওয়া যায় সেখানে কেবল একটি প্রেক্ষাপট আলোচিত হয়েছে। তা হলোÑ মহান আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সৃষ্টি করার পর এই মর্মে আদেশ করেছিলেন; তারা যেন একটি সুনির্দিষ্ট গাছের ফল ভক্ষণ না করে এমনকি ওই গাছটির নিকটবর্তীও যেন না হয়। কিন্তু শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিয়েছিল এই বলে যে, এই গাছটির ফল ভক্ষণ না করার চেয়ে ভক্ষণ করাই উত্তম এবং এই গাছটির ফল ভক্ষণ করলে তোমরা বেহেশতে চিরজীবী হবে, সর্বোপরী তোমরা বেহেশতে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবে। এতে তোমাদের কোনো ক্ষতিসাধন হবে না, তাই তোমরা নিশ্চিন্তে এই গাছের ফল খেতে পারো। অতএব তারা গাছটির ফল খেয়েছিলেন। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যা হওয়ার তাই হলো। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তাদের উভয়ের মাঝে মানবীয় স্পর্শকাতরতা প্রকাশ পেতে শুরু করল। ঠিক সেই সময় মহান আল্লাহ তায়ালা সিদ্ধান্ত নিলেন তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিতে।
যতদূর জেনেছি এবং পড়েছি তা থেকে বলা যায়, হজরত আদম (আ:) এবং মা বিবি হাওয়া (আ:) দুনিয়াতে এসে

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন