হজরত জুনাইদ বাগদাদী (রহ:) ছিলেন যুগের সেরা আধ্যাত্মিক সাধক। এক ব্যক্তি তাঁর খেদমতে উপস্থিত হয়। সে বায়তুল্লাহ শরিফ থেকে প্রত্যাবর্তন করছিল। কিন্তু তাঁর চেহারায় হজের কোনো ছাপ ছিল না। হজরত জুনাইদ বাগদাদী (রহ:) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কোথা থেকে এসেছ?’ ‘হজরত, আমি বায়তুল্লাহর হজ করে এসেছি’ মোসাফির জবাব দিলো। ‘তুমি কি হজ করেছ?’ হজরত জুনাইদ বাগদাদী (রহ:) পুনরায় তাকে জিজ্ঞাসা করলেন। ‘জি হ্যাঁ, আমি হজ করেছি’, মোসাফির জবাব দিলো। হজরত জিজ্ঞাসা করলেন, ‘যখন তুমি হজ করার উদ্দেশ্যে ঘরবাড়ি ছেড়ে বের হয়েছিলে তখন তুমি পাপকর্মগুলো থেকে দূরে সরে এসেছিলে কিনা?’ ‘হজরত! আমি এভাবে তো চিন্তা করিনি’, মোসাফির জবাব দিলো। অতপর: হজরত জুনাইদ বাগদাদী (রহ:) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তাহলে তুমি তো হজের জন্য বেরই হওনি। এ পবিত্র সফরে তুমি যেসব স্থান অতিক্রম করেছ এবং যেখানে যেখানে রাত যাপন করেছ, তুমি কি এ সময় আল্লাহর নৈকট্য লাভের মনজিলগুলো অতিক্রম করেছ এবং সে পথের ‘মোকাম’গুলোও অতিক্রম করেছ?’ ‘হজরত! তা তো আমার ধ্যানেও ছিল না’, মোসাফির সরলভাবে জবাব দিলো। তিনি বললেন, ‘তা হলে তুমি বায়তুল্লাহর দিকে সফর করোনি এবং সেদিকের মনজিলও অতিক্রম করোনি।’ অতঃপর জিজ্ঞাসা করলেন, ‘যখন তুমি ‘ইহরাম’ বেঁধেছ এবং নিজের দৈনন্দিন পরিধানের কাপড় খুলে ফেলেছ, তখন কি তুমি তার সাথেই নিজের মন্দ অভ্যাস ও স্বভাবগুলোকেও নিজের জীবন থেকে দূরে নিক্ষেপ করেছিলে?’ ‘হজরত! এভাবে তো আমি চিন্তা করিনি’, মোসাফির সাফ জানিয় দিলো। ‘তা হলে তুমি ইহরামও কোথায় বাঁধলে?’, হজরত হৃদয় বিগলিত কণ্ঠে বললেন। আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘যখন তুমি আরাফাতে গমন করেছিলে তখন তোমার মোশাহাদার কাশফ হাসেল হয়েছিল কি না?’। ‘হজরত! আপনার এ কথার অর্থ বুঝলাম না, মোসাফির বলল। ‘এর অর্থ হচ্ছে, তুমি আরাফাতের ময়দানে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করার সময় নিজের মধ্যে অবস্থারও কোনো পরিবর্তন অনুভব করেছ যে, তোমার রব (প্রভু) তোমার সামনে এবং তুমি তাকে দেখছ।’ ‘হজরত! এ অবস্থা তো ছিল না’, মোসাফির জানাল। ‘তা হলে তুমি তো আরাফাতে উপস্থিতই হওনি!’ হজরত অত্যন্ত আবেগময় কণ্ঠে বললেন। আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আচ্ছা বলো, যখন তুমি মোজদালাফায় পৌঁছেছিলে তখন সেখানে তুমি মনের কু প্রবৃত্তিগুলোকেও পরিত্যাগ করেছিলে কি?’ ‘হজরত! সে দিকে তো আমার মনোযোগ ছিল না’, মোসাফির জবাব দিলো। ‘তাহলে তো তুমি মোজদালিফায়ও যাওনি’, হজরত বললেন। অতঃপর জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আচ্ছা বলো দেখি, যখন তুমি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেছ, সে সময় ‘জামালে ইলাহির’ ঝলক ও কারিশমা কি দেখেছ?’ ‘হজরত! এগুলো থেকে তো আমি বঞ্চিত থেকেছি’, মোসাফির বলল। ‘তা হলে তো তুমি তাওয়াফই করোনি!’ হজরত বললেন।
অতঃপর জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সে সময় তুমি সাফা ও মারওয়াহর মধ্যে ‘সাঈ’-এর হেককমত (রহস্য) ও হাকিকত এবং তার উদ্দেশ্যও কি লাভ করেছ?’ ‘হজরত! আমার তো তার অনুভ‚তিই ছিল না’, মোসাফির জবাব দিলো। ‘তাহলে তুমি তো সাঈও করনি’, হজরত বললেন। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘যখন তুমি কোরবান গাহে পৌঁছে কোরবানির পশু জবাই করেছ, সে সময় তুমি নিজের নফস ও তার চাহিদাগুলোকেও খোদার পথে কোরবান করেছ কি না?’ ‘হজরত! সেদিকে আমার দৃষ্টি তো ছিল না’, মোসাফির বলল। ‘তা হলে তুমি কোরবানিই বা কোথায় করলে?’ হজরত বললেন। অতঃপর হজরত জুনাইদ বাগদাদী (রহ:) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আচ্ছা এবার বলো, যখন তুমি ‘জামারা’তে কঙ্কর নিক্ষেপণ করেছিলে, সেসময় তুমি নিজের মন্দ দোসর ও খারাপ সঙ্গীদের এবং মন্দ খায়েশগুলোর প্রতিও কি কঙ্কর নিক্ষেপ করেছিলে?’ ‘এমন তো করিনি’, মোসাফির বলল। ‘তা হলে তুমি তো পাথরও নিক্ষেপ করোনি’, হজরত অনুতাপ করে বললেন। ‘যাও প্রত্যাবর্তন করো এবং বর্ণিত অবস্থাগুলোর সাথে আবার হজ করো যাতে হজরত ইবরাহিম (আ:)-এর সঙ্গে নিসবত (সম্পর্ক) সৃষ্টি করতে পারো। যাঁর ঈমান ও ওফাদারির প্রতি স্বীকৃতি জ্ঞাপন করে কোরআন সাক্ষ্য দিয়েছে এবং ‘ইবরাহিম, যিনি তাঁর রবের সাথে ওফাদারির হক আদায় করেছেন’।”
এ ঘটনায় হাজী সাহেবানদের জন্য রয়েছে শিক্ষণীয়, অনুসরণীয় অনেক কিছু। যারা জীবনে একবার নয়, অনেকবার বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ ও হজ করার সৌভাগ্য লাভ করে থাকেন এবং তাদের উচিত হজরত জুনাইদ বাগদাদী (রহ:)-এর বর্ণিত শিক্ষাগুলো স্মরণে রেখে সে মোতাবেক হজ করা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন