বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মসজিদবিরোধী রায় ইসলাম নির্মূল চক্রান্তের অংশ

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

সম্প্রতি ভারতের উচ্চ আদালতের কয়েকটি ভিন্নধর্মী রায় ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় সমাজব্যবস্থা তছনছ করে দিতে পারে এমন আশঙ্কার সৃষ্টি করেছে। যেমন, প্রথম তারা সমকামসহ সব ধরনের অস্বাভাবিক যৌনতাকে বৈধতা দিয়েছে। এরপর ব্যাভিচার ও পরকীয়াকে বৈধতা দিয়েছে।
এর মধ্যে দু’টি রায় ইসলাম ধর্মের স্বকীয় বিষয়ে অনেকটা অনধিকার চর্চার মতোই ভারতের উচ্চ আদালত প্রদান করে। প্রথমত: তিন তালাক অবৈধ ঘোষণা। সবশেষে গত বৃহস্পতিবার (২৭-০৯-১৮) কোর্ট রায় দেয়, ‘নামাজ পড়ার জন্য মসজিদ অপরিহার্য নয়’। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এ বিষয়ে কোর্ট কোনো ইসলামী বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেয়নি। অবশ্য এর আগে ট্রিপল তালাক ইস্যুতে ভারতীয় বিপারপতি কুরিয়েন বলেছিলেন, ট্রিপল তালাকের বিষয়টি কোরআনে নেই। কিন্তু মসজিদের বিষয়টি সামনে এলে কোর্ট আর কোরআনের কথা বলেনি। এ কথা সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠিত যে, মসজিদ ইসলামের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। কারণ, মানবজাতিকে সৃষ্টির পর সর্বপ্রথম তাদের ইবাদতের জন্য আল্লাহ ফেরেশতার মাধ্যমে নির্মাণ করেন পৃথিবীর প্রথম মসজিদ, (আল কোরআন ৩: ৯৬) আল মাসজিদুল হারাম। যার প্রাণকেন্দ্র কাবাগৃহ। এটি মানবজাতির সৃষ্টিরও আগে পৃথিবী সৃষ্টির সূচনা কেন্দ্র। মসজিদ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালার কয়েকটি বাণী নিচে উল্লেখ করা হলো। যার মাধ্যমে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, মসজিদ ইসলামের অপরিহার্য অঙ্গ। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, (আইনগত রেফারেন্সের প্রয়োজনে ও সংশ্লিষ্টদের সুবিধার্থে আয়াতের আরবি প্রতিবর্ণায়ন বাংলাতেও দেয়া হলো, অবশ্য মূল আরবি উচ্চারণই শরিয়তে বিধিবদ্ধ।) ‘ইন্নামা ইয়া’মুরু মাসাজিদাল্লাহি মান আমানা বিল্লাহি ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি ওয়া আক্বামাসসালাতা আতাযকাতা ওয়ালাম ইয়াখশা ইল্লাল্লাহ, ফা আসা উলাইকা আইয়াকুনু মিনাল মুহতাদিন।’ ‘অর্থাৎ তারাই তো আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে, যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, নামাজ কায়েম করে, জাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না।’ (আল কোরআন ৯ : ১৮)।
‘ও মান আযলামু মিম্মান মানাআ মাসাজিদাল্লাহি আইয়াজকুরা ফিহাসমুহু ওসায়া ফি খারাবিহা উলাইকা মা কানা লাহুম আইইয়াদখুলুহা ইল্লা খাইফিনা লাহুম ফিদ্দুনিয়া খিযয়িল্লাহুম ফিল আখিরাতি আযাবুন আযিম।’ অর্থাৎ আর তার চেয়ে অধিক জালেম কে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তার নাম স্মরণ করা থেকে বাধা প্রদান করে এবং তা বিরাণ করতে চেষ্টা করে? তাদের তো উচিৎ ছিল ভীত হয়ে তাতে প্রবেশ করা। তাদের জন্য দুনিয়ায় রয়েছে লাঞ্ছনা আর আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহা আযাব। (আল কোরআন ২ : ১১৪)।
‘লা তাকুম ফিহি আবাদাল লামাসজিদুন উসসিসা আলাত তাকওয়া মিন আওয়ালি ইয়াওমিন আহাক্কু আন তাকুমা ফিহ, ফিহি রিজালুইয়ুহিব্বুনা আইয়াতা তাহ্হারু ওয়াল্লাহু ইয়ুহিব্বুল মুত্বাহহিরিন। ‘(হে নবী) আপনি কখনো সেখানে অবস্থান করবেন না, তবে যে মসজিদের ভিত্তি রাখা হয়েছে তাকওয়ার ওপর সেটি আপনার অবস্থানের অধিক উপযুক্ত। তাতে এমন লোকেরা থাকে যারা পূর্ণাঙ্গ পবিত্রতা পছন্দ করে, আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (আল কোরআন ৯:১০৮)।
মহনবী সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি তৈরি করবেন। আল হাদিস। অন্যত্র মহানবী সা. আরো বলেছেন, ‘একাকী ঘরে নামাজ পড়ার চেয়ে মসজিদে নামাজ পড়ার সওয়াব ২৭ গুণ বেশি। আল হাদিস। নবী করিম সা. এর জীবনে প্রথম ৫৩ বছর তিনি কাবাকেন্দ্রিক জীবন যাপন করেন। মদিনায় হিজরতের পর তিনি প্রথম সেখানে মসজিদে নববী নির্মাণ করেন এবং এ মসজিদকে কেন্দ্র করেই তার দুনিয়ার জীবনের শেষ ১০টি বছর অতিক্রান্ত হয়। এ মসজিদেই হজরত জিবরাইল আ. আসা-যাওয়া করেছেন বেশি। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর মহা রত্মভান্ডার মসজিদভিত্তিক ফসল। অতএব, মসজিদ ইসলামে অপরিহার্য বিষয় নয় এ কথার কোনো অর্থ হয় না। বরং এটি একটি অমূলক দাবি। যার সাথে সত্যের কোনো দূরতম সম্পর্কও নেই। পৃথিবীর যেখানেই ইসলাম গিয়েছে, সেখানে কালেমার দাওয়াত প্রথম, দ্বিতীয় কাজই হচ্ছে আজান ও নামাজ। একাধিক ব্যক্তি যেখানে বাস করে সেখানেই প্রয়োজন মসজিদের। অর্থাৎ মুসলিম সমাজের ভিত্তিমূল হচ্ছে মসজিদ। এটি ইসলামের অপরিহার্য অংশ। খোদ ভারতবর্ষেই অন্তত ১৪০০ বছর যাবৎ মসজিদের ঐতিহ্য রয়েছে। সাহাবি তাবেয়ি যুগের পর থেকে খলিফা আমীর বাদশাহ সুলতান মোগল ব্রিটিশ সকল আমলেই মুসলমান শাসক ও জনগণ মসজিদ নির্মাণ করেছেন। ১৯৪৭ এর পর থেকে পাক-ভারত বাংলাদেশে মসজিদ নির্মাণের গতি আরো বেড়েছে। এখন আকস্মিকভাবে ভারতে উচ্চ আদালত মসজিদের অপরিহার্যতাকে চ্যালেঞ্জ করে যে রায় দিলো তা নিতান্তই ইসলামবিরোধী। নৈতিকভাবে কোনো দেশের শাসক বা বিচারক একটি ধর্মের মৌলিক বিধানকে অস্বীকার কিংবা বিকৃত করতে পারে না। যা ভারতে দেখা যাচ্ছে। এটি কোনো উন্নত বা সভ্য রাষ্ট্রের কাজ হতে পারে না। নিকৃষ্ট ও ক্ষুদ্র মানসিকতার সাম্প্রদায়িক গোঁয়ার্তুমি যেমন কোনো কোনো বিচ্ছিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে নামাজ ও মসজিদ নিয়ে ঝামেলা পাকাচ্ছে, উচ্চ আদালতের ভ‚মিকাও একই চিন্তাপ্রসূত কিনা সেটাও ভাবার বিষয়। ১৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসলামে বিশ্বাসী প্রায় ৪০ কোটি ভারতীয়ের ধর্মীয় ও নাগরিক অধিকার বিপন্ন হয় এমন কোনো রায় যেন উচ্চ আদালত না দিতে পারে সে বিষয়ে সাংবিধানিক কাঠামোকে নিশ্চিত করতে হবে। সভ্য ভারতের কাছে বিশ্ব মুসলিমের এ দাবি খুবই যুক্তিসঙ্গত। বিশেষ করে কোরআন-সুন্নাহ সম্পর্কিত বিষয়ে রায়ের আগে বিচারক যেই হোন, তার নৈতিক কর্তব্য এ বিষয়ে ইসলামী মূলনীতি অধ্যয়ন করা। এ ক্ষেত্রে ইসলামী বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেয়া আদালতের রীতি ও ঐতিহ্যের মধ্যেও পড়ে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
পারভেজ ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১:৫২ এএম says : 2
এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে সকল মুসলমানদেরকে আওয়াজ তুলতে হবে।
Total Reply(0)
লোকমান ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১:৫৩ এএম says : 4
আজকে মুসলীম বিশ্ব এক থাকলে ওরা এমন সাহস পেতো না।
Total Reply(0)
রিমন ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১:৫৪ এএম says : 2
দিনে দিনে ওদের স্পর্দা বেড়েই চলেছে
Total Reply(0)
মোঃ আব্দুল কাদির ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:০০ এএম says : 3
ওরা আবার সভ্য হয় কেমনে
Total Reply(0)
Ab ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৫:২৪ পিএম says : 1
আজকে মুসলীম বিশ্ব এক থাকলে ওরা এমন সাহস , স্পর্দা পেতো না
Total Reply(0)
মো: সাইদুল ইসলাম ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:০৬ পিএম says : 0
আমি পোলার আইসক্রিমের বিক্রয় সহযোগী হতে চাই।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন