দিন-রাত পরিশ্রম আর মূলধন বিনিয়োগ করে শসা উৎপাদন করছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চাষিরা। কিন্তু লাভ যাচ্ছে সব মধ্যস্বত্বভোগীর হাতে! ভোক্তারা ৩০ টাকায় প্রতিকেজি শসা কিনলেও চাষির পকেটে ঢুকছে মাত্র ৮-১০ টাকা। হাতবদলে দাম তিনগুণ হলেও ঠকছেন মাঠের চাষি। নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার কয়েকটি শসা বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। এ উপজেলায় শসার বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা।
পাইকার ও আড়ৎদারদের পদচারণায় সুবর্ণচর সরগরম। স্থানীয় ব্যাবসায়ীদের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতিদিন বাজারটিতে গড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার মণ শসা ক্রয়-বিক্রয় হয়। সুবর্ণচর উপজেলা থেকে কয়েক কিলোমিটার পথ এগোলেই সোলেমান বাজার শসার হাট। শসার ভরা মৌসুমে বাজারটি জমজমাট। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এখানকার সৈয়দপুর, কাটাখালী, চর নোমান, মোহাম্মপুর , চর উরিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে ক্ষেত থেকে শসা তুলে মাঠে জড়ো করেন চাষিসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। অনেকেই আবার সরাসরি স্থানীয় বাজারে পাইকারদের কাছে নিয়ে আসছেন। মাপামাপির কাজ শেষ হতেই বস্তাবন্দি করা হয় এবং বিকেলে ট্টাক, পিকআপে করে এ শসা চলে যাচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলার হাট বাজারে।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয় সুবর্ণচর উপজেলার সোলেমান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা এনামুল হক (৪০) জানান, শসা বেশ সুস্বাদু সবজি। সালাদে শসার কদর যেমন রয়েছে তেমন পুষ্টিগুণেও এটি অনন্য। স্বল্প পুঁজি আর অল্প পরিশ্রমে শসা চাষিদের সফলতার মন্ত্র। তিনি জানান, চাষিদের কাছ থেকে ৮ থেকে ১০ টাকা কেজিতে শসা কেনা হচ্ছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে সেই শসাই বিক্রি করেন ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে। তবে এনামুলেরও দাবি, বস্তা কেনা থেকে শুরু করে পরিবহন ও শ্রমিক খরচের পর লাভের অঙ্কটা খুব বেশি নয়।
স্থানীয় চরক্লার্ক ইউনিয়নের চর বয়োজিদ গ্রামের আবুল কালাম (৪২) এবার দেড় বিঘা জমিতে শসা চাষ করেছেন। ফলন ভালো হলেও পয়সা পাচ্ছেন না তিনি। এ চাষি জানান, জমি তৈরি, বীজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক মিলিয়ে উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। মণপ্রতি ৩২০ টাকা আর কেজি হিসেবে ৮ টাকায় শসা বিক্রি করতে হচ্ছে তাকে। অথচ তার উৎপাদন খরচই পড়েছে কেজি প্রতি ১০ টাকার উপরে। চাষিদের লাভের অংশ মধ্যস্বত্বভোগীদের পেটে যাওয়ায় হতাশার কথা জানিয়ে তারা বলেন, শসা চাষ এখন লাভজনক। কিন্তু চাষিদের রাত-দিন পরিশ্রম আর মূলধন খাটানো অর্থে উৎপাদিত এ সবজির লাভের টাকায় ফায়দা তুলছে অন্যরা। বাজারে শসার ব্যাপক চাহিদার পুরো সুবিধাই নিচ্ছেন তারা।
এ ব্যাপারে সুবর্ণচর উপজেলার কৃষি অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি চাষীদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, চাষীরা ন্যায্য দামই পাচ্ছেন, তবুও আমরা শিগগিরই মাঠ তদন্তে অভিযোগ খতিয়ে দেখবো ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন