বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ওয়ারিশি সম্পত্তি নিয়ে কেন ঝগড়া হয়

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:৩৯ এএম

এক সমাবেশে একটি পয়েন্ট আলোচনা করলাম। বললাম, এক ব্যক্তি আমাকে বললেন, তিনি তার পিতার সঙ্গে দীর্ঘ ১৬ বছর প্রবাস করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও টাকা-পয়সা করেছেন। কিন্তু পিতার মৃত্যুর পর তাকে যে ভাগ দেয়া হয়েছে তা অন্য সব উত্তরাধিকারীর সমান। অথচ অন্য ভাই-বোনেরা এখানে কোনো অবদানই রাখার সুযোগ পায়নি। বরং তাদের লেখাপড়া, বিয়ে-শাদিসহ অন্যান্য খরচাপাতিও এখান থেকেই দেয়া হয়েছে। যুক্তি তো বলে যে, এ প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকই এই বড় ভাইটির হওয়া উচিত। এ নিয়ে তার নিজের যত নয় তার চেয়েও বেশি কষ্ট তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যার।
আমি বললাম, প্রথমত এটি শরিয়তের বিধান। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। তা ছাড়া এরই নাম ভাগ্য। তবে যেখানে প্রশ্ন ওঠার সম্ভাবনা থাকে সেখানে শরিয়ত যৌক্তিক পদ্ধতিও রেখেছে। শুরু থেকেই বড় ভাইয়ের জন্য পিতা একটি পরিচয় ঠিক করে নিতে পারতেন। কর্মচারী বা ব্যবস্থাপক হিসেবে বেতন-ভাতা অথবা পার্টনার বা পরিচালক হিসেবে লভ্যাংশ থাকলে এতে এসব প্রশ্ন উঠত না। অবশ্য ইসলামের এহসান ও একরাম নীতি যারা অবলম্বন করেন তাদের দ্বীন ও দুনিয়ার উভয় ক্ষেত্রেই অনেক খায়ের ও বরকত লাভ হয়, টাকা-পয়সা দিয়ে যা পাওয়া যায় না। এসব যারা বোঝেন তারা ভাগ্যের ওপর খুশি ও প্রাপ্ত রিজিকের ওপরই তৃপ্ত থাকেন।
ঢাকায় একটি পরিবারের কথা ছোটবেলায় শুনেছিলাম। সেখানে পুত্রবধূদের মনোমালিন্য না হওয়ার জন্য ছয় দিন তিনজনকে রান্নার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। প্রত্যেকে সপ্তাহে দুদিন করে রান্না করবে। আর একদিন সবাই খাবে শাশুড়ির ঘরে। এই হলো সাতদিন। ধরা যাক শাশুড়ির দাওয়াতটি শুক্রবারে। শনি, রবি বড় বউ, সোম, মঙ্গল মেজো বউ, বুধ, বৃহস্পতি ছোট বউ। কিন্তু প্রতি দিনকার রান্নায় সবাই সবাইকে যথাসম্ভব সাহায্য করবে। রান্নার পর খাবারগুলো নিয়ে যাওয়া হবে শাশুড়ির ঘরে। তিনি সবাইকে বণ্টন করে দেবেন। শুনেছি, এত নিয়ম বেঁধে দিয়েও সে পরিবারে কাক্সিক্ষত শান্তি আসেনি। শেষ পর্যন্ত এ নিয়ম টেকেও থাকেনি।
আমাদের দেশে একান্নবর্তী পরিবারগুলো এসব সমস্যা মোকাবেলা করেই শত শত বছর টিকে আছে। কেবল মা-বোনদের মানবিকতা, দয়া-মায়া, দায়িত্ববোধ ও সদাচরণই এসবের মূল চালিকাশক্তি। যেসব জায়গায় এসব গুণ কিছু কম সেখানেই অশান্তি। এ জন্যই বিয়ে-শাদির ক্ষেত্রে লোকেরা একান্নবর্তী বড় পরিবারের মেয়েকে পছন্দ করে, যারা সমঝোতা ও সমন্বয়ে অভ্যস্ত। আত্মকেন্দ্রিক, অসহিষ্ণু ও স্বার্থপর চরিত্রের মেয়েদের কেউই পছন্দ করে না।
ইসলামের ওয়ারিশ বণ্টন নীতি মুসলিম সমাজে পালিত হয় না বললেই চলে। অথচ এ বণ্টন না মানা বান্দার হক নষ্ট করা ও কবিরা গুনাহ। শরিয়তের নিয়মে যা আল্লাহও ক্ষমা করবেন না। যতক্ষণ না পাওনাদার অন্তর থেকে ক্ষমা করে। মুসলিম বিশ্বের বহু জায়গায় এ সমস্যা আছে, খুব বেশি আছে বাংলাদেশে। শতকরা ক’জন দায়িত্বশীল মানুষ এদেশে পাওয়া যাবে যারা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, কোরআনের হুকুম মতো আমরা আমাদের দাদী, ফুপু ও বোনের ওয়ারিশ দিয়ে দিয়েছি। আমাদের বাড়িতে বা সম্পত্তিতে পরের হক আটকা পড়েনি। মানুষ কেন যে বোঝে না। যদি এই বোনটি জন্মগতভাবে ভাই হতো, তাহলে কি কারো শক্তি ছিল তাকে বঞ্চিত করার। ঘরবাড়ি, দোকান, জমি ও টাকা সমান ভাগ করে সে নিয়ে যেত। অথচ বোনটি শুধু বোন হওয়ার অপরাধে তার অর্ধেক অংশও হাতে বুঝে পায় না। চেষ্টা করে, কথা তোলে, হাহাকার করে, ইশারা ইঙ্গিতে বলে, ভাইদের প্রতি মহব্বতের প্রাচুর্যে কিংবা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন হওয়ার ভয়ে সারাজীবন সহ্য করে যায়। কিন্তু নিজের খোদাপ্রদত্ত ভাগ বুঝে পায় না। এমন একটি জাজ্বল্যমান ডাকাতি করেও ভাইয়েরা বুক ফুলিয়ে সমাজে ভালো মানুষ সেজে ঘুরে বেড়ায়। এ অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিটি মুসলমানের সচেতন হওয়া খুবই জরুরি। অন্যথায় ঈমান আমল সবই বরবাদ হওয়া আশঙ্কা আছে। মানুষের পাওনা অধিকার না দিয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে কেউই পার পাবে না। লোভ জিনিসটা খুবই খারাপ। হাদিসে আছে, দুনিয়ার মহব্বত সমস্ত গুনাহের শিকড়।
আমার কাছে অনেকের তুলে ধরা বহু প্রশ্ন ও সমস্যা ছিল। ছিল অনেকের পাঠানো চিরকুট। আমি আরো অনেক সময় ধরে এসব আলোচনা করে গিয়েছি, যা লিখলে একটি বই হয়ে যাবে। সব কথা একটি লেখায় বলে শেষ করা যাবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
পাবেল ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৬:২৭ এএম says : 0
ইসলামের ওয়ারিশ বণ্টন নীতি না মানা বান্দার হক নষ্ট করা ও কবিরা গুনাহ।
Total Reply(0)
নিঝুম ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৬:২৭ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদেরকে সকল অপরাধ থেকে হেফাজত করুক
Total Reply(0)
সাইফ ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৯:৫০ এএম says : 0
লেখক ও ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে আল্লাহ এর উত্তম প্রতিধান প্রধান করুন। মাওলানা সাহেব ও জনাব এ এম এম বাহাউদ্দীন সাহেবের কাছে আরেকটি অনুরোধ, এই লেখা গুলিকে কেবল পত্রিকার মাঝে সিমা বদ্ধ নারেখে এটাকে আরেকটু সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌছে দেয়ার চেষ্টা করলে অনেক ভালো হতো। যেহেতু আপনাদের একটা সংগঠন রয়েছে, আর সেখনে সবাই মাদ্রাসার শিক্ষক, বর্তমানে তারা নিজ নিজ অবস্থানে এই সব কাজ করছে নিজ নিজ উপায়ে, এবং মতের উপর ভিত্তি করে। আমি বলতে ছাচ্ছিলাম এটা না করে সাংগঠনিক অবকাঠামোর ভিত্তিতে এবং কার্জক্রম হিসেবে, সবাইকে একই গাইডলাইনের আওতায় এনে সবাই যখন একই ফতোয়া দেবেণ একই ভাবে একই মতে চলবেন, নিশ্চই আল্লাহর রহমতে আমাদের সমাজের মানুষ অনেক উপকৃত হবেন।
Total Reply(0)
Shahidul Islam ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:২৪ পিএম says : 0
Islam is a complete code of life.So, if we follow the islamic rule in everywhere in our life, all problem will be solved smoothly. Almighty Allah give us accurate understanding. Ameen.
Total Reply(0)
Jashim Anowar ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:৩৮ পিএম says : 0
All Muslim Must see Islam what say ,Follow to Islam ..
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন