দুই ঈদে যে ইবাদতগুলো আদায় করা হয়, তন্মধ্যে দুই ঈদের নামায ও ঈদুল আযহায় কুরবানী তো সকলেরই জানা ও আবশ্যিক আমল। এর বাইরেও দুই ঈদে কিছু আমল রয়েছে, যেগুলো সুন্নত বা মুস্তাহাব পর্যায়ের এবং আমলগুলো বেশ সহজও বটে। কিন্তু আত্মবিস¥ৃত ও নির্বিচার পরানুকরণ প্রিয় মুসলিম উম্মাহর সিংহভাগই সেই মুস্তাহাব আমলগুলো জানে না। অনেকেই আবার জেনেও সেই দিকে ভ্রক্ষেপ করে না। কেবল খোঁজে বেড়ায় ইসলাম ও মুসলমানের দুশমন পশ্চিমাদের লাইফ স্টাইল। তো সেই আমলগুলো কি? আমলগুলো হলো- ১. ভোরে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠা। এ কথার অর্থ হচ্ছে, ফজরের নামাযের পূর্বে অন্য দিনের তুলনায় আগে উঠবে। এই অর্থ নয় যে, অন্য দিন সকাল ১০টায় ঘুম থেকে উঠতো, ঈদের দিন একটু আগে সকাল ৮ টায় উঠল। ২. মিসওয়াক করা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই মহান সুন্নতটি আজ উম্মাহর চরম অবহেলার শিকার। মুসলমানের সন্তানদের দৈনিক দু বেলা ব্রাশ করতে কোন কষ্ট বা অসুবিধা না হলেও প্রাণের নবীর প্রিয় সুন্নত মিসওয়াক করতে বড় কষ্ঠ হয়। মোবাইল, মানি ব্যাগ আর হাবিজাবি দিয়ে পকেট ঠাসা থাকলেও অসুবিধা হয় না; অসুবিধা হয় কেবল মিসওয়াকের মতো ছোট্ট বস্তুটি পকেটে রাখতে। অথচ এই মিসওয়াকের ফযীলত অভাবনীয়, উপকারিতা অতুলনীয় আর গুরুত্ব ঈর্ষণীয়। সাহাবী হুযায়ফা রা.বলেন, “মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে যখনই ঘুম থেকে উঠতেন, মিসওয়াক করতনে।” (বুখারী, হাদীস: ২৪৫; মুসলিম, হাদীস: ২৫৫) সাহাবী আবু হুরায়রার বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর হবে, এই আশংকা না হতো, তাহলে প্রতি নামাযের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।” (মুসলিম, হাদীস: ২৫৩; তিরমিযী, হাদীস: ২৩) অন্য বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মিসওয়াক মুখ পরিষ্কার করে ও আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ হয়। ( সুনানে নাসাঈ, হাদীস: ৫) আম¥াজান আয়েশা রা. এর বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মিসওয়াক করে দুই রাকআত নামায আদায় করা মিসওয়াক ব্যতিত সত্তর রাকআত নামায হতেও উত্তম।(মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ২/২৩৬) বুখারী শরীফের এক বর্ণনায় আছে, “আম্মাজান অয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার পালার দিনে আমার ঘরে আমার হলকুম ও সীনার মধ্যস্থলে ওফাত লাভ করেন। (আমাদের নিয়ম ছিল) তিনি অসুস্থ হলে আমাদের কেউ সূরা ইখলাছ, নাস, ফালাক পড়ে তার শরীর মুছে দিতেন। নিয়ম অনুযায়ী আমি তাঁর কাছে গেলাম সূরা ইখলাছ, নাস, ফালাক পড়ে তাঁর শরীর মুছে দিতে। তখন তিনি তাঁর মাথা আকাশের দিকে উঠিয়ে বললেন, “র্ফিরাফীকিল আ‘লা, র্ফিরাফীকিল আ‘লা” ( উর্ধ্বলোকের বন্ধুর সাথে মিলিত হতে চাই, উর্ধ্বলোকের বন্ধুর সাথে মিলিত হতে চাই অর্থাৎ আল্লাহর সাথে মিলিত হতে চাই) এ সময় (আমার ভাই) আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর আগমন করলেন। তার হতে ছিল তাজা ডালের একটি মিসওয়াক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে দিকে তাকালেন। আমি বুঝতে পারলাম যে, তাঁর মিসওয়াকটির প্রয়োজন। আর্থাৎ তিনি মিসওয়াক করতে চাচ্ছেন। তাই আমি আব্দুর রহমনের হাত থেকে মিসওয়াকটি নিয়ে সেটির মাথা চিবিয়ে পরিস্কার করে নবীজীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাতে দিলাম। (চিবানোর কারণ হলো, তখন মিসওয়াক চিবানোর মতো শক্তি তাঁর গায়ে ছিলনা। যা বুখারীর অন্য বর্ণনায় আছে।) তখন তিনি এর দ¦ারা আগের মতো ( সুস্থ অস্থার মতো) সুন্দর করে মিসওয়াক করলেন। (বুখারীর অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি এত সুন্দর করে মিসওয়াক করলেন যে, ইতিপূর্বে আর কখনও তাকে এত সুন্দর করে মিসওয়াক করতে দেখিনি। বুখারী, হাদীস: ৪৪৩৮] তারপর তিনি মিসওয়াকটি আমাকে দিলেন। এ অবস্থায় তাঁর হাত হেলে পড়ল বা তাঁর হাত থেকে মিসওয়াকটি পড়ে গেল। এরপর আয়েশা রা. বলেন, আল্লাহ তাআলা আমার থুথুকে নবীজীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থুথুর সাথে মিলিয়ে দিলেন তাঁর দুনিয়ার জীবনের শেষ ও পরকালের প্রথম দিনে। (বুখারী, হাদীস: ৪৪৫১) পাঠক! একটু ভেবে দেখুন, যে মিসওয়াকের কথা আমদের আত্মার স্পন্দন (তাঁর আমার মা-বাবা উৎর্সগ হোক) মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের শেষ বেলায় শেষ নিঃস্বাশ ত্যাগের মুহুর্তেও ভুলেননি; বরং পরম যতেœ তা করলেন। সেই মিসওয়াকের সুন্নত আজ গাফেল উম্মতে মুহাম্মাদী কি ভাবে বেমালুম ভুলে বসেছে? ফাতওয়া শামীতে আছে, মিসওয়াকের সত্তরেরও বেশী উপকারিতা রয়েছে। সর্বনি¤œ উপকারটি হলো মুখের অশুচি ও দুর্গন্ধ দুর হয় আর সর্বোচ্চ হলো মৃত্যুর সময় কালীমা পাঠ নসীব হয় (শামী: ১/১১৫) ৩. খুব ভালভাবে গোসল করা। ৪. যথা সাধ্য উত্তম পোশাক পরিধান করা। নতুন হওয়া জরুরী নয়। এ ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি পরিলক্ষিত হয়। ব্যাপারটি এ পর্যায়ে গড়িয়েছে যে, ধনি-গরীব, সচ্ছল-অসচ্ছল সকলেরই নতুন পোশাক লাগবেই লাগবে। না হলে মন খারাপ করে ঈদের নামাযে যায় না, বাইরে বের হয় না। অনেক ক্ষেত্রে এ নিয়ে ঝগড়া-ঝাটি ও মারামারির ঘটনা ঘটে থাকে। এগুলো কোনমতেই কাম্য নয় এবং ভারসাম্যের ধর্ম ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। বরং যে কাপড়গুলো আছে, সেগুলোর মধ্যে যেটা ভাল সেটাই পরিধান করবে। বড় আক্ষেপ লাগে তখন, যখন মিডিয়ায় খবর বের হয়, ঈদে দাদা আর বাবুদের আবিস্কৃত পাখি আর কিরণমালা জামা না পেয়ে মুসলিম মেয়েরা আত্মহত্যা করে! ৫. শরীআতের নির্দেশ মুতামবিক সাজ-সজ্জা করা। এ কথার অর্থ হলো, ঈদের দিন সুন্নত তরীকায় চুল, গোঁফ কেটে এক মুষ্টির বেশী শ্মশ্রæ মন্ডিত মুখে সুন্নতী লেবাস পরিধান করবে আর মেয়েরা অন্দর মহলে বৈধতার ভিতরে থেকে সাজবে। এটাই কল্যাণের ধর্ম ইসলামের নির্দেশ। কিন্তু চরম হতাশার ব্যাপার হলো, আজকের মুসলিম সমাজের অবস্থা সর্ম্পণ উল্টো। ঈদের আগে ক্লিন শেভ করে চুলগুলো বিখ্যাত কোন নায়কের স্টাইলে কেটে ঈদের দিন পরিধান করবে বিজাতীয় কোন পোশাক আর পাঞ্জাবী-পাজামা পরলে পাজামা থাকবে অবশ্যই টাখনুর নিচে। আর নারীরা অর্ধনগ্ন আবস্থায় রাস্তা-পর্ক ইত্যাদিতে ঘুরতে বের হবে। অথচ এগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে ভয়াবহ ও খতরনাক অপরাধ। শেভ সর্ম্পকে সাহাবী ইবনে উমরের বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা করে দাড়ি লম্বা কর আর মোচ ছোট কর।” নাফে রহ: বলেন, ইবনে উমরের অভ্যাস ছিল, তিনি হজ¦ বা উমরা করার সময় দাড়ির এক মুষ্টির বর্ধিত অংশ কেটে ফেলতেন। (বুখারী, হাদীস: ৫৮৯২: মুসলিম, হাদীস: ২৫৯) সাহাবী আবু হুরায়রার বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা মোচ ছোট ও দাড়ি লম্বা করে অগ্নিপুজকদের বিরোধীতা কর।” (মুসলিম, হাদীস: ২৬০; বুখারী, হাদীস: ৫৮৯৩) এ জাতীয় হাদীস সমুহের আলোকে চারও মাজহাবের ইমামগণ এ ব্যাপারে ঐক্যমত হয়েছেন যে, অন্তত এক মুষ্টি দাড়ি রাখা ওয়াজিব। শেভ করা বা উপড়ানো কিংবা ছেঁটে এক মুঠের চেয়ে কম করা হারাম এবং এক মুঠের বর্ধিত অংশ কেটে ফেলা জায়িয। উলামাগণ এ কথাও লিখেছেন যে, এক মুঠের কম দড়ি ওয়ালা ব্যাক্তি সর্বদায় কবীরা গুনায় লিপ্ত থাকে। খেতে বসলেও কবীরা গুনাহ হয়, বাথরুমে গেলেও কবীরা গুনাহ হয়, ঘুমে থাকলেও কবীরা গুনাহ হয়। এক কথায়, সর্বাবস্থায় তার কবীরা গুনাহ হতে থাকে। এ ছাড়াও বর্ণিত হাদীস দুটিতে দাড়ি লম্বা আর মোচ খাুটু করে মুশরিক ও অগ্নিপুজকদের বিরোধিতার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর আমরা মোচ লম্বা আর দড়ি কেটে কিংবা দাড়ি শেভ করে তাদের বিরোধীতার পরিবর্তে সাদৃশ্যতা গ্রহণ করছি। অথচ এই সাদৃশ্যতার ব্যাপারেও এসেছে কঠোর হুশিয়ারী। সাহাবী ইবনে উমরের বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্যতা গ্রহণ করবে, কিয়ামাত দিবসে সে তাদের দলভুক্ত হবে। (আবু দাউদ; হদীস: ৪০৩১) টাখনুর নিচে পাজামা বা কাপড় পরিধানের ব্যাপারে দয়াল নবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ হচ্ছে, যে ব্যক্তি টাখুনর নিচে পাজামা, লঙ্গি ইত্যাদি পরিধান করবে, সে জাহান্নামে যাবে।” (বুখারী, হাদীস: ৫৭৮৭; নাসাঈ, হাদীস:২০৭; তারগিব, হাদীস: ৩১২২) নারীদের বেপর্দা ও অর্ধনগ্ন অবস্থায় চলাফেরার ব্যাপারেও দয়াল নবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যবানে উৎকীর্ণ হয়েছে কঠোর বাণী। সাহাবী আবু হুরায়রার বাচনিক মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, দুই শ্রেণীর জাহান্নামী এমন আছে যাদেরকে আমি দেখি নাই। ১. এমন জাতি যাদের সাথে থাকবে গরুর লেজের মতো চাবুক। এই চাবুক দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার করবে। ২. সে সব নারী যারা কাপড় পরেও নগ্ন। তারা পর পুরুষকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও পর পুরষের দিকে আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা (চুল) বুখতী উটের কুঁজের মতো হেলে থাকবে। তারা কখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকেও পাওয়া যাবে।” (মুসলিম, হাদীস: ২১২৮) যে সকল মুসলিম রমণী বিজাতীয় স্টাইল ও ফ্যাশনে অভ্যস্থ তাদের উপরের হাদীসটি ভালভাবে স্মরণ রাখা উচিৎ। ৬. সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৭. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে কোন মিষ্টদ্রব্য খেয়ে যাওয়া। সেমাই বা পায়েশ জরুরী নয়। যে কোন ধরণের মিষ্টান্ন খেলেই সুন্নাত আদায় হবে। আর ঈদুল আযহায় কুরবানীর আগে কোন কিছু না খাওয়া সুন্নত। ৮. সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। ৯. সদকায়ে ফিতর না দিয়ে থাকলে ঈদগাহে যাওয়ার আগে তা আদায় করা। ১০. ঈদগাহে যেয়ে ঈদের নামায আদায় করা। শরীআত সম্মত কোন ওযর ছাড়া এমনিতেই মসজিদে ঈদের জামাত পড়া মাকরুহ। ১১. পেয়ে হেটে ঈদগাহে যওয়া। ১২. ঈদগাহে যাওয়ার সময় ঈদুল ফিতরে আস্তে আস্তে আর ঈদুল আযহায় জোরে জোরে এই তাকবীরটি পড়া। “আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ”। ১৩. এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া, অন্য রাস্তা দিয়ে আসা। (রদ্দুল মুহতার: ২/১৬৮-১৭০, ঈদের নামায অধ্যায় ; বাদায়েউস সানায়ে: ১/২৭৯, ঈদের নামায অধ্যায়)। বড় আক্ষেপের ব্যাপার হচ্ছে, আজকের মুসলিম সমাজের চিত্র সর্ম্পূণ উল্টো। ঈদের দিনে উপরোক্ত আমলগুলো তো পালিত হয়ইনা; পড়ুন্ত ঈদ উপলক্ষ্যে পুরো দেশ পরিণত পাপের রাজ্যে। বিভিন্ন মহল থেকে আয়োজন করা হয় পাপের বিভিন্ন উপলক্ষ্যের। ঈদ সামনে রেখে ভাল মানের নতুন সিনেমা মুক্তি দেয়া সাধারণ রেওয়াজে পরিণত হয়েছে, টিভি চ্যানেলগুলো তো ঈদ উপলক্ষ্যে মাসব্যাপি বিভিন্ন নাটক, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ নিয়ে তারা প্রতিযোগিতায়ও নামে যে, কার চেয়ে কে ভাল মানের অনুষ্ঠানের পরিবেশন করতে পারে। অথচ ইসলামে সিনেমা, নাটক, গান-বাজনা ইত্যাদি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম। মহাগ্রন্থআল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- “এক শ্রেণীর লোক এমন রয়েছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে ‘লাহওয়াল হাদীস’ তথা অবান্তর কথাবার্তা ক্রয় করে অন্ধভাবে এবং তা নিয়ে করে ঠাট্টা-বিদ্রুপ। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।” (সূরা লুকমান: ৬) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, ইবনে আব্বাস, জাবের রা. ইমাম বুখারী, বায়হাকী, ইবনে জারীর প্রমুখ আয়াতে উল্লেখিত ‘লাহওয়াল হাদীস’ এর তাফসীর করেছেন গান-বাজনা করা। অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও তাফসীরবিদগণ এর তাফসীর করতে গিয়ে বলেছেন- গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র, অনর্থক গল্প, উপন্যাস ও কিস্যা-কাহিনীসহ যে সকল বিষয় মানুষকে আল্লাহর ইবাদত ও স্মরণ থেকে গাফেল করে দেয় সে সবই ‘লাহওয়াল হাদীস’ এর অন্তর্ভুক্ত। (মাআরিফুল কুরআন: ৭/৪) মহানবী সা. বলেন,“আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। তাদের সামনে গায়িকারা গান গাবে বিভিন্ন ধরণের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে। আলাহ তাআলা এদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিবেন আর কতকের আকৃতি বিকৃত করে বানর ও শুকরে পরিণত করে দিবেন।” (তাবরানী-কাবীব: ৩৪১৯; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী হাদীস: ৪৭৫৯; ইবনে মাজা: ২/ ৪০২০; ইবনে হিব্বান, হাদীস: ৬৭৫৮)। এছাড়াও বহু প্রমাণ ও নির্ভরযোগ্য হাদীস রয়েছে যাতে গান-বাদ্য হারাম ও নাজায়িয বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে রয়েছে বিশেষ সতর্কবাণী ও কঠিন শাস্তির ঘোষণা। এক শ্রেণীর মানষ এমন আছে যারা ঈদের চাঁদ দেখার সাথে সাথেই মেতে উঠবে বিকট আওয়াজে ফটকা ফোটানো আর আতশবাজীতে। যা বিভিন্ন কারণে শরীআতে নিষিদ্ধ ও হারাম। এ ছাড়াও ঈদের রাতে ইবাদতের পরিবর্তে কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকে সারারাত। এরপর ঘুমাতে যায় শেষরাতে। ফলে ঘুম থেকে উঠে ঈদের জামাতের পূর্ব মুহুর্তে। অনন্তর কোনোমতে গোসল সেরে চোখে রাজ্যের ঘুম নিয়ে উপস্থিত হয় ঈদগাহে। তারপর দায়সারাভাবে নামায শেষ করে মেতে উঠে বিভিন্ন ধরণের গুনাহের কাজে। সিনেমা হলে কিংবা টিভি চ্যানেলে সিনেমা, নাটক, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান দেখা এবং জুয়া খেলায় লিপ্ত হওয়া তো ঈদের দিনের অপরিহার্য রুটিনে পরিণত হয়েছে। সিনেমা, নাটকের ভয়াবহতা তো একটু আগেই আলোচনা হলো। আর জুয়াও তো কুরআন-হাদীসের দৃষ্টিতে ভয়াবহ অপরাধ। আল্লাহ তাআলা পবিত্র করআনে ইরশাদ করেন,‘হে ঈমানদানগণ! নিশ্চয় মদ, জুয়া, পুজার বেদী ও ভগ্য নির্ণয়ক শর ঘৃণ্য বস্তু ও শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর। এতে তোমরা (ইহকাল-পরকালে) সফল হবে। নিশ্চয় শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের মাঝে শত্রæতা ও বিদ্ধেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর স¥রণ ও নামাযে বাধা দিতে। অতএব তোমরা কি এ কাজগুলো পরিহার করবে? (সূরা মায়েদা: ৯০-৯১) সাহাবী ইবনে আব্বাস রা. এর বর্ণনায় এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম ইরশাদ করেন,“আল্লাহ তাআলা মদ, জুয়া, তবলা ও সারেঙ্গী হারাম করেছেন। (আবু দাউদ, হাদীস: ৩৬৮৫) অন্য এক হাদীসে আছে- আব্দুর রহমান রহ: বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুয়া খেলে অতপর নামায পড়তে দাড়ায় তার দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির মতো যে বমি বা শুকরের রক্ত দিয়ে অযু করে। (আল মুজামুল কাবীর, তাবারানী, হাদীস: ৭৪৮) আল্লাহ তাআলা আমাদের ঈদ উদযাপনকে সুন্নতে নববীর আলোয় আলোকিত করুন। আমীন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন