প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রæত ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ৫৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি পার্বত্য জেলায় বাস্তবায়নাধীন বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থায় উন্নয়ন প্রকল্পটি ঘিরে পুকুর চুরির অভিযোগ উঠেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের অধীন বাস্তবায়নাধীন এই কাজের মালামাল সরবরাহ, সংরক্ষণ এবং সংযোজনের বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর তা সরেজমিনে খোঁজ নিতে গিয়ে ব্যাপক রহস্যের সন্ধান মিলেছে।
জানা যায়, এই বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের মালামাল ক্রয় করার পর সেগুলো রাঙামাটিতে সরবরাহ ও সংরক্ষণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পিপি ও চুক্তিপত্রে সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও প্রকৃতপক্ষে প্রকল্পের মালামালসমূহ রাখা হচ্ছে চট্টগ্রামের ফৌজদার হাটে। এই পদ্ধতিতে পরিবহন ব্যয় বাবদ বিশাল অংকের টাকা নয়ছয় করার আলামত পাওয়া গেছে। সূত্র মতে বিশাল অংকের এই প্রকল্পে এরই মধ্যে ১১০ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ বাবদ। তথ্যে প্রকাশ, কয়েক হাজার ট্রাক মালামাল ক্রয় করা হবে এই প্রকল্পের জন্যে। এতে কাগজে পত্রে রাঙামাটি দেখিয়ে চট্টগ্রামেই এই মালামাল নামিয়ে প্রতি ট্রাকে অন্তত ১০ হাজার টাকার ভাড়া পকেটস্থ করার পায়তারা করছে সংশ্লিষ্টরা। কারণ চুক্তিপত্র মোতাবেক সরকার পরিশোধ করছে রাঙামাটি পর্যন্ত পৌঁছানোর পরিবহন খরচ। পরে আবার একই মালামাল কাজের স্থানে পৌঁছাতে আবারও পরিবহন ব্যয় দ্যেখানো হবে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কর্মকর্তাগণ কোনো সদুত্তর না দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেই এমনটি করা হচ্ছে বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে।
মালামালগুলো পুনরায় রাঙামাটিতে নিয়ে আসতে পরিবহন ব্যায় সরবরাহকারী ঠিকাদার বহন করবে নাকি আপনারা বহন করবেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে উক্ত প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জল বড়–য়া কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি জানান এটা আমার জানা নেই।
অপরদিকে এই প্রকল্পে মালামাল সরবরাহকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশ কয়েকজন প্রতিনিধির সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তারা জানান, আমরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশিত স্থানেই মালামালগুলো একবারই পৌঁছে দিব।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাস্তবায়ন করা হয়েছে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার কাজ। এছাড়াও ২০১২ সালে ১৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এসব কাজগুলো রাঙামাটিস্থ পিডিবি’র ষ্টোরকে ব্যবহারের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা হয়েছিলো। কিন্তু এক অজানা রহস্যে এই প্রকল্পের মালামালগুলো রাঙামাটিতে না রেখে রাখা হচ্ছে ফৌজদার হাট স্টোরে।
অথচ বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের ঠিকাদারের সাথে কর্তৃপক্ষের চুক্তি নামায় ষ্পষ্টাক্ষরেই লিখা রয়েছে ডেলিভারির স্থান হবে তিনটি পার্বত্য জেলা। এই ক্ষেত্রে অপরদুটি জেলায় কোনো ষ্টোর রুম না থাকার সুবাধে রাঙামাটির স্টোর রুমেই সকল মালামাল রাখতে হবে।
মালামালগুলো ফৌজদার হাটে কেন রাখছেন এমন প্রশ্নে প্রকল্প কর্মকর্তা মতিউর রহমান বিরক্ত হয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাঙামাটিতে এই প্রকল্পের মূল অফিস হলেও মাসের অধিকাংশ সময়েই এই কর্মকর্তা এখানকার কার্যালয়ে আসেন না। ঢাকা-চট্টগ্রামে বসেই তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন প্রকল্পের কর্মকাÐ।
বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে একটি করে রিনুভেশন এবং আরো নতুন ৮টি এবং রাঙামাটিতে ছয়টি সাবস্টেশন স্থাপনসহ ৩৩ ও ১১ কেভি নতুন লাইন স্থাপনে এই প্রকল্পটির জন্যে ক্রয়কৃত মালামালগুলোর গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিবে বলে জানিয়েছে ওয়াকিবহাল মহল। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ চাহিদার লক্ষ্যমাত্রা মাথায় রেখেই প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের ১৬ই জানুয়ারি একনেকের সভায় তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুতায়নের জন্য ৫৬৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় সরকার। প্রকল্পে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫৩৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। আর বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তহবিল থেকে ব্যয় হবে আরও ২৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
প্রকল্পে তিন পার্বত্য জেলার মানুষের মাঝে যেমন আশার সঞ্চার হয়েছিল তেমনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের নানা ধরনের অনিয়মের চিত্র দেখে হতাশা এবং শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন