মিথ্যা ঘোষণা, ডকুমেন্ট জালিয়াতি-কারসাজিসহ হরেক রকম গোঁজামিলের মাধ্যমে পণ্য আমদানি ঠেকানো যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় আনা একাধিক আটক হচ্ছে। তবে বন্দর-কাস্টমস, সিএন্ডএফ ও আমদানিকারকের সংঘবদ্ধ একটি চক্রের যোগসাজশে ‘ঘাট’ পার হয়ে যায় আরও অনেক চালান। তাছাড়া কাস্টমসের প্রয়োজনীয় জনবল, দক্ষতা, প্রশিক্ষণ, আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও উন্নত প্রযুক্তির ঘাটতি রয়েছে। এর ফলে পণ্যসামগ্রী আমদানিতে ব্যাপক হারে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে অসৎ সিন্ডিকেট।
আমদানি বাণিজ্যের আড়ালে আসছে নিষিদ্ধ মালামালও। কাস্টমসে দাখিল করা আমদানি সংক্রান্ত কাগজপত্রে একশ্রেণীর পণ্যের ঘোষণা দিয়ে আনা হয় আরেক পণ্য। অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসজাত পণ্য, মদ, সিগারেট প্রভৃতি আনা হয়ে থাকে এবং সম্প্রতি কয়েক দফায় এ ধরনের চালান খালাস করে ডেলিভারি নেয়ার আগেই আটকে দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আবার কোনো কোনো পণ্য দীর্ঘদিন খালাস ও ডেলিভারি না নেয়ায় শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় তা ধরা পড়ে। এতে করে শুল্ক-কর হারের বড় ধরনের তারতম্য ঘটছে। ফলে, কোটি কোটি টাকার রাজস্ব গচ্ছা যাচ্ছে।
রাজস্ব ফাঁকির এই প্রবণতা চলে আসছে দীর্ঘদিন। ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, শিল্প কাঁচামাল, ভোগ্যপণ্য প্রভৃতি আমদানির নামে ঘোষণা বহির্ভূত অন্য ধরনের মালামাল আমদানি করা হয়। সেসব পণ্যসামগ্রী বাজারজাত অথবা প্রতিবেশী দেশে পাচার করা হচ্ছে। এতেই ফাঁকি দেয়া হচ্ছে বিপুল অংকের রাজস্ব। তাছাড়া এসব পণ্যের পেছনে ব্যাপক হারে হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার।
শিপিং-কাস্টমস সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উচ্চহারে শুল্কায়ন যোগ্য পণ্যকে কম শুল্কহারের পণ্য হিসেবে এবং নিম্নতম শুল্ক-করের শ্রেণির এমনকি নামমাত্র ও শূণ্য শুল্কহারের পণ্য হিসেবে আমদানির মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে অসৎ সিন্ডিকেট পণ্যসামগ্রী আমদানি করছে। গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে ২০টি অবৈধ চালান আটক করা হয়। এর সঙ্গে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে জরিমানাসহ বাড়তি শুল্ককর আদায়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
মিথ্যা ঘোষণায় আনীত সর্বশেষ দু’টি চালান কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আটক করে। গত ১ আগস্ট থার্মোমিটার ঘোষণায় আনীত ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের ২ লাখ ৪৫ হাজার ৮৮০ সেট প্লেয়িং কার্ড (তাস) আটক করে কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখা। চালানটি সন্দেহজনক হওয়ায় খালাস স্থগিত রেখে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু সাড়া না পেয়ে চালানের শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় দেখা যায় মাত্র ৩ হাজার ৬শ’ পিস থার্মোমিটার বাদে বাকি সবই তাস। চালানটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রায়হান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। খালাসের দায়িত্ব ছিল এমএ মোনাফ অ্যান্ড কোম্পানির।
পরদিনই (২ আগস্ট) ‘ব্যক্তিগত ব্যবহৃত পণ্য’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে আমদানিকৃত ৫০ লাখ ৯১ হাজার টাকার অবৈধ সিগারেটের চালান আটক করে কাস্টমস। গত ১৮ জুন হবিগঞ্জের ফিরোজ মিয়ার ছেলে মিজানের ব্যক্তিগত পণ্য ঘোষণা দেয়া চালানটি কলম্বো থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে কাস্টমস এআইআর শাখার কর্মকর্তারা বন্দরের ৭নং শেডে নজরদারিতে রাখেন চালানটি। পরে কায়িক পরীক্ষায় বিভিন্ন ব্রান্ডের ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৪শ’ শলাকা সিগারেট পাওয়া গেছে।
ইতোপূর্বে এআইআর শাখা ৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির দায়ে গত ৬ মে ৬৬ লাখ ৯৪ হাজার শলাকা এবং ২৮ এপ্রিল ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির দায়ে ৭৫ লাখ শলাকা বিদেশী সিগারেট আটক করে। আটক সিগারেট বাজেয়াপ্ত করে পর্যটন কর্পোরেশনের মাধ্যমে বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। রাজস্বফাঁকির দায়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন