হাদীস শরীফে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে : ‘এক বছর রমজান মাসে ১৫ দিনের মধ্যে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা ঘটবে। মহাবিশ্বের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত এ রকম ঘটনা শুধুমাত্র একবারই ঘটবে।’ এ বছরটা যে কবে হবে তা তালাশ করা খুবই জরুরি। কেননা, পিয়ারা নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন : ‘হেকমত, প্রজ্ঞা ও মনীষা মুমিনের হারানো সম্পদ। তা তোমরা যেখানেই পাবে কুড়িয়ে নেবে।’ এই বাণী ও নির্দেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে আমরা সম্মানের দিকে অগ্রসর হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। ওয়াল্লাহু খায়রুন নাছিরীন।
বর্তমান বিশ্বে কম-বেশি একশত সত্তর কোটি মুসলমান বসবাস করছেন। এদের মাঝে আলেম-ওলামা, আল্লামা, মুফতি, মুফাসসির, শায়খুল হাদীস, খতিব, ইমাম, ডাক্তার, প্রফেসর, ইঞ্জিনিয়ার ও বিজ্ঞানীর সংখ্যা যে কত তার পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই। তবে, জানা না থাকলেও তাদের সংখ্যা অনেক হবে বলেই ধারণা করা যায়। কিন্তু এই বৃহত্তর দলভূক্ত জ্ঞানী-গুণী, পন্ডিত মহোদয়গণের গবেষণায় কোন বছরের কখন কখন সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হবে বা হতে পারে তার তালিকা বা নির্দেশিকার কোনোই সন্ধান পাওয়া যায় না। পৃথিবী নামক এই গ্রহের সত্তর ভাগ সম্পদের অধিকারী মুসলিম জাতি কালের স্রোতের টানে কোনদিকে ভেসে যাচ্ছে তা তারা নিজেরাও হয়তো জানে না। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে আমরা ‘নাসা’ এর দুয়ারে গিয়ে হাজির হয়েছি। নাসা অর্থাৎ নর্থ আমেরিকান স্পেস অথরিটি। এই নাসা হচ্ছে গোটা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এই নাসা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে বড় বড় সরকারি প্রজেক্টের মাধ্যমে নির্ভুলভাবে গবেষণা করে বলতে পারে যে, কোন তারিখে, কত মিনিটে ও কত সেকেন্ডে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হবে। গ্রেগরিয়াস কেলেন্ডার অনুসারে নাসা ২০১৮ সাল হতে ২০৫০ সাল পর্যন্ত এই ৩৩ বছরে কোন তারিখে রমজান শুরু হবে, ১৫ রমজান কোন তারিখে হবে, এবং কোন সালের কোন মাসের কত তারিখে সূর্যগ্রহণ হবে এবং কোন মাসের কোন তারিখে চন্দ্রগ্রহণ হবে তার একটি নির্ভুল তালিকা প্রস্তুত করেছে। বছরে সাধারণত: দুইবার সূর্যগ্রহণের ঘটনা ঘটে এবং দুইবার চন্দ্রগ্রহণের ঘটনাও ঘটে এবং প্রত্যেক বছরের একটি মাস ইসলামি বর্ষপঞ্জি অনুসারে রমজান মাস নামে পরীক্ষিত। আর এই রমজান মাসে ১৫ দিনের মধ্যেই সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের ঘটনাদ্বয় ঘটবে বলে হাদীস শরীফে এসেছে।
এ পর্যায়ে মনের গহীন বন্দরে একটি প্রশ্ন দানা বেঁধে উঠে যে, ‘নাসা’ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে, কঠোর পরিশ্রম ও নিরলস প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে রমজান ও সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণের তালিকা তৈরি করার প্রতি এতটা আগ্রহী হয়ে উঠল কেন? কেনই বা এই মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘকাল ধরে একাজে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে, আর কেনইবা তারা হন্যে হয়ে এর পেছনে লেগে আছে? উত্তরে বলা যায় যে, এর কারণ একটিই। তা হলো বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সা. কোনো মক্তব-মাদরাসায়া বা জাগতিক উস্তাদ বা শিক্ষকের নিকট লেখাপড়া করেননি। তিনি কিভাবে মহাকাশের ঘটনাপুঞ্জের সাথে জড়িত চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ কোনো এক বছরে রমজান মাসের ১৫ দিনের মধ্যে ঘটবে বলে ঘোষণা দিলেন? তার এ কথাটির সত্যতা যাচাই করার জন্যই নাসার এই নিরলস প্রয়াস। নাসার গবেষণায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণীত হয়েছে যে, পিয়ারা নবী মুহাম্মদ সা. এর বাণী সত্য। তিনি সত্য নবী। সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠাকল্পেই তার আবির্ভাব ঘটেছে এই ধূলার ধরণীতে। তিনিই আসসাদিকুল আলিম, রাহমাতুল্লিল আলামিন, খাতিমুন নাবিয়্যিন। তার কথা ও কাজে মিথ্যার লেশমাত্রও নেই।
নাসার বিজ্ঞানীদের প্রস্তুতকৃত রমজান মাসের শুরু ১৫ রমজান এবং সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ সংঘটনের তারিখ সম্বলিত তালিকা অনুসারে জানা যায় যে, ২০২৫ সালে রমজান শুরু হবে ১ মার্চ। রমজানের ১৫ তারিখ হবে ১৬ মার্চ। মার্চ মাসের ২৯ তারিখ অর্থাৎ রমজানেরও ২৯ তারিখ সূর্যগ্রহণ হবে। আর মার্চ মাসের ১৪ তারিখ অর্থাৎ রমজানেরও ১৪ তারিখ চন্দ্রগ্রহণ হবে। এখন ১৪ মার্চ হতে ২৯ মার্চ পর্যন্ত সময় হয় ১৫ দিন। সুবহানাল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। এটা যে বিশ্বনবী সা. এর জবানে পাকের বাণীর সত্যতার বলিষ্ঠ প্রমাণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা নাসার বিজ্ঞানীদের ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই এ জন্য যে, তারা এমন একটা মহত কাজ করেছে, যা অন্য কেউ করেনি। সাথে সাথে এ আহ্বানও করছি যে, প্রকৃত জ্ঞানীর কাজ হলো সত্যাশ্রয়ী জীবন পথ অতিক্রম করা। যা সত্য তা-ই মানুষকে মুক্তির দুয়ার প্রান্তে পৌঁছে দেয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন