ঈমান আনলেও ঈমানের অর্থ না বোঝায়, মুসলমান হয়েও ইসলামের দাবি পূরণ না করায় বহু লোক ভুল পথে আছেন। ইসলামী জ্ঞানের অভাবই এ জন্য দায়ী। দায়ী বুজুর্গ আলেম ও প্রকৃত পীর-মাশায়েখের সান্নিধ্যে না যাওয়া। ইসলামে ঈমান আনার পরই ফরজ হচ্ছে হালাল কামাই। যা না হলে নামাজ কবুল হয় না। ওজু ছাড়া যেমন নামাজ হয় না, হারাম খাদ্য খেয়েও তেমনই নামাজ কবুল হয় না। হারাম টাকায় দান সদকা ও জাকাত আদায় হয় না। অবৈধ অর্থে হজ-ওমরাও হয় না। অথচ বাংলাদেশে শত শত নজির আছে সুদের ব্যবসা করে, ঘুষ খায়, দুর্নীতি করে অর্থ উপার্জন করে, ওয়ারিশদের সম্পত্তি দেয় না, প্রতারণা করে টাকা কামায়, আবার সে লোকই সমাজে ধার্মিক পরিচয় দেয়। সমাজও অজ্ঞতা বা লোভে পড়ে তাকে উৎসাহই দেয়। হাততালি দেয়। মানুষের রক্ত চুষে টাকার পাহাড় গড়েছে, ভূমি দস্যুতার টাকায় বড়লোক হয়েছে, ব্যাংক লুট ও দুই নম্বরি করে টাকার কুমির হয়েছে। মানুষ সব জেনে শুনেও তাকেই বাহবা দিচ্ছে। এমন লোক বড় বড় মসজিদ করছে। মসজিদের সভাপতি-সেক্রেটারি হচ্ছে। আর অন্যদিকে যত রকম পাপের কাজ সবই চালিয়ে যাচ্ছে। গুনাহের কাজে এ লোকই পৃষ্ঠপোষক। অনেক ক্ষেত্রে ধার্মিকরূপ না নিয়ে তারা সমাজসেবক ও নেতা হয়ে কাজ করে, কেউ কেউ আবার ধার্মিকরূপ নিয়ে সমাজে বিচরণ করে। এদের অনেকে সব পাপ-তাপ অন্যায় মাফ হয়ে যাবে ভেবে প্রতি বছর রমজানে ওমরায় ছুটে যায়। পারলে প্রতি বছর হজ করে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে মানুষকে নির্দেশনা দিয়েছেন, তোমরা হালাল ও পবিত্র আহার গ্রহণ করো। -আল কোরআন। আরও বলেছেন, তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। -আল কোরআন। বলেছেন, যারা হারাম খায় তারা তাদের উদর শুধু আগুন দিয়েই ভর্তি করছে। -আল কোরআন। নবী করিম সা. বলেছেন, সেই দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যা হারাম খাদ্যে গঠিত। -আল হাদিস। তিনি আরেক হাদিসে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, পবিত্র বস্তু ছাড়া তিনি কিছু গ্রহণ করেন না। -আল হাদিস। প্রিয় নবী সা. বলেছেন, আল্লাহ বলেন, কিছু লোক আমার ঘরে ছুটে আসে, তাদের চুল উসকো-খোসকো, পরনের কাপড় ভ্রমণে ময়লা, দু’হাত তুলে দোয়া করে অথচ আমি তাদের দোয়া কী করে কবুল করি, কারণ তাদের শরীর হারামের দ্বারা গঠিত, তার কাপড় হারামের টাকায় কেনা। -আল হাদিস।
পাঠক, যাদের দেহ, পোশাক, হোটেল, বিমানের টিকিট সবই ঘুষ দুর্নীতি ও আত্মসাতের টাকায় কেনা বা গঠিত তারা যে পাপ মুক্তির বা সামাজিক মর্যাদা লাভের আশায় মক্কায় ছুটে যাবে তা আল্লাহর তায়ালার কথাতেই বোঝা যায়। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে মহানবী সা. হাদিস শরীফে এদের দোয়া কবুল না হওয়ার কথা ঘোষণা করে রেখেছেন। কিন্তু জ্ঞানের অভাব অথবা তাবেদার লোভী আলেমদের মিথ্যা সান্তনায় এসব লোক হজ-ওমরা মসজিদ নির্মাণ, দান খয়রাত দেদার করে যাচ্ছে। কিন্তু নিজের সংশোধনে এগিয়ে আসছে না। প্রকৃত আলেম ও শায়েখদের কাছে তারা যায় না, সম্পদ কমে যাওয়ার ভয়ে, মানুষের হক ফিরিয়ে দেয়ার ভয়ে। অথচ এরা দু’দিন পর যখন খালি হাতে কবরে চলে যাবে, তখন ভাবতেও পারবে না যে, তাদের মনগড়া তথাকথিত ইবাদত-বন্দেগি কোনো কাজে আসেনি। আর তাদের নুন খাওয়া লোভী আলেমরাও তাদের সত্য কথাটি বলেনি। তখন তাদের আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহর একটি বক্তব্যের মর্ম এই যে, তিনি বলেন, তারা তখন বলবে, এ খোদা আমাকে আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে দিন। যাতে আমি অনেক নেক আমল করে আর দান খয়রাত করে আসতে পারি। কিন্তু তা আর হবে না। তাদের এক পলকেরও সময় দেয়া হবে না। -আল কোরআন। অপর আয়াতের মর্মে দেখা যায়, আল্লাহ আরো বলেন, অবিশ্বাসীরা তাদের অপকর্মের বিনিময়ে পৃথিবী ভর্তি সোনা বা এর বহুগুণ বেশি সম্পদও যদি কাফফারা স্বরূপ দিতে চায়, তথাপি তাতে কোনো কর্ণপাত করা হবে না। তাদের কোনো ফিদিয়া বা প্রায়শ্চিত্তই পরকালে আর গৃহীত হবে না। -আল কোরআন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন