বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

রাজধানীতে চোরের উপদ্রব

| প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

রাজধানীর বাসা-বাড়িতে চুরি বেড়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই চুরির ঘটনা ঘটছে। ছিচকে ও গ্রিলকাটা চোরদের উপদ্রবে মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। সংঘবদ্ধ চোরেরা এতই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, চুরির সময় কেউ দেখে ফেললে তাদের আঘাত করতে, এমনকি খুন করতেও দ্বিধা করছে না। সাধারণ মানুষ তো বটেই, ভিআইপি এবং নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বাসা-বাড়ীতে হানা দিতেও তারা পিছ পা হচ্ছে না। সম্প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর মোহাম্মদপুরের বাসার গ্রিল কেটে সবকিছু নিয়ে গেছে চোরেরা। একটি অনলাইন পোর্টালের রিপোর্টারের পাঁচ তালার বাসা থেকে চোরেরা তার মোবাইল ফোন, পাওয়ার বক্স, ক্যাবল, মানিব্যাগসহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নিয়ে গেছে। দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে গত কয়েক মাসে সংঘঠিত বেশ কিছু চুরির ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে মুগদায় চুরির সময় বাধা দেয়ায় দু’জনকে আহত করে মোটর সাইকেল চুরি করে নিয়ে যাওয়া এবং হাজারিবাগে একটি নির্মানাধীন ভবনে চুরির সময় নিরাপত্তা কর্মীকে ছুরিকাঘাত করার ঘটনাও আছে। মোটকথা, চোরচক্রের দৌরাত্ম্য বড় রকমের উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। উল্লেখ আবশ্যক, চুরির সব ঘটনা থানা-পুলিশ পর্যন্ত যায় না। যে সব ঘটনা থানা-পুলিশের গোচরে আনা হয়, তারও অধিকাংশের ক্ষেত্রে মামলা হয় না, হয় জিডি; তারও তদন্ত হয় না ঠিকমতো। অনেক সময় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দিয়েও কাজ হয় না। থানা-পুলিশ চুরির বেশির ভাগ ঘটনার ক্ষেত্রেই কোনো আগ্রহ প্রদর্শন করেনা। পুলিশের অনীহা এবং ঝামেলার ভয়ে অনেকে থানা-পুলিশের স্মরণাপন্ন হতে চায় না। এসব নানা কারণে চোরের উৎপাত না কমে বরং বাড়ছেই।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় পুলিশের নিয়মিত টহলের অনুপস্থিতি এবং চুরির ঘটনায় তেমন কোনো প্রতিকার না পাওয়ার কারণে চোরদের বাড় এতটা বাড়তে পেরেছে। উল্লেখ্য, পুলিশ গত কয়েক মাস ধরে মাদকবিরোধী অভিযানে ব্যস্ত। তদুপরি, সরকারের রাজনৈতিক বিরোধদের ধরপাকড়ের অভিযান তো আছেই। ফলে পুলিশ পাড়া-মহল্লায় নিয়মিত টহল দেয়ার সময় পাচ্ছে না। এই সুযোগে চোররা অধিকতর সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এটা ছিনতাইকারী ও মলমপার্টির দুষ্কৃতীদের জন্যও একটি অভয়-অবস্থা তৈরি করে দিয়েছে। ছিনতাইয়ের ঘটনাসহ অন্যান্য দুষ্কর্মও তাই ক্রমাগত বাড়ছে। রাজধানীর অধিবাসীরা এমনিতেই নানা সমস্যায় জর্জরিত। যানজট ও যাতায়াতের সমস্যা, পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপ, রাস্তাঘাটে অনিরাপত্তা, অপহরকদের ভয়, নিরব চাঁদাবাজি, বখাটে ও উঠতি সন্ত্রাসীদের দুর্বিনীত আচরণ ইত্যাদি তাদের শান্তি-স্বস্তিকে হুমকিতে ফেলে দিয়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর আশ্রয় লাভ ও সহযোগিতা পাওয়া অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এক ধরনের অসহায়ত্ব ও হতাশা তাদের মধ্যে বিস্তার লাভ করেছে। এরকম পরিস্থিতি কোনো বিবেচনাতেই কাম্য হতে পারেনা।

মানুষের জানের নিরাপত্তা সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা। তারপরেই আছে মালের নিরাপত্তা। জানের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা অনেক দিন ধরেই উধাও। গৃহে মালামালের নিরাপত্তাও এখন যেতে বসেছে। মানুষ তবে কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে? জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের। সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃংখলা বাহিনীর এই নিরাপত্তা দেয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, আইনশৃংখলা বাহিনী এই নিরাপত্তা দিতে পারছে না। তাকে নানা কাজে এমনভাবে নিয়োজিত রাখা হয়েছে যে, সেই কাঙ্খিত নিরাপত্তা দেয়া তার পক্ষে সম্ভবপর হচ্ছে না। ডিউটির চাপে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা এতই বিরক্ত ও ক্লান্ত যে, এক ধরনের নিরাসক্তি তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতারও কোনো বালাই নেই। এমতাবস্থায় যা হওয়ার তাই হচ্ছে। ছিচকে ও গ্রিলকাটা চোরদের পর্যন্ত সামলানো সম্ভব হচ্ছে না। ভুক্তভোগীরা মনে করে, পাড়া-মহল্লায় নিয়মিত টহল, চুরির মামলার দ্রুত তদন্ত ও বিচার এবং পুলিশের কাছে তাদের যে তালিকা আছে তা ধরে গ্রেফতার অভিযান চালালে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে পারে। পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, পুলিশ নিয়মিত এলাকায় টহল দিচ্ছে। ছিচকে ও গ্রিলকাটা চোরদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। একটি সমস্যার কথাও বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনো চোরকে একাধিকবার গ্রেফতার করা হয়; কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই তারা ছাড়া পেয়ে একই কাজে জড়িয়ে পড়ে বলে তাদের দমন করতে বেগ পেতে হচ্ছে। এটা আদতেই সমস্যা, না অজুহাত, আমরা জানিনা। যদি সমস্যা হয়, তার সমাধানও পুলিশকেই করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন