বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সঙ্কটে সাতক্ষীরা বিসিক শিল্পনগরী

সাতক্ষীরা থেকে আবদুল ওয়াজেদ কচি | প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

১৯৮৬ সালে প্রায় ১৫ একর জমি নিয়ে শহরের অদূরে বিনেরপোতায় প্রতিষ্ঠিত হয় সাতক্ষীরা বিসিক শিল্প নগরী। প্রতিষ্ঠার ৩২ বছর পেরুলেও এখনো তেমন কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই শিল্প নগরীতে।
জলাবদ্ধতা, ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনা, যাতায়াতের অসুবিধা, বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবসহ নানামুখী সংকটে জর্জরিত সাতক্ষীরার এই শিল্প নগরী। নেই নির্দিষ্ট সীমানা প্রাচীর। এমন অবস্থায় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন শিল্প উদ্যোক্তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিসিকের প্রাচীর না থাকায় গরু-ছাগল যত্র-তত্র ঘোরাফেরা করছে। নির্দিষ্ট পানি নিষ্কাশনের অভাবে রাস্তার উপরেই পানি জমে আছে। সংস্কারের অভাবে অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে কাদার সৃষ্টি হয়েছে রাস্তার উপর। চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো। বিসিকের নির্দিষ্ট পানির প্লান্ট থাকা সত্তেও তা ব্যবহারের উপযোগী নয়।
মাছের রেণু প্রক্রিয়াজাত ও বেকারীরমত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে বিসিকে। এসব প্রতিষ্ঠানের অব্যবহৃত বর্জ্য পানি বদ্ধ ড্রেনের কারণে রাস্তায় জমে থাকছে। বিসিক অঞ্চলে নির্দিষ্ট সীমানা প্রাচীর না থাকায় বিভিন্ন সময়ে চুরির ঘটনাও ঘটেছে। কিছু কিছু প্লটে কারখানার নাম-ঠিকানা সম্বলিত প্লাকার্ড পুঁতে রাখলেও নেই কোন কার্যক্রম। এমনকি বিসিকের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে একটি দ্বিতল ভগ্ন ভবনে। মাঝে মাঝে পলেস্তার খসিয়ে নতুন করে পলেস্তার করা হয় ভবনটিতে।
শিল্প উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর বিরুপ মনোভাবের কারণে বিসিকের উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বিসিক সাতক্ষীরার সূত্র জানা যায়, ৯৬টি প্লটের পাঁচটি বাদে সবকটিই বরাদ্দ দেয়া শেষ হয়েছে। এর ভেতরে তিনটি আইনি জটিলতা ও দুটি বিসিকের প্রধান কার্যালয় হতে সংরক্ষিত রয়েছে। ৩০টি শিল্প ইউনিটের বিপরীতে ৯১টি প্লট বরাদ্দ হলেও নানা জটিলতার কারণে বেশ কিছু কারখানা উৎপাদনের কার্যক্রম এখনো শুরু করতে পারেনি।
বিসিকে উৎপাদনরত বিসমিল্লাহ হ্যাচারির সত্তাধিকারী সিরাজুল ইসলাম জানান, বিসিকের পানিতে মাছের উৎপাদন ভালো হয় না। বিসিকের পানির প্লানটি বছরের অধিকাংশ সময়ই নষ্ট থাকে। হ্যাচারির সামনের রাস্তাটিরও বেহাল অবস্থা। যাতায়াতের ব্যবস্থা খুবই নাজুক। হ্যাচারির পানি বের হওয়ার মত ড্রেনের ব্যবস্থাও নেই এখানে। প্রতিনিয়ত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না।
চায়না বাংলা বেকারী ও প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রির জেনারেল ম্যানেজার বিধান চন্দ্র দাশ জানান, কারখানার সামনের রাস্তা নিজ খরচে করে নেওয়া হয়েছে। বিসিক শুধুমাত্র পিচ দিয়েছে রাস্তার উপর। বিসিকের প্লান্টের পানিতে আয়রণ থাকায় ব্যবহার উপযোগী নয়। তাই নিজ খরচে ডিপ বসানো হয়েছে। গুণগত মানসম্পন্ন খাদ্য তৈরী করতে গেলে এই প্লান্টের পানির উপর ভরসা করা চলে না বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, অব্যবহৃত বর্জ্যগুলো নিজ দায়িত্বে পুড়িয়ে ফেলতে হয়। সেগুলো ফেলার মত জায়গাও নেই। পানি নিষ্কাশনের পথ তো নেই-ই। বর্ষা মৌসুমে গোটা বিসিক শিল্প নগরী জলাবদ্ধ থাকে।
বরফ মিলের শ্রমিক মিলন হোসেন জানান, বর্ষা চলে রাস্তায় পানি জমে যায়। কেউ নেই এগুলো দেখার। প্রতিবছরই এরকমভাবে কেটে যাচ্ছে। সামনের ড্রেনগুলোতে পানি জমে আছে দিনের পর দিন। তাতে সৃষ্টি হয়েছে নানা রোগজীবাণু। বর্ষার পানি রাস্তায় উঠে গেলে চলাচল করা দায় হয়ে পড়ে।
বিসিকের প্লান্ট অপারেটর আব্দুর রশিদ জানান, প্লান্ট মাঝে মাঝেই নষ্ট হয়ে যায়। বিভাগীয় অফিসে রিপেয়ারিং অর্ডার পাঠানো হলে তা আসতে বেশ কিছু সময় লাগে। সেজন্য সঠিকভাবে পানি সরবরাহ করা যায় না।
বিসিকের একটি কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি বলেন, এখানে যে বিসিক শিল্প নগরী, তা বোঝা যায় না। যেন গরু ছাগলের চারণভূমি। সীমানা প্রাচীর না থাকার কারণে বাইরের গরু-ছাগল ভেতরে আসে। এগুলো দেখাশুনা করার কেউ নেই।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষকে বারবার সমস্যার কথা জানালেও এখন সব গা সওয়া গেছে। ব্যবসা করতে হলে নিজ খরচেই সব করতে হবে- এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বিসিকে। কোন ধরণের সুযোগ-সুবিধার বালাই নেই।
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি নুরুল ইসলাম রনি বলেন, বিসিকের সহযোগী মনোভাবের অভাবে উন্নয়নের কাজ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। কোন পরামর্শ দিলে তারা তা মেনে না নিয়ে বরং এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ নিলেও সুযোগ-সুবিধার কোন বালাই নেই বিসিকে। সর্বত্র শুধু সমস্যা আর সমস্যা। আমাদের কথা এখন আর বিসিকে মূল্যায়নই হয় না।
এ ব্যাপারে বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন বলেন, বিসিকে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সমাধানের। বাজেটের ঘাটতি, জনবল সংকটের কারণে এসব সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এছাড়া, একনেকে একটি বাজেটের প্রস্তাবনা করা হয়েছে। বাজেট পাস হলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে বলেও তিনি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন