আল্লাহপাকের বিস্ময়কর নেয়ামত মধুর খাদ্য ও ঔষুধি গুণ সম্পর্কে এর আগে আমরা লিখেছিলাম। ওই লেখায় আমরা বলেছিলাম, ১৪০০ বছরেরও আগে যখন চিকিৎসাবিজ্ঞান এখনকার মতো অগ্রসর ছিল না, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলআমিন পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে মানুষকে জানিয়ে দেন : মধুর মধ্যে মানুষের শেফা (আরোগ্য) রয়েছে। সূরা নাহলের ৬৯ নম্বর আয়াতে তিনি এই খোশখবর জানিয়ে বলেন : তাদের (মৌমাছিদের) উদর থেকে নির্গত হয় নানা রঙয়ের পানীয়। তাতে রয়েছে মানুষের জন্য শেফা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একাধিক হাদিস আমরা ওই লেখায় উদ্ধৃত করেছিলাম। যেমন, হজরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণিত একটি হাদিসে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিনদিন সকাল বেলায় মধু চেটে পান করে, তার কোনো কঠিন রোগব্যাধি হবে না।’ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বর্ণিত একটি হাদিসে আল্লাহর হাবীব সা. বলেন, ‘তোমরা দুটি শেফাদানকারী বস্তুকে নিজেদের জন্য আবশ্যকীয় করে নাও। একটি মধু এবং অপরটি কোরআন।’ দৈহিক রোগমুক্তির জন্য মধু যে অব্যর্থ মহৌষধ, এই হাদিসে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে।
আধুনিককালের চিকিৎসা সম্পর্কিত গবেষণায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা.-এর বাণীর সত্যতা বিশেষভাবে প্রমাণিত হয়ে চলেছে। বলতে গেলে মানবদেহের প্রায় এমন কোনো রোগব্যাধি নেই, মধু সেবন ও ব্যবহার করে যার নিরাময় বা উপশম না হয়। কৌষ্ঠকাঠিন্য, বাতব্যথা, সর্দি-কাশি, পক্ষাঘাত, পেটের পীড়া ও ব্যথা, চক্ষুরোগ ইত্যাদি নিরাময়ে মধু খবই কার্যকর। অতি সম্প্রতি ব্রিটেনের স্বাস্থ্য বিষয়ক গাইডলাইনে সর্দি-কাশি নিরাময়ের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারকে নিরৎসাহিত করে বলা হয়েছে, অ্যান্টিবায়োটিকের চেয়ে মধু বেশি কার্যকর। দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অ্যান্টিবায়োটিক যতটা কার্যকর বলে মনে করা হয়, আসলে ততটা নয়। এনআইসিই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রেসক্রাইবিং গাইডলাইন গ্রুপের চেয়ারম্যান ও জেনারেল প্র্যাক্টিশনার ডা. লুইসের মতে, যদি কারো সর্দি, গলায় খুসখুসে ভাব ও কাশি থাকে, আমরা মনে করি, অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াই সেটি দু’তিন সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত নিরাময় চাইলে মধুর সঙ্গে বড়জোর সাধারণ কিছু ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
আমাদের দেশে ঠান্ডা, সর্দি-কাশি হলে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আমাদের চিকিৎসকরাও এসব রোগে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন। অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই অনেকে মুড়ি-মুড়কির মতো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করে থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ক্ষেত্র বিশেষে অকার্যকর প্রমাণিত হয়। আবার এর বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। অধিক ব্যবহারে অ্যান্টিবায়োটিক একসময় অকার্যকর হয়ে পড়ে। এমনকি প্রচলিত সব অ্যান্টিবায়োটিকই জীবানু নাশে ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। অথচ আল্লাহ ও রাসূল সা.-এর নির্দেশনা মতে, মধু সেবন করলে আমরা অ্যান্টিবায়োটিকের চিরস্থায়ী বিকল্প লাভ করতে পারি। পাশাপাশি পেতে পারি সহজ ও দ্রুত নিরাময়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন