শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ওয়ারিশি বণ্টনে শরিয়ত না মানার ক্ষতি

মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ইসলাম ভারসাম্যপূর্ণ দ্বীন। মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণের রক্ষাকবচ এটি। বৈধ পন্থায় অর্জিত ব্যক্তি-মালিকানাকে স্বীকার করে ইসলাম। আবার মালিকানাধীন সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে ইসলামের সুস্পষ্ট নীতিমালা। নিজ প্রয়োজনে খরচের পাশাপাশি পরিবার পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও অন্য আর কাকে কখন কী পরিমাণ সম্পদ দেয়া দরকার তার নির্দেশনাও রয়েছে শরিয়তে। আর সম্পদ রেখে মারা গেলে কারা কী পরিমাণ হিস্সা পাবে তাও শরিয়ত বলে দিয়েছে। আবার কেউ তার সম্ভাব্য ওয়ারিশদেরকে নিজ হাতে কোনো সম্পদ দিতে চাইলে তার সহিহ নীতিমালাও শরিয়ত বাতলে দিয়েছে। এসব নীতিমালা অনুসরণের মাধ্যমেই একটি পরিবার ও সমাজ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের যোগ্য হয়ে থাকে। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, বর্তমানে কিছু কিছু মুসলিম কর্তৃক ঐসব মূল্যবান নীতিমালা ও নির্দেশনা অনুসরণ না করার কারণে সেসব পরিবার ও সমাজ হয়ে উঠে বিশৃঙ্খল ও অশান্তিপূর্ণ। শুধু তাই নয়, বরং সম্পদের মালিক নিজ জীবদ্দশাতেই বিপাকে পড়ে যান অনেক ক্ষেত্রে। সম্প্রতি এ ধরনের কয়েকটি ঘটনা সামনে আসায় এ বিষয়ে কলম ধরার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে।
কেস স্টাডি : হাজী আবুল কাসেম (ছদ্মনাম)। একজন বিত্তবান মানুষ। বেশ কয়েকটি বাড়ি-মার্কেট, ভ‚সম্পত্তি ও নগদ টাকার মালিক। তার ছিল এক ছেলে, দুই মেয়ে। জীবনের শুরুতে তিনি তার সহায়-সম্পদ ছেলের নামে লিখে দেন। অর্থাৎ ছেলেকে দিয়ে দেন। তিনি মৃত্যুবরণ করার পর সম্পদের বণ্টন শরিয়তের দৃষ্টিতে কিভাবে হবে তার জন্য অপেক্ষা না করে নিজেই এ কাজটি করেন। স্ত্রী, মেয়েসহ অন্য কাউকে কিছু লিখে দেননি। কিছুদিন পর যুবক বয়সে অবিবাহিত ছেলের মৃত্যু হয়। তার পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে যায়। এরপর স্ত্রীসহ তার থাকে দুই মেয়ে। তিনি দুই মেয়ের নামে তার সমুদয় সম্পত্তি লিখে দেন। এখানেও তিনি তার মৃত্যুর পর সম্ভাব্য অন্যসব ওয়ারিশকে বঞ্চিত করে শুধু মেয়েদের নামে সম্পদ লিখে দেন। হয়তো তার মনের মধ্যে আশঙ্কা ছিল যে, তিনি মারা গেলে মেয়েরা তার সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ পেলেও কিছু সম্পদের ওয়ারিশ হয়ে যেতে পারে তার ভাইয়েরা। তিনি এটা রুখতে চেয়েছেন বলেই মেয়েদের নামে সব সম্পদ লিখে দিয়েছেন।
তিনি ছিলেন ভাইদের বড়। এর কিছুদিন পর তিনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার চিকিৎসার জন্য টাকা-পয়সার টান পড়ে যায়। মেয়েদেরকে দেয়া সম্পদ তো এখন আর তার হাতে নেই। তিনি নিজের চিকিৎসা চালাতে পারেন না। মেয়েরাও পিতার চিকিৎসার জন্য অর্থ খরচে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তারা পিতার দেয়া অর্থ থেকে কোনোরকম সহযোগিতা পিতাকে করতে সম্মত হয় না। এমনকি পিতার চরম অসুস্থতাকালে ন্যূনতম ভদ্রতা ও সৌজন্যমূলক খোঁজখবরও তারা রাখতে অস্বীকার করে। ফলে সেই বৃদ্ধ হাজী সাহেবকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করানোর দায়িত্ব নেন তার ছোট ভাইয়েরাই। যাদেরকে তিনি ওয়ারিশ হিসেবে বঞ্চিত করার জন্য মেয়েদের নামে সমুদয় সম্পদ লিখে দিয়েছেন। ভাইয়েরাই তাকে বারবার দেশ-বিদেশের হাসপাতালে ভর্তি করছেন এবং খোঁজখবর নিচ্ছেন। এখনো তিনি জীবিত আছেন। চিকিৎসা চলছে। কিন্তু অর্থকড়ির টানাটানির মধ্যে তার দিন কাটছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Add
Kafi Khan ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ৩:৫৬ এএম says : 1
thanks for this writing
Total Reply(0)
Add
Mohammed Kowaj Ali khan ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ৮:১৬ এএম says : 0
ইসলাম শান্তি,ইসলাম মূক্তি,ইসলাম শিফা, ইসলাম রাজনীতি। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
Add
রকিবউদ্দিন আহমেদ ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ১১:৪৬ এএম says : 0
হযরত এর লেখা অত্যন্ত সুন্দর এবং যুগোপযোগী। সামাজিক ক্ষেত্রে আমাদের অনেক সময় এর সম্মুখীন হতে হয় তাই আমরা যদি ইসলামকে সামনে রাখি তাহলে আর কোন সমস্যা হতে পারে না। ওয়ারিশ বন্টন এক ধরনের ভয়াবহ এবং চরম পর্যায়ে মানুষকে নিয়ে যায় আপন দের মাঝে বিবাদ বিধংসী পর্যন্ত সৃষ্টি হয় তাই আমরা যদি কোরান ও হাদিস কে ফলো করি তাহলে আমাদের জীবন সমাজ রাষ্ট্র সর্বোচ্চ শিখর আমরা করতে পারব
Total Reply(0)
Aurangjeb ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ১:০৯ পিএম says : 0
Thanks for writing
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর