সঞ্চয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে পথ ও কর্মজীবী শিশুকিশোররা। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে তাদের জমানো অর্থের স্থিতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ লাখ টাকা। চার হাজার ৩৮১ পথশিশু ও কর্মজীবী শিশুর অ্যাকাউন্টে এসব অর্থ জমা হয়েছে। দেশের ১৫টি এনজিও এ পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব দেখভাল করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ১০ টাকার নামমাত্র জামানতে পথশিশুদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নির্দেশনার পর এনজিও প্রতিনিধিদের সহায়তায় ব্যাংকগুলো পথশিশু ও কর্মজীবী শিশু-কিশোরদের জন্য হিসাব খোলার উদ্যোগ নেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন স্থানে যেমন বস্তি, রাস্তাঘাট, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট ও ফুটপাতে বসবাসরত পথশিশু এবং কর্মজীবী শিশু-কিশোরদের ব্যাংকিং সেবায় আনার মাধ্যমে তাদের মধ্যে সঞ্চয়প্রবণতা তৈরি, কষ্টোপার্জিত অর্থের সুরক্ষা, পথভ্রষ্ট হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করাসহ তাদের বৃহত্তর কল্যাণে ব্যাংক হিসাব খোলার মহতী উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে অধিকাংশ পথশিশু কোনো অভিভাবক না থাকায় এনজিও প্রতিনিধিদের এ কাজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, পথশিশু ও কর্মজীবী শিশুদের নামে সঞ্চয়ী ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে। তাদের পক্ষে হিসাবটি পরিচালনা করবেন এনজিও প্রতিনিধিরা। তবে হিসাব ফরম ও অর্থ জমার বইয়ে হিসাবধারী শিশু-কিশোরদের অনুস্বাক্ষর থাকতে হবে। আর এ ধরনের হিসাবে কোনো নমিনির দরকার হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ১৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এসব সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছে। এসব হিসাবে পথশিশুদের জমানো অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা। দেশের ১৫টি এনজিও শিশুদের অভিভাবক হয়ে এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করছেন। এনজিওগুলো হলো মাসাস, সাফ, উদ্দীপন, অপরাজেয় বাংলাদেশ, ব্র্যাক, নারী মৈত্রী, সিপিডি, প্রদীপন, সাজিদা ফাউন্ডেশন, এএসডি, বাংলার পাঠশালা, ইবিসিআর প্রকল্প, ঘাসফুল, এডুকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন ও পরিবর্তন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পথশিশুদের সবচেয়ে বেশি হিসাব খুলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক। এ ব্যাংকটি মার্চ পর্যন্ত ৯৭৪ পথশিশুর হিসাব খুলেছে। রূপালী ব্যাংকে তাদের জমা হয়েছে নয় লাখ ৭৩ হাজার টাকা। ৮১৯ পথশিশুর হিসাব খুলে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বেসরকারি সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক। এ ব্যাংকে পথশিশুরা দুই লাখ ৩৭ হাজার টাকা জমা করেছে। ৪৬৭ পথশিশুর হিসাব খুলে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেসরকারি পূবালী ব্যাংক। এ ব্যাংকে তাদের জমার পরিমাণ ৪ লাখ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে প্রাথমিকভাবে ১০ ব্যাংক পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব খোলার দায়িত্ব নেয়। পরে আরও ৯টি ব্যাংক এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এগুলো হলো সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন