দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র আকাশ পথে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর রহস্যজনক ব্যার্থতায় বেসরকারী উড়ান সংস্থার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে যাত্রীরা। এমনকি বিমান-এর সীমাহীন উদাশীনতা ও অবহেলায় মাত্র ৬৩ এ্যরোনটিক্যাল মাইলের দেশের স্বল্প দুরত্বের বরিশাল সেক্টরের আকাশ পথে বেসরকারী এয়ারলইন্স প্রায়সই ঢাকাÑকোলকাতার চেয়েও বেশী ভাড়া আদায় করছে। বিষয়টি নিয়ে সাধারন যাত্রীদের হতাশা ইতোমধ্যে ক্ষোভেও পরিনত হয়েছে। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র আকাশ পথে রাষ্ট্রীয় উড়ান সংস্থার এ উদাশীনতা ও অবহেলাকে ‘যাত্রীদের দূর্ভোগে ফেলে বেসরকারী এয়ারলাইন্স-এর জন্য অনৈতিক সুবিধা প্রদানের নামন্তর’ বলেও অবিহিত করছেন অনেক যাত্রী। পাশপাশি এ বিষয়টি আসন্ন বরিশাল সিটি নির্বাচনে সরকারী দলকে যথেষ্ঠ বেকায়দায় ফেলবে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
১৯৯৫ সালের ৩ ডিসেম্বর বরিশাল বিমান বন্দর ও জাতীয় পতাকাবাহী বিমান চালুর পারে দীর্ঘ চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশে ২০২১-এ ২৬ মার্চ বরিশাল সেক্টরে বিমান-এর দৈনিক ফ্লাইট চালু হয়। সে থেকে অত্যন্ত নির্ভরতায় অন্য দুটি বেসরকারী এয়ারলাইন্স-এর সাথে সুষ্ঠু প্রতিযোগীতার মাধ্যমে এ সেক্টরে বানিজ্যিক পরিচালন অব্যাহত রাখছিল রাষ্ট্রীয় বিমান। কিন্তু গত বছর ২৭ জুন পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পরে একটি মহল তৎপড় হয়ে ওঠে বরিশাল সেক্টরকে বেসরকারী এয়ারলইন্স-এর একক বানিজ্যের জন্য নির্দিষ্ট করতে।
আর এ সুযোগকে কাজে লাগাতে গত বছর ঈদ উল আজহা পরবর্তি দক্ষিণাঞ্চলের কর্মজীবী মানুষ কর্মস্থলে ফিরে যাবার পরে সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে চলাচল সাময়িকভাবে সিমিত ছিল, তখনই বরিশাল সেক্টরে বিমান-এর দৈনিক ফ্লাইট সপ্তাহে ৩ দিনে হ্রাস করা হয়। এমনকি গত অক্টোবরের শেষ ভাগে কার্যকর শীতকালীন সময়মসূচীতে বরিশাল সেক্টরে বিমান-এর সময়সূচী যাত্রী বান্ধব না হওয়ায় পরিস্থিতি আরো বিরূপ আকার ধারন করেছে। ভাড়া অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় সত্বেও সাধারন যাত্রীগন রাষ্ট্রীয় বিমান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেন। কারণ ‘সপ্তাহে কোন ৩দিন বিমান চলাচল করে, তা খুজে যাতায়াত করেন না’ সাধারন যাত্রীগন । যাত্রীদের অভিযোগ ‘বিমান-এ ভ্রমনের জন্য তারা ঢাকায় যান না, ঢাকায় যাবার জন্যই বিমান’কে ব্যবহার করতে চান’। এমনকি বিমান ফ্লাইট হ্রাস করার পরে ইউএস বাংলা এয়ার বরিশাল সেক্টরে কয়েকগুন বাড়তি ভাড়ায়ও প্রতিদিন বিকেলে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বর্তমানে বৃহস্পতি, শুক্র ও রোববার বিমান ফ্লাইট পরিচালনা করলেও অবশিষ্ট ৪ দিন বিকেলে বেসরকারী এয়ারলাইন্সে সাড়ে ৩ হাজার টিকেট ১০ হাজার ৬শ টাকায়ও বিক্রী হচ্ছে। ‘ফলে রাষ্ট্রীয় বিমান-এর নিয়মিত ফ্লাইটের কোন বিকল্প নেই’ বলেই মনে করছেন ওয়াকিবাহল মহল।
এ ব্যাপারে বিমান-এর বরিশাল সেলস অফিসের জেলা ব্যাবস্থাপকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে অস্বিকৃতি জানিয়ে বলেন, এখানের সার্বিক পরিস্থিতি কতৃপক্ষকে নিয়মিত অবহিত করা হয়ে থাকে।
বিষয়টি নিয়ে বিমান-এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক জনাব শফিউল আজিম-এর সাথে সেল ফোনে আলাপ করা হলে তিনি ‘বরিশাল সেক্টর নিয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহনের লক্ষে চেষ্টা চলছে’ বলে জানান। ‘বরিশাল সেক্টরের ফ্লাইট সময় সূচী যাত্রী বান্ধব নয়’ বলে স্বীকার করে, এরফলে ‘ফ্লাইট লোড হ্রাস’ পাবার বিষয়টির সাথেও একমত পোষন করেন তিনি। ‘সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই ইতিবাচক ধারায় ফেরার চেষ্টা চলছে’ বলেও জানান বিমান-এর প্রধান নির্বাহী।
এদিকে নানা প্রতিকুলতা ও যাত্রী বান্ধব সময়সূচী থেকে সরে যাবার পরেও গত বছর বরিশাল সেক্টরে বিমান-এ যাত্রী ভ্রমনের হার ছিল ফ্লাইট প্রতি ৭০%-এরও বেশী। এমনকি বরিশাল সেলস অফিসে রাজস্ব আয়ের হারও লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুন বলে জানা গেছে। অন্যসব সেলস অফিসের মত বিমান-এর বরিশাল সেলস অফিস থেকে দেশ বিদেশের যেকোন রুটের টিকেট সংগ্রহের পাশাপাশি ফ্লাইট সিডিউল কণফার্ম সহ যেকোন সেবা প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন