মোহাম্মদ গোলাম হোসেন
শেকড় সন্ধানীদের উৎসে ফেরার তাগিদ দিনে দিনে যখন প্রচ- থেকে প্রচ-তর তখন আর যাই কোথা? ভাবলাম, উৎসমূলে যদি ফিরে যেতেই হয় পথঘাট চিনে একটু খোঁজখবর নিয়েই যাই না কেন হাজার বছর আগে ঘটনাটা তাহলে কী ঘটেছিল?
আদম সন্তানের প্রতি আল-কোরআনের ১ম নির্দেশ ‘পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন...।’ এই নির্দেশ শোনার পর ইউরোপ বই খুলে বসে পড়ল, আর মুসলিম বিশ্ব খোলা বইটাও বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লাম যেন। চারশ বছর কেটে গেল ঘুম তো আর ভাঙেই না। সুতরাং জ্ঞানের জায়গাটা দখল করে নিল অজ্ঞতা আর অন্ধ অনুকরণ। ফল কেবলই বিভ্রান্তি, আর বিভ্রান্তি। প্রকাশ্য দিবালোকে দড়িকে সাপ ভেবে চিৎকার দেয় না কেউ, অমাবস্যার ঘোর আঁধার রজনীতেও না। বিভ্রান্তিটা বাধে আলো-আঁধারের জ্যোৎ¯œা রাতে। তাই এহেন অবস্থা হতে মুক্তি পেতে ধর্ম তথা ইসলাম ও বিজ্ঞান সম্পর্কে সম্যক ধারণা আজ অন্ধকারে আলোর মতোই জরুরি।
উৎসের সন্ধানে পাগলপারা অতি বুদ্ধিমানদের দাবি অনুযায়ী পেঁচা-হনুমান, মূর্তি, গোমল-মূত্র, টিকি-পৈতা, ধূতি, বালা-সিঁদুর এমনকি মূর্তি পূজাও যদি বাঙালি সংস্কৃতি হয় (এর বাইরে মুসলিম বা ইসলামী সংস্কৃতি বলে কিছু নেই, যা আছে তা পাকিস্তানি সংস্কৃতি, অতএব মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী।) তা হলে হিন্দু সংস্কৃতির স্বরূপটা কী? না কি হিন্দু সংস্কৃতি বলে কিছু নেই, অথবা হিন্দুরা এখন আর হিন্দু নেই, সবে বাঙালি হয়ে গেছেন? সন্ধানীদের এই দাবিতে তারা যদি অকপট সত্যবাদী হবেন তা হলে এই প্রশ্ন কী অসঙ্গত বিবেচিত হবে যে, তামিল-গুজরাট এমনকি সুদূর আন্দামান বা জাভা দ্বীপে বসবাসকারী একজন হিন্দু ভাষাগতভাবে বাঙালি না হয়েও এক ও অভিন্ন ‘বাঙালি’ সংস্কৃতি ও চেতনার ধারক-বাহক হতে পারল কেমন করে? জানি জবাবটা তাদের কাছে নেই। সুতরাং উৎসের সন্ধান করতে গিয়ে তথ্য-উপাত্ত যা পাওয়া গেল তাতে জানা যায় দুটি প্রধান উৎস থেকে ভারতবর্ষে মুসলমানদের উৎপত্তি। ধর্মান্তরিত ও বহিরাগত। এই দেশীয় আদি দাদা-দাদিরা বৈদিক ধর্মে বিশ্বাসী আর্য ছিলেন। মূলত তারাও ছিলেন বহিরাগত। দ্রাবিড়দের পরাজিত ও বিতাড়িত করে তারা দেশটা দখল করে নেন। ইসলামী বিপ্লবের পথ ধরে আরব ও তার পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে ধর্ম প্রচারক ফকির-দরবেশ আর বণিক ও বিজেতা হিসেবে ভারতবর্ষে লক্ষ লক্ষ মুসলমানের আগমন ঘটে। মুসলিম বিজেতারা আলেকজা-ার বা চেঙ্গিস খাঁর মতো লুটপাট করে ফিরে না গিয়ে এখানেই স্থায়ীভাবে রয়ে গেলেন। একই অবস্থা ঘটল ধর্মপ্রচারক আর বণিকদের বেলায়ও। স্থায়ী বসতি স্থাপন করে দেশটাকে তারা নিজের করে নিলেন। এদের মাধ্যমে ইসলামের সুমহান শিক্ষা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, উন্নত কৃষ্টি কালচারের সাথে জাত-পাত ও কুসংস্কারকে আচ্ছন্ন আদি বৈদিক সমাজের পরিচয় ঘটে। বহিরাগতদের উন্নত, সুশৃঙ্খল মানবতাবাদী জীবন দর্শন সঙ্গতভাবেই হিন্দুদের চিন্তার জগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেয়। দলে দলে মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে মর্যাদাপূর্ণ এক নতুন জীবনের স্বাদ পেতে থাকল, যা এর আগে এই মানুষগুলো কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। সঙ্গতভাবেই বৈবাহকি সম্পর্কের ভিত্তিতে এই দেশীয় ও বহিরাগত মুসলমানদের সমন্বয় আর একটি রক্তধারা রচিত হলো। বলা চলে, এ দেশীয় মুসলমানরা এদেরই উত্তর পুরুষ। মুসলমানদের দৈহিক গড়ন ও চেহারার বৈচিত্র্যই এর প্রমাণ। সুতরাং নিশ্চিত করেই বলা চলে আমাদের উৎস মূলের দাদা-দাদিরা আর্য ও অনার্য আরব উভয়ই। এই বেলা প্রথমত আর্য তথা বৈদিক দাদা-দাদিদের কিঞ্চিত খোঁজখবর নেয়া যাক।
বৈদিক দাদা-দাদিরা প্রাকৃতিক ও অতিপ্রাকৃতিক বিভিন্ন কাল্পনিক বস্তুর পূজা করতেন। এ ছাড়া সাপ, বানর, হনুমান, পাহাড়, নদী, আগুন-পানি ইত্যাদি অগণিত জড়-অজড় বস্তু ও প্রাণীকে দেবতা জ্ঞানে উপাসনা করতেন। বলা হয়, তাদের দেব-দেবীর সংখ্যা ছিল ৩৩ কোটি যা তখনকার দিনে ভারতের মোট জনসংখ্যারও কয়েকগুণ বেশি। গরু আর হনুমানকে তারা মানুষের চেয়েও অধিক মর্যাদা দিয়ে দেবতার আসনে বসিয়েছিলেন। গোবরকে সকল পবিত্রতার উৎস, এমনকি পাপ-মোচন ও রোগ নিরাময়ের কারণ বলে বিশ্বাস করতেন। তারা লিঙ্গ ও যোনী পূজা করতেন। নপুংশক ও বন্ধ্যা দাদা-দাদিরা সন্তান লাভের আশায় প্রস্তর নির্মিত বিশেষ লিঙ্গে দুধ-সিঁদুর দিয়ে পূজা করতেন। সন্তান জন্মদানে অক্ষম দাদারা অন্য পুরুষের কাছে দাদিদের সোপর্দ করতেন, এতে সন্তান জন্মালে তাকে ‘ক্ষেত্রজ সন্তান’ বলা হতো। ৫/১০ জন দাদা মিলেও এক নারীকে বিয়ের প্রচলন ছিল। পৌরাণিক যুগের দাদিদের উলঙ্গ হয়ে দলবেঁধে প্রকাশ্যে ¯œান আর দাদাদের বস্ত্র হরণের মতো অপকর্ম দোষণীয় ছিল না, বরং একে ‘লীলাখেলা’ মনে করা হতো। আমাদের উৎস মূলের এই দাদা-দাদিরা জীবজন্তু, ভূত-প্রেতের সাথেও বিয়ে বা যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতেন। পতিতাবৃত্তিকে তারা দোষণীয় মনে করতেন না, এমনকি কোনো কোনো পতিতাকে দেবীর মর্যাদায় পূজাও দিতেন। তাদের অনেকে উলঙ্গ থাকতেন, একে উচ্চ মার্গে পৌঁছার আলামত মনে করা হতো। নেংটি বা গাছের ছাল-বাকল পরাও রেওয়াজ ছিল। নরবলি, সতীদাহ, গঙ্গায় সন্তান বিসর্জনসহ নানা ধরনের অমানবিক কর্ম ধর্মের নামেই প্রচলিত ছিল। এমনকি বেশ্যার ঘরের মাটি ছাড়া পূজার ম-প তৈরিও হতো না। তবে আদি যুগে আর্য তত্ত্বাবধানে রচিত কোনো কোনো ধর্মগ্রন্থে দার্শনিক তত্ত্ব, উপদেশবাণী এমনকি আল্লাহ ও রাসুল (সা.) সম্পর্কে বহু অভ্রান্ত, ভবিষ্যদ্বাণীর সমাহারও দেখতে পাওয়া যায়। যেমন-অল্লোউপনিষদে আছে-
‘হোতার মিন্দ্রো হোতার মিন্দ্র মহা সুরিন্দ্রাঃ
অল্লোজ্যেষ্ঠং শ্রেষ্ঠং পরমং পূর্ণং ব্রাক্ষাণ অল্লাম।
আল্লোহ রসুল মহাম্মদর কং বরস্য আল্লো অল্লাম।
আদল্লা বুকমে ককম আল্লাবুক নিখাতকম।’
ভাবার্থ : আল্লাহ্ সকল গুণের অধিকারী। তিনি পূর্ণ ও সর্বজ্ঞানী, মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল। আল্লাহ আলোকময়, অক্ষয়, এক চির পরিপূর্ণ এবং স্বয়ম্ভু। (অনেকটা সূরা এখলাসের ভাবানুবাদ যেন)।
ভবিষ্য পূরাণে আছে-
‘এত স্মিন্নন্তরে ম্লেচ্ছ আচার্যেন সমন্বিতঃ
মহামদ ইতি খ্যাতঃ শিষ্য শাখা সমন্বিতঃ
নৃপশ্চৈব মহাদেবং মরুস্থল নিবাসিনম,
গঙ্গা জলৈশ্চ-সংস্নাপ্য পঞ্চগব্য সমন্বিত:
চন্দনাদিভিরভ্যর্চ তুষ্টাব মনসা হরম।
নমস্তে গিরিজানাথ মুরুস্থল নিবাসিনে,
ত্রিপুরা সুরনাশায় বহু মায়া প্রবর্তনে।’
ভাবার্থ : “ঠিক সেই সময় ‘মহামদ’ নামে এক ব্যক্তি যার বাস মরুস্থলে আপন শিষ্যগণসহ আবির্ভূত হবেন। হে মরুর প্রভূ! হে জগৎ গুরু! তোমার প্রতি আমার নমস্কার! তুমি জগতের সকল কলুষ নাশ করার উপায় জান, তোমাকে নমস্কার। হে পবিত্র পুরুষ আমি তোমার দাস! আমাকে তোমার চরণ তলে স্থান দাও।’ এ ছাড়া কলির অবতার (শেষ যুগের নবী) এর মায়ের নাম হবে সুমিত্রা, পিতার নাম হবে বিষ্ণুযশা এবং তিনি ১০ হাজার সঙ্গী সমেত বিজয়ীর বেশে আগমন করবেন এমন ভবিষ্যৎ বাণীও দেখা যায়। উল্লেখ্য, সুমিত্রা শব্দের আরবী প্রতিশব্দ ‘আমিনা’ বিষ্ণুযশার আরবী প্রতিশব্দ- ‘আবদুল্লা’। আর মক্কা বিজয়ে তার সাথে দশ হাজার সাহাবি ছিলেন এ তো ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, চার হাজার বছর আগে রচিত বেদ-পুরাণে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন সম্পর্কে এমন ভবিষ্যদ্বাণী সম্ভব হলো কেমন করে? জবাবটা আছে পবিত্র কোরআনেই। আল্লাহর ঘোষণা, এমন কোনো জনপদ নেই যেখানে আল্লাহ কোনো নবী-রাসুল বা সর্তককারী প্রেরণ করেননি। আর সকল নবী-রাসুলগণই শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনী বার্তা দিয়ে গেছেন। শুধু বেদ-পুরাণ-উপনিষদই নয়, বাইবেল, তাওরাত অন্যান্য বহু ধর্মগ্রন্থে কমবেশি এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তাহলে আমাদেরকে যে আদি উৎস বা শেকড়ের দিকে ডাকা হচ্ছে সেই আদি উৎস আসলে ইসলামই, আর সৌভাগ্যক্রমে হাজার বছর আগে সেই হারানো ইসলামের পুনর্বার সন্ধান পেয়েছিলেন আমাদের দাদা-দাদিরা। এর আগে সনাতন যুগের দাদা-দাদিরা যুগ সন্ধিক্ষণে পড়ে বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলেন, ব্যাপারটা আসলে এমনই। আরবীয়দের এ দেশে আগমনের হাজার বছর আগেও মানুষকে ভারতীয়রা বলতেন ‘আদমী’। এখনও বাঙালি হিন্দু ছাড়া অন্যরা আদমি বলেন। কোরআন পাকের ঘোষণা সকল মানুষের আদি উৎস এক, কারো সৃষ্টি মাথা থেকে আর কারো সৃষ্টি পা থেকে নয়, এক জোড়া মানুষ থেকেই সকল মানুষয়ের উৎপত্তি। আদম (আ.)-এর আবির্ভাব হয়েছিল শ্রীলংকার যে পাহাড়ে সেটির নাম ‘আদম হিল’, এই নাম আরবরা রাখেনি। পাক প্রণালীতে অবস্থিত (ভারত ও শ্রীলংকার মাঝে) ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপগুলোর নাম ‘আদম সেতু’। ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে বোঝতে অসুবিধা হয় না যে, আদম সিংহল থেকে ভারত হয়ে ৩ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে মক্কার আরাফাত ময়দানে উপনীত হন। আর হাওয়া জিদ্দা থেকে (যার অর্থ দাদি) দুইশ মাইল পাড়ি দিয়ে কাকতালীয়ভাবেই যেন আরাফাত ময়দানে এসে আদমের দেখা পান। এই মক্কা নগরীতেই এক আল্লাহর উপাসনার জন্য তাওহিদের আর এক আপসহীন সৈনিক হযরত ইব্রাহিম (আ.) কাবা মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। কালের আবর্তে মাত্র এক হাজার বছরের ব্যবধানে এই মসজিদেই ৩৬০টি মূর্তির স্থান করে দিয়েছিলেন তার উম্মতরাই। আর এগুলো প্রতিষ্ঠিত ছিল মক্কা বিজয়ের পূর্ব দিনও। এই যে বাংলাদেশ মাত্র পঞ্চাশ বছর আগেও জাদুঘর আর মন্দির ছাড়া কোথাও কোনো মূর্তি দেখা যেত না, কোনো মুসলমানের মূর্তিতে ফুল-চন্দন দেয়ার বিষয়টি ছিল ধারণারও অতীত। প্রিয়জনের মূর্তি তো দূরে থাকুক ছবি রাখাও পছন্দ করতেন না। মাত্র ৫০ বছরের ব্যবধানে যদি আমাদের এতটা অধঃপতন ঘটে, তাহলে হাজার হাজার বছরের ব্যবধানে মক্কার মতো ভারতের আদি পৌরাণিক যুগের মুসলমানগণও যদি তাওহিদের শিক্ষা ভুলে মূর্তি পূজা শুরু করে দিয়ে থাকেন তাতে অবাক হওয়ার কী আছে? মুসা (আ.)-এর মাত্র দিন কয়েকের অনুপস্থিতিতে তাঁর উম্মতরা গরুর পূজা শুরু করে দেয়ার উল্লেখ তো আছে কোরআন শরিফেই। অতঃপর উৎস বা শেকড় সন্ধানীদের আর কোনো তথ্য প্রমাণ খোঁজার প্রয়োজন আছে বলে কী মনে হয়?
সত্য যুগের দাদা-দাদিদের ডিএনএ টেস্টের পর এখন পশ্চিম দেশীয় তথা আরবীয় দাদা-দাদিদের পোস্টমর্টেমের দিকে নজর দেয়া যাক। ইসলাম প্রতিষ্ঠার আগে আরবীয় দাদা-দাদিরা যে সময়টা অতিবাহিত করছিলেন ইতিহাসে সেই সময়টা ‘আইয়্যামে জাহেলিয়াত’ বা অন্ধকার যুগ নামে খ্যাত। নামকরণই সেই সময়ের সঠিক অবস্থা অনুধাবনের জন্য যথেষ্ট। প্রকৃত অর্থে সনাতন বা পৌরাণিক যুগের দাদা-দাদি আর আইয়্যামে জাহেলিয়াতের দাদা-দাদিদের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্ব যাই থাকুক না কেন ধর্ম-কর্ম, কৃষ্টি-কালচার, নীতি-নৈতিকতা ও চেতনার দিক থেকে সম্পর্ক ছিল অনেকটা জমজ ভাইয়ের মতো। মূর্তি গাছ-পাথর ছাড়াও প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তির পূজা করতেন উভয়েই। তবে সেই যুগে লিঙ্গ বা যোনী পূজার প্রচলন ছিল আরবে এমনটি জানা যায় না। তাওহিদের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত কাবাগৃহে তারা ৩৬০টি দেব-দেবীর মূর্তি স্থাপন করেছিলেন। উলঙ্গ হয়ে গোসল করার মতো পরিবেশ মরুভূমিতে না থাকলে কি আসে যায়? অন্ধকার যুগের দাদা-দাদিরা দেবতাদের তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে বিবস্ত্র হয়ে কা’বা তাওয়াফ করতেন। সতীদাহ, চড়ক পূজা, গঙ্গায় শিশু বিষর্জনের মতো জঘন্য ও অমানবিক ধর্মাচার তাদের মধ্যে না থাকলেও তারা কন্যা সন্তানদের জীবিত কবর দিতেন। (অবশ্য আজকের ভারতে গড়-পড়তা প্রতি বছর ৪০ লক্ষাধিক শিশু কন্যাকে মাতৃগর্ভেই হত্যা করা হয়)
মদ, জুয়া, নারীঘটিত অনাচারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিলেন তারা পৌরাণিক যুগের দাদা-দাদিদের মতোই। কথায় কথায় রক্তপাত লুটতরাজ সামাজিকভাবে অনুমোদিত ছিল। অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কার চর্চায়ও তারা ছিলেন পৌরাণিক আর্য দাদা-দাদিদের প্রায় কাছাকাছি। তবে এক দাদির একাধিক স্বামী গ্রহণ এবং ‘ক্ষেত্রজ সন্তান’ নেয়ার কালচার তাদের মধ্যে ছিল এমনটি জানা যায় না। বৈদিক যুগের মতো ভূত-পেতিœ ও জীবজন্তুর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন বা বিবাহের কোনো রীতি জাহেল দাদা-দাদিদের মধ্যেও ছিল এমন কোনো দলিল পাওয়া যায় না। গেলও তাদের যৌন জীবন সুশৃঙ্খল ছিল না আদৌ। সত্যযুগের মতো জাহেলি যুগের আরবরাও শিল্প, সাহিত্য, দর্শন ও জ্যোতির্বিদ্যায় যথেষ্ট উন্নত ছিলেন। তাদের শিল্প-সাহিত্য, নারী, মদ আর নিজ নিজ বংশ গৌরব প্রচারেই প্রধানত সীমাবদ্ধ ছিল। আরবীয় দাদাদের মধ্যে ছোঁয়া-ছুই, জাত-পাত নিয়ে বাড়াবাড়ি না থাকলেও কৌলিন্যের বড়াই খুব মারাত্মক ছিল। তবে তাওহিদের দাওয়াত প্রতিরোধে মরণপণ প্রচেষ্টায় কারো কমতি ছিল না মোটেও। তারা নিপুণ যোদ্ধা, অতিথিপরায়ণ ও প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সদা জীবনপন ছিলেন। জাহেলি যুগের আরবদের কিছু মহৎ গুণও ছিল। (চলবে)
য় লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন