উদ্বোধনের এক সপ্তাহও পেরোয়নি। নির্ধারিত ফ্লাইটে যাত্রী নিয়ে হাতে গোনা কয়েক ঘন্টাই আকাশে ওড়া মাত্র। কিন্তু এরই মধ্যে ভেঙে পড়েছে জরুরী অবতরণের দরজার একটি অংশ (র্যাফট)। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে সদ্য যুক্ত হওয়া বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার আকাশবীণার এ হচ্ছে বর্তমান চিত্র। গত ৫ সেপ্টেম্বর আকাশবীণার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের কয়েকঘন্টা পর যাত্রী নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ফ্লাইট চালু করে আকাশবীণা। পাঁচ দিনে মাত্র কয়েকটি ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার বিমানের দরজা ভেঙে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, প্রশিক্ষনের অভাবেই এমনটি ঘটেছে। ফ্লাইট ছেড়ে যাবার আগে ওই সময় বিমানটিতে যাত্রীদের খাবার তোলা হচ্ছিল। মঙ্গলবার সকালের ঘটনা হলেও বিষয়টি প্রকাশ পায় কয়েক ঘন্টা পরে। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। ইতিমধ্যে একজন প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটিও। বিমানটি পুরোপুরি ঠিক হতে সময় লাগবে আরো কয়েকদিন। ওই সময় পর্যন্ত কম যাত্রী নিয়েই উড়তে হবে বিমানটিকে। এতে করে আর্থিকভাবে লোকসানে পড়বে প্রতিষ্ঠান।
এদিকে অনেকেরই দাবি, এখন তোলপাড় চললেও কয়েকদিন পরেই সব ধামাচাপা পড়ে যাবে। কৌশলে পার পেয়ে যাবেন অভিযুক্তরা।
বিমান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ভোর সোয়া চারটার দিকে মালয়েশিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফেরে ড্রিমলাইনার আকাশবীণা। যাত্রী নেমে যাওয়ার পর নিয়মিত গ্রাউন্ড চেকের অংশ হিসেবে বিমানের প্রকৌশল বিভাগের কাছে বিমানটি হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তী ফ্লাইটের প্রস্তুতিস্বরুপ কেবিন ক্লিনিংসহ চেকআপ করা হয় পুরো বিমান। মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে বোর্র্ডিং ব্রিজে সংযুক্ত অবস্থায় বিএফসিসি থেকে ফ্লাইটের যাত্রীদের জন্য বিমানে খাবার ওঠানোর জন্য দরজা খোলা হয়। এ সময়ই খুলে পড়ে র্যাফট।
এদিকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে বিমানটি ছাড়ার নির্ধারিত সময় ছিলো ৮টা ২৫ মিনিটে। কিন্তু এ ঘটনার পর ভেঙ্গে পড়া র্যাফটি পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বিমানের প্রকৌশল বিভাগে। তারা র্যাফট ছাড়াই ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। অবশেষে ঘন্টাখানেকের বিলম্বে র্যাফট ছাড়াই ফ্লাইটটি ঢাকা ছাড়ে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার পরিচালনায় দক্ষ জনবল নেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশল বিভাগে। এ জন্য ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স থেকে পাঁচজন প্রকৌশলী নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের তত্বাবধানে ড্রিমলাইনারের জন্য বোয়িং থেকে প্রশিক্ষিত বিমান কর্মীদের কাজ করার নির্দেশনা রয়েছে। মঙ্গলবার সিঙ্গাপুর ফ্লাইটের আগে বিএফসিসি’র খাবারের গাড়ি আসলে দরজা খুলছিলেন বিমানের প্রকৌশল বিভাগের স্টাফ মোস্তাফিজুর রহমান। এ সময় তিনি অন্য বাটনে জোরে চাপ দেন। আর তখনই র্যাফটি ভেঙ্গে যায়।
বিমান সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জরুরি অবস্থায় যাত্রীদের বিমান থেকে বের হওয়ার জন্য দরজার সঙ্গে থাকে এই র্যাফট। এটার মাধ্যমে যাত্রীরা বিমান থেকে দ্রুত বের হয়ে যেতে পারেন। ড্রিমলাইনারে একটি দরজা দিয়ে ৫৫ জন যাত্রী বের হতে পারেন। আকাশবীণায় রয়েছে চারটি ইমার্জেন্সি এক্সিট ডোর। এর একটি ভেঙ্গে পড়ায় এখন ৫৫ জন যাত্রী কম নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হচ্ছে বিমানকে। এতে করে আর্থিকভাবে লোকসানে পড়বে বিমান।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ জানান, এর যন্ত্রাংশ লন্ডনে পাওয়া গেছে। সেটি এনে তিন দিনের মধ্যে সংযুক্ত করা হবে। এ সময় পর্যন্ত এভাবেই কম যাত্রী নিয়ে ফ্লাইট চালাতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় অভিযুক্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গে সঙ্গে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাকে শোকজ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিমানের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ বলেন, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ জানান, জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
উল্লেখ্য, গত ৫ সেপ্টেম্বর ড্রিমলাইনার আকাশবীণার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উড়োজাহাজটির আসন সংখ্যা ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি, আর ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস। ড্রিমলাইনার দিয়ে প্রাথমিকভাবে ঢাকা-সিঙ্গাপুর- ঢাকা ও ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন