আল্লাহর মহাপরাক্রম ও অসীম কুদরতের কথা যারা সত্যিকার অর্থেই উপলব্ধি করতে পারেন, তাদের বলা হয় আলেম। তারা জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহকে রাজি খুশি করার কাজে নিমগ্ন থাকেন। আল্লাহকে সীমাহীন ভয় করেন। যে কথাটি পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা নিজে বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে বান্দাদের মধ্যে কেবল আলেমরাই আল্লাহকে প্রকৃত ভয় করে।’ মহা সৃষ্টির প্রতিটি কণায় আল্লাহর ক্ষমতা বাস্তবায়নে সকলের অজান্তে তিনি অগণিত শক্তি নিয্ক্তু করে রেখেছেন। যাদেরকে তিনি নিজের সৈন্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। কথায় বলে, অগ্নিকান্ডে সব ধ্বংস হলেও ভিটেমাটি থেকে যায়। কিন্তু নদী ভাঙ্গনে মানুষ হয়ে যায় প্রকৃতই সর্বহারা। চীন ভারতকে অফিসিয়াল পত্র দিয়ে জানিয়েছে, আমাদের জাঙপো (ব্রহ্মপুত্র) নদীর পানি গত ৫০ বছরের মধ্যে বিপদসীমার সবচেয়ে ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমরা বাধ্য হয়ে কিছু পানি বাঁধ খুলে দিয়ে ছেড়ে দেব। আগাম সতর্কতার জন্য ভারতকে জানানো হল। এ নদীটি ভারত হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছে। ব্যাপক বন্যা না হয়েও নদীর ঢল নিম্নাঞ্চলকে কতটা তছনছ করতে পারে এর কিছু নমুনা দেশব্যাপী তো বটেই বিশেষকরে ফরিদপুর অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে। কয়েকমাস আগে উত্তরবঙ্গ ও সিলেট অঞ্চলে এবং অল্পদিন আগে চট্টগ্রামে কিছু ধ্বংসলীলা মানুষ দেখেছে। বৃষ্টি বা প্লাবন নয়, নয় ব্যাপক বন্যা। কিন্তু পানির তোড় আর নদীর গতি পরিবর্তন জায়গায় জায়গায় মানুষকে সর্বহারা বানিয়ে দিচ্ছে। মিডিয়ায় প্রথম দৈনিক ইনকিলাব, এরপর আরও অনেকেই এ বিষয়টি ধরেছেন। সোশাল মিডিয়ায় শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার একটি বাজার নদীতে তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে। আরও অনেক জায়গা নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুহূর্তগুলি ভাইরাল হচ্ছে। হাসপাতাল ও উপজেলা কমপ্লেক্স হুমকির মুখে। একটি তিন তলা ভবন কিভাবে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেল সে দৃশ্যটি দেখে হাহাকার করেনি এমন দর্শক পাওয়া যাবে না। লাখো মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, বাড়ীঘর কেবল নয় ব্যবসা বাণিজ্য সবশেষ। বড় বড় দোকান, মার্কেট, স্থাপনা এক নিমিষে বিলীন। মসজিদে ও ঘরে মানুষ দোয়া দুরুদ পড়ছে, হিন্দু সম্প্রদায় পূজারী ডেকে প্রার্থনা করছে। সারাদেশে অনেক জায়গায়ই বিচ্ছিন্নভাবে এমন তান্ডব চলছেই। একজন মহিলা বলেছেন, ‘আমার বয়স ষাটের ওপর। কোনোদিন এমন ভাঙ্গন দেখিনি। নদী থেকে ১০ কি.মি. দূরে বাড়ীঘর করেও আমরা বর্তমানে নদী ভাঙ্গনের শিকার।’ বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, নড়িয়ার এ ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকাটি পদ্মাসেতু থেকে ১৫ মাইল। যদি চীন ভারতের ব্রহ্মপুত্র বা অন্যান্য নদী এভাবে ক্ষুদ্ধ আচরণ করে, তাহলে কয়েক বছরের ব্যবধানে পদ্মাসেতু এলাকাও ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়তে পারে। পদ্মার গতি প্রকৃতি বিচারে দেশের ভয়াবহতম অনিশ্চয়তার জায়গাটিতেই আমরা পদ্মাসেতু করছি। নদী ভাঙ্গন বিষয়টি মানুষের অসহায়ত্বকে প্রকটভাবে প্রকাশ করে। গ্রামে যে মানুষটির সাড়ে ৪ কোটি টাকার ভবন চলে গেল, রাজধানীতে জমি ও বস্তুগত মূল্যে এর মান হবে ১০/১২ কোটি টাকা। চোখের পলকে নাই হয়ে গেল। এমনই অনেক মানুষ ক্ষমতার সুযোগে অন্যায়ভাবে টাকার পাহাড় গড়ে তুলে। সখের বাগান বাড়ি বানায়। প্রাসাদোপম অট্টালিকা তৈরি করে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা না থাকলে এসবে সে বসবাস করতে পারে না। এত সুখ সে ভোগ করতে পারে না। হয়তো সে চলে যায়, নতুবা সম্পদ তাকে ছেড়ে চলে যায়। ক্ষমতার পালাবদলে সে নিজেই পালিয়ে বেড়ায়। অনেকে কারাগারে, অজ্ঞাতবাসে অথবা হাসপাতালে জীবন কাটায়। মানুষ মূলত নিতান্ত অসহায়। আল্লাহর দান যতক্ষণ আল্লাহ চান ততক্ষণ সে ভোগ করে। ব্যতিক্রম হলেই সে নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হয়। শান্তির নেয়ামত, নিরাপত্তার নেয়ামত, স্বাস্থ্যের নেয়ামত ইত্যাদি সে যখন ভোগ করে তখন তার মনে রাখা উচিত যে এসবই আল্লাহর দান। একপলকেই আল্লাহ এসবই কেড়ে নিতে পারেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছুর মালিকই আমি।’ আল কোরআন। ‘তোমরা যদি আল্লাহর নেয়ামত গুণে শেষ করতে চাও তবে তা সমাপ্ত করতে পারবে না।’ আল কোরআন। আল্লাহ আরও বলেছেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি নেয়ামত বৃদ্ধি করে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহলে জেনে রাখ আমার আযাব খুবই কঠোর।’ আল কোরআন। নবী করিম সা. আমাদেরকে দোয়া শিখিয়েছেন যে, হে আল্লাহ, আমরা পানাহ চাই, নেয়ামত চলে যাওয়া থেকে। তোমার গজব নেমে আসা থেকে। আমার ভালো অবস্থা আকস্মিকভাবে মন্দে রূপান্তরিত হওয়া থেকে। আল হাদীস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন