শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বিনিয়োগের সর্বোত্তম সুযোগ

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১১:৪৪ এএম, ১৯ জুলাই, ২০১৮

রাজধানীর গুলশানে কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি রাস্তায় ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে মালিক। রাজস্ব বিভাগের দাবি এ গাড়ির দাম ৫ কোটি। ৫ কোটি আর ২ কোটি যা-ই হোক গাড়িটি বেশ দামি। এর আগে সিলেটে এ ধরনের আরো ঘটনা দেখা গেছে। ঢাকায়ও নানা সময় নগদ টাকা ও গাড়ি রাজপথে ফেলে রেখে মালিকরা গা- ঢাকা দিয়েছে, এমন ঘটনা বহু দেখা গেছে। এসব মূলত সরকারি সংস্থার তদন্ত ও গোয়েন্দাগিরির ফলে ভীত হয়ে মালিকেরা করে থাকে। যারা তাদের অর্থ সম্পদ ও বাড়ি-গাড়ির কর দেয় না কিংবা সম্পদের হিসাবে এসবের ঘোষণা দেয়নি তদন্তের সময় অসুবিধায় পড়বে ভেবে তারা এসব নিদাবি করে রাস্তায় ফেলে চলে যায়। ভয় করে যদি কর দিতে হয় তাহলে কোটি কোটি টাকা দিতে হবে নয়তো জেলে যেতে হবে। বিশেষত বড় ভয় থাকে, কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরুবার। একটি গাড়ি বা কিছু নগদ টাকার গন্ধ শুঁকে তাদের অঘোষিত অগণিত টাকা-পয়সা ও অসংখ্য বাড়ি-গাড়ির খোঁজ যদি ট্যাক্স বিভাগ বা দুদক পেয়ে যায় তাহলে তো মহা বিপদ। তাই কিছু সম্পদ তারা রাস্তায় ফেলে দিয়ে পরিচয় গোপন রাখতে চেষ্টা করে। রাজনৈতিক সরকারের সময় বিরোধী পক্ষের লোকেরা এ ধরনের আতঙ্কে বেশি থাকে। যারা ক্ষমতাসীন শক্তির ওপর লেভেলে ম্যানেজ করে চলেন তারাও ভয়ে ভয়ে সময় কাটায়। সেনা সমর্থিত সরকার বা অস্বাভাবিক কোনো শাসন এলে এ ধরনের বিষয় পরিমাণে বেশি ঘটে। যারা ৫ থেকে ১৫ কোটি টাকার গাড়ি ফেলে পালিয়ে যায় তাদের কাছে এ টাকাটি তত বড় অংশ নয়। তাদের হাজার কোটি টাকার তহবিল আছে। আর এসব টাকাও তারা কষ্ট করে হালাল উপায়ে কামাই করেনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব হয়তো চাঁদাবাজ, ব্যাংক লুট, খেলাপি ঋণ, তদবির, কমিশন বা প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জিত টাকা। যার ৫-১০ কোটি নষ্ট হলেও মালিকের তত কষ্ট হয় না। কারণ তাদের প্রচুর আছে। এসবের ট্যাক্স দিলে দেশের উন্নয়নে এর বড় একটি অংশ ব্যয়িত হতো। মালিকও নিরাপদে সাদা টাকা নিয়ে বসবাস করতেন। এখানে শুধু বিত্তশালী লোকেরাই নয়, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক, প্রশাসন, নানা ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল সবারই ঈমানদার, আমানতদার, খোদাভীরু ও দেশপ্রেমিক হওয়া জরুরি।
ইসলাম খুব স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, ‘নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ সম্পদ জনকল্যাণে ব্যয় করে দাও।’ পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে মহান আল্লাহ ও অগণিত হাদিসে তাঁর সম্মানিত রাসূল সা: মানুষকে ধন সম্পদ ব্যয় করার উপযুক্ত পন্থা বাতলে দিয়েছেন। টাকা বিনিয়োগের উত্তম সুযোগের কথা বলে দিয়েছেন। এসব যদি মানুষ শুনত তাহলে সম্পদ গুটিকয় লোকের হাতে পুঞ্জিভ‚ত না হয়ে তা গণমানুষের কাছে সুষম হারে চলে যেত। ধনী-গরিবের বৈষম্য ঘুচে যেত। আকাশ-পাতাল পার্থক্য কমে একটি শান্তিপূর্ণ সমতা চলে আসত।
আল্লাহ বলেছেন, ‘যারা আমার পথে ব্যয় করে তারা আমাকে কর্জ দেয়, যা আমি তাদের ফিরিয়ে দেব বহুগুণ হারে।’ দানের প্রতিদান নিয়ত ও নিষ্ঠার ফলে কমপক্ষে ১০ গুণ, ৭০ গুণ, ৭০০ গুণ হয়ে থাকে। এরপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অগণিত গুণ দান করবেন। নবী করিম সা:-এর একটি হাদিসের মর্মার্থ এমন, তিনি বলেছেন, তোমার সম্পদ মূলত তিনটি। বাকি সব তোমার নয়। এসবের দায় তোমার কিন্তু ব্যবহার করবে অন্যরা। তোমার নিজের সম্পদ হচ্ছে, ১. যা তুমি খাও, ২. যা তুমি পরিধান করো (অর্থাৎ জীবনের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যয়গুলো), ৩. যা তুমি দান করো। বাকি সব অর্থসম্পদ রেখে তুমি চলে যাবে। এসব উপার্জন ও ব্যয়ের ভুল-ত্রæটি ও গোনাহ তোমার হবে আর ব্যবহার করবে অন্য কেউ। মানুষ যদি সাহাবায়ে কেরাম ও যুগে যুগে প্রকৃত মুমিন বান্দাদের মতো জীবনবোধ লাভ করতে পারত তাহলে আল্লাহর দেয়া প্রতিটি টাকা তারা সর্বোত্তম স্থানে বিনিয়োগে সক্ষম হতো।
সোনালী যুগের এক বুজুর্গ আলেম একদিন কাজের লোককে বললেন, অনেক দিন গোশত খাই না। সম্ভব হলে গোশত-রুটির ব্যবস্থা করো। বেশ কষ্টে সৃষ্টে কয়েকদিন পর গোশত ও রুটি দেয়া হলো। এ সময় দরজায় এক বিধবা তার এতিম বাচ্চাদের নিয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে কিছু চাইলে সে আলেম পুরো আয়োজনটিই তাদের দান করে দিলেন। কাজের লোক এ দৃশ্য দেখে বলল, হুজুর, বহু কষ্ট করে অনেক দিনে আমি এ খানার ব্যবস্থা করেছিলাম। আপনারও মনে আগ্রহ জন্মেছিল গোশত খাওয়ার। তো এসব গরিবদের দিয়ে দিলেন যে? তাদের জন্য অন্য কিছু দিলেও তো হতো। বুজুর্গ আলেম বললেন, এ খানাটুকু আমি নিজে না খেয়ে সবচেয়ে উত্তম জায়গায় বিনিয়োগ করলাম। আমি খেলে এ খানা নষ্ট ও ধ্বংস হয়ে যেত। এখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তা তারই অভাবী বান্দাদের দিয়ে আমি আল্লাহর কাছে এর প্রতিদানে জান্নাতি খানা পাওনা হয়ে গেলাম। সামান্য বিনিয়োগে এত বড় লাভ যে কোনো বুদ্ধিমানই করবে।
আফসোস, আমাদের সমাজের অর্থবিত্তওয়ালারা যদি আল্লাহ ও পরকাল বিশ্বাস করে নিজেদের টাকা উৎকৃষ্ট কাজে বিনিয়োগ করতেন। তাহলে তাদের কত গুণ লাভ হতো তা তারা ধারণাও করতে পারবেন না। টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি জমা করে রাখলে দুনিয়ায় তো বিপদের সময় এসব ফেলে পালিয়ে গিয়ে, জরিমানা দিয়ে বা জেল খেটেও মুক্তি পাওয়া যায় কিন্তু পরকালে তারা কী করে বাঁচবে? সেদিন আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচার কোনো উপায় তাদের থাকবে কি?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
ফখরুল ইসলাম ১৯ জুলাই, ২০১৮, ২:০১ এএম says : 0
দানের ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র কাছে পছন্দনীয় হলো সেই হাত, যে হাত সবসময় উপরে থাকে। পরম করুণাময় আল্লাহ্‌ আমাদের সবার হাত সবসময় উপরে রাখুন।
Total Reply(0)
Borhan Uddin ১৯ জুলাই, ২০১৮, ২:০৩ এএম says : 0
দান সম্পদে বরকত আনে।
Total Reply(0)
কাসেম ১৯ জুলাই, ২০১৮, ২:০৬ এএম says : 0
কল্যাণাকমী মানুষের একান্ত কর্তব্য হলো অর্থ-সম্পদ আল্লাহর পথে দান করে পরকালীন চিরস্থায়ী জীবনের মহা সফলতা লাভের সুনিশ্চিত ব্যবস্থা করা।
Total Reply(1)
Billal Hosen ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:৩৯ পিএম says : 4
আপনার সাথে একমত।
রমিজ উদ্দিন ১৯ জুলাই, ২০১৮, ২:১১ এএম says : 0
দায়িত্বশীল সবারই ঈমানদার, আমানতদার, খোদাভীরু ও দেশপ্রেমিক হওয়া জরুরি।
Total Reply(1)
Billal Hosen ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:৪৪ পিএম says : 4
আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেন, “প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। যতক্ষণ না তোমরা (মরে) কবরে উপস্থিত হও। কখনও নয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। আবার বলি, কখনও নয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। সত্যিই, তোমরা নিশ্চিত জ্ঞান থাকলে অবশ্যই তোমরা জানতে (ঐ প্রতিযোগিতার পরিণাম)” (সূরা তাকাসুর ১-৫ আয়াত)
কাওসার আহমেদ ১৯ জুলাই, ২০১৮, ২:১২ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সকলকে এই বিষয়টি বুঝার তৌফিক দান করুক।
Total Reply(0)
saif ১৯ জুলাই, ২০১৮, ৯:৫২ এএম says : 0
লেখক সাহেবকে ধন্যবাদ, এবং ইনকিলাব কেও ধন্যবাদ এই রকম নিয়মিত ইসলামিক বিষয় উপস্থাপনের জন্যে, যেটা আজকের সময়ের জন্যে একান্ত প্রয়োজন। আল্লাহ আপনাদের সবাইকে এর উত্তম প্রতিদান দেবেন। এর সাথে একটা হাদিস শুনেছিলাম, সেটা মনে পড়ে গেল, মুসলমানদের ব্যপারে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যে সকল সতর্ক বানী/ ভবিষ্যৎ বানি করেছিলেন তার মধ্যে একটা হল এই দুনিয়া দারি ধন সম্পদের ফিতনা, তিনি (সাঃ) বলেছেন, আমার পরে তোমরা কুফরবে এই ভয় করিনা, কিন্তু আমি এই ভয় করি তোমরা দুনিয়ায় মগ্ন হয়েযাবে" আজকে আমরা রাসুল (সাঃ) এর সেই বানীকেই বাস্থবে রূপ দিয়েছি, যার কারনে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজ নিজ উপায়ে দুনিয়া-দারী নিয়ে মগ্ন হয়ে গেছি। আর এক শ্রেনীর সল্প শিক্ষিত আলেম সমাজ আছেন তাদের অবস্থা তো আরো বেশি ভয়ঙ্কর। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিফাজত করুন, হিদায়েত নসিব করুন।
Total Reply(1)
Billal Hosen ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:৪১ পিএম says : 4
আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান করুক এই সঠিক কথা বলার জন্য।

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন