রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নতুন মাইলফলকে রাজস্ব আয়

প্রথমবারের মতো ছাড়াল তিন লাখ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৪ এএম

গত অর্থবছরে (২০২১-২২) রেকর্ড পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর আগে দেশের ইতিহাসে রাজস্ব সংগ্রহ কখনও তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়নি। আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছিল। এই হিসাবে গত অর্থবছরে প্রায় ৪০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়েছে। তবে এই মাইলফলক অর্জিত হলেও দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় কর আদায়ের হার অনেক কম। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত এখন ১০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। তবে রাজস্ব আদায় বাড়াতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ইতিমধ্যেই নতুন নতুন কৌশল অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর।

তবে টানা দুই বছর করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছে নানামাত্রিক সঙ্কট। প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। এমন প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের রাজস্ব আয়ে ইতিবাচক ধারা বজায় থাকাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। সেইসঙ্গে বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কটে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে শুল্ক-কর আদায়ে বেশি মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মজিদ বলেন, তিন লাখ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আহরণ অবশ্যই একটি মাইলফলক। তবে কর-জিডিপির অনুপাত এখনও ১০ শতাংশের ঘরে আটকে রয়েছে। এখান থেকে এনবিআরকে বের হতে হবে।

প্রথমবারের মতো রাজস্ব আদায় ৩ লাখ কোটি টাকার মাইলফলক অর্জন হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তা কিছুটা পিছিয়ে। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। অবশ্য এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেছেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সব সময় চ্যালেঞ্জিং। কারণ এটি সব সময় বেশি ধরা হয়। আমরা চেষ্টা করছি, লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছানোর। আদায় বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

রেকর্ড রাজস্ব আদায় হলেও দেশে কর-জিডিপি আদায়ের হার অনেক কম। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত এখন ১০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। যেখানে নেপালে এই অনুপাত ২৪ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ এবং লাওসের ১৩ দশমিক ১৪ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এ দুটি দেশের ২০২৬ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটবে।

শুধু তাই নয়, শ্রীলঙ্কা ছাড়া কর-জিডিপিতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার পরে। বাংলাদেশের এই হার প্রতিবেশী দেশ নেপালের অর্ধেকের চেয়েও কম। এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের অবস্থাও এদিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো।
কর-জিডিপি অনুপাতে এখন বাংলাদেশের তুলনায় পিছিয়ে আছে কেবল দেউলিয়া হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কা-৮ দশমিক ৯ শতাংশ। এমনকি সাব-সাহারা আফ্রিকার দেশগুলোর কর-জিডিপি হারও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ। কর-জিডিপি হারে নিকটতম প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও বাংলাদেশের তুলনা করা হয়েছে।
সাধারণভাবে জিডিপির অনুপাতে ৩০ শতাংশ আয়কর থেকে এলে সেটি একটি আদর্শ অবস্থা; কিন্তু ১৫ থেকে ২০ ভাগকেও ভালো অবস্থা ধরে নেওয়া যায়। বাংলাদেশে এই অনুপাত ১০ দশমিক শূন্য ৯ ভাগ। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সাইজ ও বাংলাদেশের মানুষের গড় ইনকাম অনুযায়ী রাজস্ব আদায় আরও অন্তত ১০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিদেশি ঋণের চাপ কমাতে হলে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বৃদ্ধির বিকল্প নেই। তবে কর আহরণ বাড়াতে যে ধরনের সংস্কার দরকার তা এখনও করা হয়নি। রাজস্ব খাতে কার্যকর সংস্কার ছাড়া লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না।

এনবিআর কর্মকর্তারা মনে করেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি খারাপ থাকলেও দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থায় আছে। দেশের ভেতরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ভালো। অর্থনীতিতে গতি আছে। তাই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনের সুযোগ রয়েছে। গত ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের এমনটিই জানান। সেখানে রাজস্ব আদায় বাড়াতে বৈঠকে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কিছু কৌশল অবলম্বনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরের জন্য এনবিআরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন