রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

চীন দেশের নামকরণ ও কোরআনে বর্ণিত ‘সাবেয়ীন’ এর কাহিনী

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

‘সাবেয়ীন’ একটি সুবিধাবাদী প্রাচীন সম্প্রদায়। ইহুদি, খ্রিষ্টান, মজুসি এবং মোশরেক (শূন্যবাদী বা অংশিবাদী)-এর সাথে এ সম্প্রদায়ের নামও কোরআনে সংযুক্ত করা হয়েছে। যদিও এ সম্প্রদায়ের বিশদ বিবরণ তাফসির ও ইতিহাস গ্রন্থাবলিতে খুব কম পরিলক্ষিত হয়। কোরআনে সূরা বাকারা, সূরা মায়েদাহ এবং সূরা হজে¦ ‘সাবেয়ীন’ নামটি ব্যবহৃত হয়েছে। নিম্নে আয়াতগুলোর অর্থ প্রদত্ত হলো :
১. সূরা বাকারায় বলা হয়েছে :
‘নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, যারা ইহুদি হয়েছে এবং খ্রিষ্টান ও ‘সাবেয়ীন’ যারাই আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য পুরস্কার আছে। তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (আয়াত : ৬২)
২. সূরা মায়েদায় বলা হয়েছে :
‘মোমেনগণ, ইহুদিগণ, সাবেয়ীগণ ও খ্রিষ্টানগণের মধ্যে কেউ আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর ঈমান আনলে এবং সৎকার্য করলে তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।’ (আয়াত : ৬৯)
৩. সূরা হজ্বে বলা হয়েছে :
‘যারা ঈমান এনেছে এবং যারা ইহুদি হয়েছে, যারা সাবেয়ী, খ্রিষ্টান ও অগ্নিপূজক এবং যারা মোশরেক হয়েছে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন। আল্লাহ সমস্ত কিছুর সম্যক প্রত্যক্ষকারী।’ (আয়াত : ১৭)
সূরা হজে¦র বর্ণিত আয়াতে ইহুদি, সাবেয়ী, খ্রিষ্টান, অগ্নিপূজক এবং মোশরেক -এ শ্রেণিগুলোর লোকের কথা একই সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তাফসিরে খাজেনে বলা হয়, আল আদিয়ানু সিত্তাতুন, ওয়াহেদুন লিল্লাহি, ওয়া হুওয়াল ইসলামু, ওয়া খামসাতুন মিনাশ্ শায়াতীন, ওয়া হুয়া মা আদাল ইসলাম।’ অর্থাৎ ধর্ম ছয়টি। এগুলোর মধ্যে একটি আল্লাহর ধর্ম এবং সেটাই ইসলাম। ইসলাম ব্যতীত বাকি পাঁচটি শয়তানের।
‘সাবী’ শব্দের বহুবচন ‘সাবেয়ীন’। ‘সাবী’ এর অর্থ- যে নিজের দ্বীন পরিবর্তন করে অন্য দ্বীন গ্রহণ করে। তৎকালে প্রচলিত সকল ধর্ম হতে তাদের পছন্দমতো কিছু কিছু বিষয় তারা গ্রহণ করে, তারা নক্ষত্র ও ফিরেশতাদের পূজা করত। হজরত উমর (রা:) তাদেরকে ‘কিতাবিদের’ মধ্যে গণ্য করতেন। তারা হজরত ইবরাহীম (আ:) কে নবী হিসেবে মানত। তারা তওরাত পাঠ করত এবং খানা-ই-কাবার দিকে নামাজ পড়ত। সুতরাং বলা যায়, ধর্মীয় দিক দিয়ে সাবীরা ছিল সুবিধাবাদী সম্প্রদায় এবং আয়াতে বর্ণিত বাতিল সম্প্রদায়গুলোর একটি। ফেরেশতা ও নক্ষত্রের পূজাকারী নিঃসন্দেহে মোশরেক। আর প্রত্যেক ধর্মের যে বিষয়টি তাদের পছন্দ হতো তা গ্রহণ করার অর্থ তারা সুবিধাবাদী সম্প্রদায়।
‘সাবী’ সম্প্রদায়ের বিশদ বিবরণ জানা না গেলেও তাদের সম্পর্কে এই নতুন তথ্যটি জানা যায় যে, এরাই চীনের আদিবাসী। আবু উমর ইবনে আব্দুল্লাহ রচিত ‘কিতাবুল ওমাম’ এর বরাত দিয়ে ‘হায়াতুল হায়ওয়ান’ গ্রন্থের লেখক আল্লামা কামাল উদ্দীন দামিরী ‘সাবেয়ীন’দের সম্পর্কে বেশ কিছু আকর্ষণীয় এবং অভিনব তথ্য পরিবেশন করেছেন। বিষয়গুলোর সত্যতা ও যথার্থতা যাচাই করা আমাদের কাজ নয়, তা চীনা গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের কাজ।
কিতাবুল ওমাম এর বর্ণনা অনুযায়ী, চীন দেশে জনবসতির সূচনা হয় এভাবে যে, আমর ইবনে ইয়াফেস ইবনে নূহ (আ:) সর্ব প্রথম এখানে অবতরণ করেন এবং তিনি ও তার বংশধরগণ বহু শহর গড়ে তোলেন এবং সেগুলোতে নানা প্রকারের আজব, আশ্চর্যজনক বহু দর্শনীয় বস্তুর সমাবেশ ঘটান। আমর তিন শ’ বছর পর্যন্ত রাজত্ব করেন। অতঃপর তার পুত্র ‘ছায়েন’ ইবনে আমর এ সাম্রাজ্যের অধিকারী হন এবং তিনি দুইশত বছর পর্যন্ত রাজত্ব করেন। সুতরাং তারই নামে এ দেশের নামকরণ করা হয় চীন। অতঃপর এ নামেই দেশটি পরিচিতি লাভ করে।
‘ছায়েন’ তার পিতা আমরের স্মরণে একটি সোনালী মূর্তি নির্মাণ করেন এবং তার প্রজাসাধারণ মূর্তিটির পূজা আরম্ভ করে দেয়। অতএব, তার পরে যত বাদশাহ হয়, তারা সকলে এ রীতি অনুসরণ করতে থাকে। বলা হয় যে, ‘সাবেয়ী’ ধর্মের প্রবর্তক ছিল এরাই। আরো বলা হয় যে, চীনারা সাদা ঈষৎ হলদে বর্ণের হয়। তাদের নাক হয় চেপ্টা। এসব লোক (যিনা) ব্যাভিচারকে বৈধ মনে করে এবং এ কর্মকে তারা মোটেই অস্বীকার করে না। বর্ণিত আছে যে, চীনের পদদেশে টাংওয়ালা অর্থাৎ একটি উলঙ্গ জাতি বাস করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের কেশ দ্বারা শরীর ঢেকে নেয়। সুতরাং তারা উলঙ্গই থাকে, তাদের চেহারা হয় লালচে এবং তাদের চুল (কেশ) হয় লাল-সাদা। তাদের মধ্যে এমনও আছে যারা সূর্য উদিত হওয়ার সাথে সাথে পালিয়ে গর্তগুলোতে ঢুকে যায় এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে থাকে। তাদের খাদ্য সাপের ছাতার মতো এক প্রকারের বস্তু এবং সামুদ্রিক মাছ।
বলা হয়, সূর্য যখন মেষ রাশিতে অবস্থান করে তখন চীনারা তাদের শেখা একটি উৎসব পালন করে। যা সাতদিন চালু থাকে এবং এ সাতদিন তারা খুব উত্তম খাবার খায়।
হজরত নূহ (আ:) এর পুত্র সাম, হাম এবং ইয়াফেস। বিশ্বমানব এ তিনজনের বংশধর বলে প্রচলিত। ইয়াফেসের পুত্র আমর এবং তার পুত্র ‘ছায়েন’ হতে চীনাদের বংশধারা চালু হয়ে থাকলে বলতে হয়, চীনা জাতি ‘সাবেয়ীন’ সস্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত, ইয়াফেস ইবনে নূহ (আ:) এর বংশধর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
কামরুজ্জামান ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১:১৯ এএম says : 0
লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)
খাইরুল ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১:২০ এএম says : 0
এই ধরনের লেখা পত্রিকায় সচারচর পাওয়া যায় না। লেখাটি পড়ে খুব ভালো লাগলো
Total Reply(1)
md amin uddin ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১০:২৭ এএম says : 4
এই ধরনের লেখা পত্রিকায় সচারচর পাওয়া যায় না। লেখাটি পড়ে খুব ভালো লাগলো পবিত্র কোরআনে বর্ণিত এ রকম আরো তত্তববহুল ইতিহাস লিখার জন্য অনুরুধ রহিল।
দিপক খান ৩ অক্টোবর, ২০১৮, ৩:০৪ পিএম says : 1
হজরত নূহ (আ:) এর পুত্র সাম, হাম এবং ইয়াফেস। বিশ্বমানব এ তিনজনের বংশধর বলে প্রচলিত। ইয়াফেসের পুত্র আমর এবং তার পুত্র ‘ছায়েন’ হতে চীনাদের বংশধারা চালু হয়ে থাকলে বলতে হয়, চীনা জাতি ‘সাবেয়ীন’ সস্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত, ইয়াফেস ইবনে নূহ (আ:) এর বংশধর। লেখাটা এত বড় না করে উপরের অংশটুকু লিখলেই হত।
Total Reply(0)
রেজাউল করিম ১ নভেম্বর, ২০২১, ১:৩৮ এএম says : 0
লেখা পড়ে কাল্পনিক ডুবে গেলাম কিন্তু বাস্তবতা হলো এ লেখার সত্যতা নেই এটা অসার কাল্পনিক মনগড়া ভিত্তিহীন। এটাই সত্যি
Total Reply(0)
ইমরান গাজী ৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:৫২ এএম says : 0
অসাধারণ লেখনি, এরকম ইতিহাস আরো লেখার জন্য অনুরোধ রইল
Total Reply(0)
ইমরান গাজী ৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:৫২ এএম says : 0
অসাধারণ লেখনি, এরকম ইতিহাস আরো লেখার জন্য অনুরোধ রইল
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন