‘আহলে বাইত’ শব্দদ্বয় আরবি। এর দ্বারা স্ত্রী-সন্তান সন্ততি ও পরিবারকে বোঝায়। (ক) আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘তারা (ফিরিশতাগণ) বললেন, আল্লাহর কাজে তুমি (ইব্রাহীমের স্ত্রী) বিস্ময়বোধ করছ? হে পরিবারবর্গ, তোমাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ, তিনি প্রশংসাভাজন ও সম্মানিত। (সূরা হুদ : আয়াত ৭৩)। এই আয়াতে আহলে বাইত বলতে হজরত ইব্রাহীম আ.-এর পরিবারবর্গকে বোঝানো হয়েছে। (খ) আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘পূর্ব থেকেই আমি ধাত্রীস্তন্য পানে তাকে (মূসাকে) বিরত রেখেছিলাম। মূসার ভগ্নি বলল, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক আহলে বাইতের সন্ধান দেবো যারা তোমাদের হয়ে তাকে লালন পালন করবে এবং তার মঙ্গলকামী হবে? (সূরা কাসাস : আয়াত ১২)। এখানে আহলে বাইত বলতে হজরত মূসা আ.-এর পিতৃ-মাতৃ সমৃদ্ধ পরিবারের কথা বলা হয়েছে। (গ) আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল তোমাদের হতে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান। (সূরা আহযাব : আয়াত ৩৩)। এই আয়াতে আহলে বাইত বলতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পরিবারকে বোঝানো হয়েছে। এদের মধ্যে শামিল রয়েছেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র সহধর্মিণীগণ, তিন পুত্র চার কন্যা ও কন্যার বংশধরগণ। (তাফসিরে হাশিয়ায়ে শাইখ যাদাহ: খন্ড ৬, পৃ. ৬৩৫)। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সহধর্মিণীগণের সংখ্যা ১১ জন। তাদের মধ্যে দুইজন রাসূল (সা.)-এর জীবদ্দশাতেই ইন্তেকাল করেছেন। এক. হজরত খাদিজাতুল কুবরা রা., দুই. হজরত যায়নাব বিনতে খুজাইমাহ রা.। ৯ জন স্ত্রী রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের সময় জীবিত ছিলেন। নিম্নে ধারাবাহিকভাবে তাদের নাম উপস্থাপন করা হলো- (১) হজরত খাদিজাতুল কুবরা রা., (২) হজরত সাওদাহ রা., (৩) হজরত আয়েশা রা., (৩) হজরত হাফসা রা., (৫) হজরত যায়নাব বিনতে খুজাইমাহ রা., (৬) হজরত উম্মে সালমা রা., (৭) হজরত যায়নাব বিনতে জাহাশ রা., (৮) হজরত যুয়াইরিয়্যাহ রা., (৯) হজরত উম্মে হাবিবাহ রা., (১০) হজরত সাফিয়্যাহ রা., (১১) হজরত মাইমুনাহ রা.। এদের ছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর তিনজন দাসী ছিলেন। (১) হজরত মারিয়া রা., (২) হজরত রায়হানা রা., (৩) হজরত নাফিসা রা.।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর তিনজন সাহেবজাদার নাম হলো : (১) হজরত কাসিম রা., (২) হজরত আব্দুল্লাহ রা. (যাকে তাহির ও তাইয়্যিবও বলা হয়)। কারো কারো মতে তারা ছিলেন পৃথক সন্তান। (৩) হজরত ইব্রাহীম রা.। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কন্যাগণের নাম হলো : (১) হজরত যায়নাব রা., (২) হজরত রুকাইয়্যাহ রা., (৩) হজরত উম্মে কুলসুম রা., (৪) হজরত ফাতিমা রা.। সকল কন্যাই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। তাঁদের বিয়ে-শাদী হয়েছিল। হজরত ফাতিমা রা. ছাড়া তিন কন্যা তাঁর জীবদ্দশাতেই ইহলোক ত্যাগ করেন। রাসূল তনয় হজরত ইব্রাহীম ব্যতীত তার অন্য সকল সন্তান হজরত খাদিজা রা.-এর গর্ভজাত। ছেলে ইব্রাহীম রা. তাঁর দাসী হজরত মারিয়া কিবতিয়া রা.-এর গর্ভে জন্মলাভ করেন। হজরত ফাতিমা রা. ছাড়া অন্য কোনো সন্তানের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বংশধারা বিস্তার লাভ করেনি।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আহলে বাইতকে হজরত নূহ আ.-এর কিস্তির সাথে দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। যে ব্যক্তি নূহের কিস্তিতে স্থান লাভ করেছে সে মুক্তি পেয়েছে। আর যে তাতে আরোহণ করতে পারেনি সে ধ্বংস হয়েছে। হজরত আবু যর রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, আমার আহলে বাইত নূহের কিস্তির সমতুল্য। যে তাতে আরোহণ করছে সে মুক্তি পেয়েছে। আর যে পিছলে পড়েছে সে ডুবে মরেছে। (মুস্তাদরাকে হাকেম : খন্ড ১, পৃ. ৩৩৪; খন্ড ৪, পৃ. ১২৪৩)। অনুরূপভাবে যে আহলে বাইতকে ভালোবাসতে পেরেছে সে মুক্তি পেয়েছে। আর যে আহলে বাইতের প্রতি শত্রু তা পোষণ করেছে সে পথভ্রষ্ট হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন