(পূর্বে প্রকাশিতের পর) সৌর্ন্দয অবলম্বন করা অবশই বৈধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন এবং আপনার পালনকর্তার নিয়ামতের কথা প্রকাশ করুন। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, হে বনী আদম, তোমরা সাজসজ্জা করে নাও প্রত্যেক নামাজের সময়, আর খাও পান করো অপব্যয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপব্যয়ীদের পছন্দ করেন না। নবী স. বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের মধ্যে তার দেওয়া নিয়ামতের প্রভাব দেখতে ভালবাসেন। হাদীসটির সনদ হাসান সহীহ্”। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষনীয় যে, সৌর্ন্দয যেন সীমা ছাড়িয়ে না যায়। যেন অপচয়ের পর্যায়ে না পড়ে। দুনিয়া বিমুখতা :এটি একটি প্রসংশনীয় গুন। খুব কম মানুষই এ গুনে গুনাম্বিত। এই গুনে গুনাম্বিত ছিলেন নবী রাসূলগণ আ.,অতঃপর পূর্বেকার অনেক আলীম আর পরবর্তী যুগের খুব কম সংখ্যক লোক। এই কাজে অবশ্যই নিজের চাহিদ্ ত্যাগ করতে হয়, নিজের উপরে অপরকে প্রধান্য দিতে হয়। আর অর্থনীতির ক্ষেত্রে তা অনেক কল্যাণকর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদীনায় বসবাস করেছিল এবং ঈমাণ এনেছিল তারা মুহাজিরদের ভালবাসে, মুহাজিরদের যা দেওয়া হয়েছে তজ্জন্যে তারা অন্তরে ঈর্ষা পোষন করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্থ হলে ও তাদের অগ্রাধিকার দান করে। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত তারাই সফলকাম। কৃপণতা করা হারাম। কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহর শত্রু এমনকি তার নিজেরও শত্রু এবং প্রত্যেক ঐ জিনিষের শত্রু যা মানুষের উপকার করে। এভাবে যে সে নিজের প্রয়োজনও পূরণ করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যারা কৃপণতা করছে তারা নিজেদেরই প্রতি কৃপণতা করছে। নবী স. বলেন, তোমরা কৃপণতা থেকে দূরে থাকো: কারণ তোমাদের পূববর্তীদের অনেকেই কৃপণতার জন্য ধ্বংস হয়েছে। (শয়তান) তাদেরকে কৃপণতার আদেশ দিতো আর তারা কৃপণতা করতো, সে তাদেরকে আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার আদেশ দিলে তারা তা ছিন্ন করতো, এবং সে তাদেরকে পাপাচারে লিপ্ত হতে নির্দেশ দিলে তারা তাতে লিপ্ত হতো।
জীবনযাপনের সকল ক্ষেত্রেই অপচয় ও অপব্যয় করা হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এবং অপব্যয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপব্যয়ীদের পছন্দ করেন না। অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। নবী স. বলেন, আমার উন্মাতের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি, যারা বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার খায় এবং বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরিধান করে আর লম্বা লম্বা কথা বলে বেড়ায়। এ জন্য সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে ইসলাম সু নিদিষ্ট নিয়ম বেঁধে দিয়েছে। যেমন: বিলাসবহুল জীবন যাপন না করা। অর্থাৎ দুনিয়ার চাকচিক্য ও বিলাসিতাতে ঘা ভাসিয়ে না দেয়া। এ ধরনের বিলসিতাকে ইসলাম সমর্থন করে না বরং নিন্দা করে। আর বিলাসিতার কারণেই আল্লাহর আযাব-গজব নেমে আসে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন অবস্থাপন্ন লোকের উদ্ধুদ্ধ করি অতঃপর তারা পাপাচারে মেতে উঠে। তখন সে জনগোষ্টির ওপর আদেশ অবধারিত হয়ে যায়। পরিশেষে আমি তা সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস করে দেই। অপচয় না করা আবার সম্পদ ব্যয় করার ক্ষেত্রে নিবুদ্ধিতার পরিচয় না দেয়া; সম্পদ ব্যয় করার ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা; হারাম ও ক্ষতিকর পণ্যদ্রব্যাদি বর্জন করা। আল্লাহ তা‘আলা ভাল জিনিষকে বৈধ করেছেন আর ক্ষতিকর ও নোংরা জিনিষকে হারাম করেছেন। আর ইসলামী আইনের একটি মৌলনীতি হল ক্ষতি করবে না ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। এ মূলনীতিটি রাসূলুল্লাহ ্স.- এর হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত।
অহংকার কর না। যেহেতু ইসলাম ততটুকুই বৈধতা দিয়েছে যতটুকুর মধ্যে ব্যক্তি সমাজ সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। অহংকার প্রদর্শনের জন্য সম্পদ ব্যয়কে ইসলাম অনুমোদন করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে ঈমানদার গণ, তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মত, যে নিজের ধন সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব এ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মত, যার উপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে সম্পূর্ণ পরিস্কার করে দিল। তারা ঐ বস্তুর কোন সওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ কাফের স¤প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। নবী স. বলেন, যে ব্যক্তি অহংকার বশত তার কাপড়কে ঝুলিয়ে টেনে টেনে পড়ে, (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির প্রতি (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না। ক্ষুধার মাধ্যমে মানবীয় চাহিদাকে বশিভূত করা। মানুষ যখন পানাহারে পরিতৃপ্ত হয় তার মধ্যে কু প্রবৃদ্ধি জেগে উঠে। আর ক্ষুধার্ত থাকলে শান্ত থাকে। আলীম ও ফকীহগণের কাছ থেকে ক্ষুধার বিভিন্ন উপকার বর্ণিত হয়েছে। যেমন : অন্তর পরিস্কার থাকে ও অন্তর্দৃষ্টি খুলে যায়; অহমীকা খারাবী দূরীভূত হয়; আল্লাহর পক্ষ থেকে বিপদ আপদের কথা স্মরণ হয়; কুপ্রবৃত্তিকে দমিয়ে রাখা যায়; ইবাদতে অধ্যবসায় বাড়ে; দান সদকা করতে মন চায়। ভালভাবে অর্থনীতি বুঝা যায়। অর্থাৎ আয়ের উৎস ও ব্যয়ের ও ক্ষেত্র সম্পর্কে ভালভাবে ধারণা রাখা। এক্ষেত্রে আমরা নবী জীবনের কিছু দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে পারি। যা নবী স. তার সাহাবীদের জন্য পেশ করে ছিলেন।
মন্তব্য করুন