রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

কোরবানির বর্জ্য অপসারণ ও কিছু কথা

তুফান মাজহার খান | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

কোরবানির পর পরই আমাদের প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়ায় কোরবানির বর্জ্য। কীভাবে অপসারণ করব, কোথায় রাখব, কীভাবে রাখব, এ নিয়ে নানা চিন্তা। এ বিষয়ে আমাদের সামান্য অসচেতনতা বা অজ্ঞতার কারণে দেখা দিতে পারে পরিবেশগত নানা সমস্যা, যা আমাদের জীবনযাত্রায় অস্বস্থিকর অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। কোরবানির পশুর বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলার দরুণ তা পচে চারিদিকে দুর্গন্ধ ছড়ায়, পরিবেশ দূষিত করে। শুধু তাই নয়, নালা বা নর্দমাতে ফেলা বর্জ্য থেকে ছড়ায় নানা ধরনের রোগের জীবাণু। অতিরিক্ত বর্জ্যরে চাপে নালা বা নর্দমা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তখন অল্প বৃষ্টিতেই নর্দমার পানি আটকে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। তখন সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা এসব বর্জ্য অপসারন করতেও হিমশিম খেয়ে যায়। অনেক সময় আমরা কোরবানির পশুর দেহের ভক্ষন-অযোগ্য অংশবিশেষও যেখানে সেখানে ফেলে রাখি। নগর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর না হলে সেসব অংশ পচে উৎকট ও বাজে ধরণের দুর্গন্ধ ছড়ায়, যা শ্বসনের সাথে আমাদের দেহাভ্যন্তরে প্রবেশ করে নানা রোগ সৃষ্টি করে। নগর কর্তৃপক্ষ অবশ্য প্রতি কোরবানি ঈদের পূর্বেই বর্জ্য অপসারন সম্পর্কে নির্দেশনা, জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালায়। তাছাড়া টেলিভিশন, প্রিন্ট মিডিয়াসহ প্রায় সকল গণমাধ্যমেই কম-বেশি প্রচারণা চালানো হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা সেসব বিষয় ততটা আমলে নিই না। যার দরুণ আমরাই সম্মুখীন হই নানা সমস্যার। তবে যদি কোরবানির বর্জ্যকে সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনা যায় তাহলে পরিবেশও থাকবে দূষণমুক্ত, জনস্বাস্থ্যও থাকবে নিরাপদ। 

এজন্য কোরবানির আগেই বাড়ির পাশে কোনো মাঠে কিংবা পরিত্যক্ত জায়গায় একটা গর্ত তৈরি করে রাখা যেতে পারে, কোরবানির পর সকল পরিত্যক্ত বর্জ্য সেখানে ফেলে মাটিচাপা দিতে হবে। তবে শহরাঞ্চলে গর্ত খুঁড়ার সময় একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যাতে পানি ও গ্যাসের পাইপ, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের তার ইত্যাদি কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করার একটি উপায় হলো, গ্রামাঞ্চলের লোকেরা কয়েকজন একত্রে কোরবানি করা ও কোরবানির বর্জ্য মাটির নিচে পুতে রাখা, যা পরবর্তী বছর কোরবানির আগেই উঠিয়ে জৈব সার হিসেবে শষ্যক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। কোরবানির সব কার্যক্রম শেষে রক্তে মাখা রাস্তাঘাট ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলা উচিৎ। জীবাণু যেন ছড়াতে না পারে সেজন্য নোংরা জায়গা পরিষ্কারের সময় ব্লিচিং পাউডার বা জীবাণুনাশক ব্যবহার আবশ্যক। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুফল ও অব্যবস্থাপনার কুফল সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করা খুবই প্রয়োজন। তবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যেসব এলাকায় গর্ত খুঁড়ার উপযুক্ত জায়গা নেই সেসব এলাকার বর্জ্য প্রচলিত উপায়ে অপসারনের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এতে করে সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার দায়িত্বভার কিছুটা হলেও কমবে। পাশাপাশি বর্জ্যগুলো নষ্ট না হয়ে কাজেও লাগবে। পশুর ফেলে দেয়া নাড়ি-ভুড়ি থেকে উৎকৃষ্টমানের মাছের খাদ্য তৈরী করা যায়। একইভাবে পশুর হাড় গুঁড়া করে তৈরি করা যায় উৎকৃষ্ট মানের সার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পশুর চামড়া বিক্রি কিংবা দান করে দেওয়া প্রয়োজন। যারা শহরে থাকেন তারা বিচ্ছিন্ন স্থানে কোরবানি না দিয়ে কয়েকজন মিলে এক স্থানে কোরবানি করা ভালো। এতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাজ করতে সুবিধা হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কোরবানির জায়গাটি যেন খোলামেলা হয়। আর জায়গাটি রাস্তার কাছাকাছি হলে বর্জ্যের গাড়ি পৌঁছাতে সহজ হবে। জনসচেতনতা তৈরিতে ধর্মীয় নেতা বিশেষ করে মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে প্রচারণা চালানো যেতে পারে ।
যেহেতু কোরবানির বর্জ্য পচলে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ সেহেতু বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদের প্রয়োজন অনেক বেশি সচেতন হওয়া। গ্রামের বাড়িতে এই অসুবিধা না থাকলেও শহরে কোরবানির পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই কঠিন কাজ বলেই মনে করেন অনেকে। কিন্তু একটু সচেতনতা আর সঠিক পরিকল্পনাই এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে।
লেখক: প্রাবন্ধিক, ডেমরা, ঢাকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন