রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল্লাহপাকের অদৃশ্য সেনাবাহিনী

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

কোরআনুল কারীমে মহান রাব্বুল আলামীন একশ্রেণীর সৃষ্টির নামকরণ করেছেন ‘মালাকুন’ অর্থাৎ ফিরিস্তা বলে। এই মালাকুন শব্দটি একবচনে আল কোরআনে এসেছে ১৩ বার। দ্বিবচনে ‘মালাকাইনে’ রূপে এসেছে দুইবার। আর বহুবচনে ‘মালাইকাতুন’ রূপে এসেছে ৭৩। একুনে ১৩+২+৭৩= ৮৮ বার ফিরিস্তা প্রসঙ্গ আল কোরআনে আলোচিত হয়েছে।
প্রকৃতই ফিরিস্তামন্ডলী আল্লাহপাকের সৃষ্টি। তাদেরকে নূর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বংশ পরম্পরা বা সন্তান সন্ততি এবং নারী-পুরুষ নেই। তাদের দেহ এতই সু² যে, তা দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না। কোনো যন্ত্রের সাহায্যে শনাক্ত করা যায় না। তারা বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে সক্ষম। মহান রাব্বুল আলামীন সৃষ্ট জগতের ভাঙ্গা-গড়ার দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: (ক) ফিরিস্তাগণ আল্লাহর আদেশ অমান্য করে না, যা আদিষ্ট হয় তাই করে। (সুরা আত তাহরীম: আয়াত ৬)। (খ) তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের যা আদেশ দেয়া হয় তাই পালন করে। (সুরা আন নাহল: আয়াত ৫০)। (গ) ফিরিস্তাগণ আল্লাহর ইবাদতে অহঙ্কার করে না ও ক্লান্তিবোধ করে না। তারা দিবানিশি আল্লাহপাকের পবিত্রতা ঘোষণা করে, তারা শৈথিল্য করে না। (সুরা আল আম্বিয়া: আয়াত ১৯-২০) (ঘ) হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ফিরিস্তাগণ নূর হতে সৃষ্টি, জ্বিন জাতি অগ্নিশিখা হতে সৃষ্ট, আর আদম আ. ওই বস্তু দ্বারা সৃষ্ট যা তোমাদের সামনে বর্ণনা করা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম)। এই হাদীসে নূর বলতে অগ্নি হতে জৌতির্ময় অতি সূ² এক মৌলিক উপকরণকে বুঝানো হয়েছে। যার হাকিকত একমাত্র আল্লাহ পাকই ভালো জানেন। (নিবরাস: পৃ. ২৮৭)। (ঙ) জমহুর মুসলমানদের বিশ্বাস এই যে, ফিরিস্তাগণ অতি সূ² দেহধারী। তারা আল্লাহ পাকের দাসত্ব ও আনুগত্য করে। তাদের মধ্যে নারী পুরুষের বৈশিষ্ট্য নেই। (শরহুল মাকাসিদ: খন্ড ৩, প. ৩১৯)
ইসলামে ফিরিস্তাদের প্রতি ঈমান আনয়ন বাধ্যতামূলক। কোরআনুল মাজীদ এবং পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব সমূহে ও হাদীস শরীফে ফিরিস্তাদের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: (ক) রাসুলুল্লাহ সা. তার প্রতি রবের পক্ষ হতে অবতীর্ণ কিতাবের ওপর ঈমান আনেন এবং মুমিনগণও। সকলেই আল্লাহ, তার ফিরিস্তামন্ডলী, তার কিতাবসমূহের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে। (সুরা আল বাকারাহ: আয়াত ২৮৫)। (খ) কেবলমাত্র পূর্ব-পশ্চিম দিকে মুখ ফিরালেই সৎকাজ নয়, প্রকৃত সৎকাজ করল ওই ব্যক্তি যে আল্লাহর প্রতি, শেষ দিবসের প্রতি, ফিরিস্তামন্ডলীর প্রতি, কিতাবসমূহের প্রতি, রাসুলগণের প্রতি, শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাসস্থাপন করে। (সুরা বাকারাহ: ১৭৭)। (গ) হাদীসে জিব্রাঈলে রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন: ঈমান হল: আল্লাহর প্রতি, ফিরিস্তামন্ডলীর প্রতি, কিতাবসমূহের প্রতি, রাসুলগণের প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। আর তাকদীরের ভাল মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। (সহীহ বুখারী: খন্ড ১ পৃ. ১২)
এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, ফিরিস্তার অস্তিত্ব অস্বীকারকারী ব্যক্তি ইসলামী দায়েরা হতে বহিস্কৃত। তার সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্কই অবশিষ্ট নেই। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: (ক) আল্লাহপাক, তার ফিরিস্তামন্ডলী, কিতাবসমূহ, রাসুলগণ এবং শেষ দিবসকে যে অস্বীকার করে সে দূরতম পথ ভ্রষ্টতায় নিপতিত হল। (সুরা আন নিসা: আয়াত ১৩৬) (খ) আল বাকারাহ এর ২৮৫ নং আয়াত। (গ) হাদীসে জিব্রাঈলে উল্লেখ রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সা. কে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় তিনি উত্তর দিলেন, ঈমান হল আল্লাহ, তার ফিরিস্তাকুল, কিতাবসমূহ, রাসুলগণ, শেষ দিবসের প্রতি ও তাকদীরের ভাল মন্দের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। (সহীহ বুখারী: খন্ড ১, পৃ. ১২ দ্রষ্টব্য)। বস্তুত: এটি এমন একটি নীতিমালা যার ওপর নবী ও রাসুলগণ ঐকমত্য পোষণ করছেন। আর একথা সত্যি যে, রাসূলগণের অনুসরণ ছাড়া কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না। (আকীদায়ে তাহাবিয়্যাহ মায়াস শরহে: পৃ ৩৩২-৩৩৩)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
সফিক আহমেদ ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:২৭ এএম says : 0
ইসলামে ফিরিস্তাদের প্রতি ঈমান আনয়ন বাধ্যতামূলক।
Total Reply(0)
মারিয়া ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:২৮ এএম says : 0
লেখাটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন