বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

রাসূলুল্লাহ সা. এর নূরে হেকমতের ফল্গুধারা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বস্তুত: যেখানে এখতেলাফ বা মতবিরোধ দেখা দেয়, সেখানে প্রকাশ করা ও ঘোষণা করাই যথেষ্ট নয়। বরং সেখানে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের পর মতবিরোধ দূর হয়ে যায়। তাই প্রথমোক্ত আয়াতের ওপর চিন্তা করা দরকার যা এই সূরার অন্য একস্থানে বিধৃত হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে- ‘এবং তোমার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করেছি মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছিল, যাতে তারা চিন্তা করে’। (সূরা নাহল: আয়াত ৪৪)।
তবে এক্ষেত্রে এই প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়া স্বাভাবিক যে, এই আয়াতে ‘বয়ান’ করার অর্থ প্রকাশ করা অথবা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা। আমাদের মতে এখানে প্রকাশ করার পরিবর্তে চিন্তা ও গবেষণার যোগসূত্রের আলোকে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ কথাটি গ্রহণ করাই যথার্থ হবে। কেননা গোপন কাজের প্রকাশ করাকে শ্রবণ করা ও মেনে নেয়ার উপযোগী বলে বিবেচনা করা যায়। কিন্তু একে চিন্তা ও গবেষণা বলে ধরে নেয়া যায় না। চিন্তা ও গবেষণা করার জন্য এক্ষেত্রে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে। শুধু প্রকাশ করা ও ঘোষণা করাই যথেষ্ট নয়।
এক্ষেত্রে যেহেতু আল কোরআনে নির্দেশাবলীর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের ক্ষমতা ও দায়িত্ব মহান আল্লাহপাকের তরফ হতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাক জবানে যে সকল ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ প্রকাশ পেয়েছে তা মূলত: তার নূরে হেকমতের ফল্গুধারা মাত্র। যার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত আমরা আল কোরআনের বিভিন্ন স্থানে পেয়ে থাকি।
মানুষের ভাষা ও শব্দাবলীর মাঝে এই শক্তি ও সামর্থ নেই যে, এগুলোর দ্বারা এমন এক কানুন প্রতিষ্ঠা করা যায় যা একদিকে বুদ্ধি ও বিবেচনার বিরোধ হতে মুক্ত হবে এবং অপরদিকে তার মাঝে এমন এক সঙ্গতি থাকবে যা ভবিষ্যতে সংঘটিতব্য বিষয়াবলীর বিবরণ পূর্ণভাবে বিদ্যমান পাওয়া যাবে।
এরূপ হওয়া মোটেই সম্ভব নয়। কিন্তু আইন ও বিধানের ক্ষেত্রে মানবিক বুদ্ধি ও বিবেচনাপ্রসূত যে সকল মতপার্থক্য ও দুর্বলতা দেখা যায়, তা যদিও সার্বিকভাবে দূর করা যায় না, তবুও এর মাত্রা ও পরিমাণ অবশ্যই কমানো সম্ভব। ইসলাম স্বীয় কানুন ইলাহীর দ্বারা যা মানবমুখের ভাষার সাথে সম্পৃক্ত এই বুদ্ধি-বিবেচনাপ্রসূত ত্রু টিসমূহ দূর করার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যে, রাসূলুল্লাহ সা.-এর জবানের দ্বারা ব্যবহারিক জীবনে আল কোরআনের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে, যদিও মানবিক স্মৃতিশক্তি ও বর্ণনা বিন্যাসের উপকরণাদির ত্রু টি এবং দুর্বলতার দরুন এসকল ব্যাখ্যা নিতে হবে যে, যদি এসকল ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ না পাওয়া যেত, তাহলে বিরোধপূর্ণ বিষয়াবলীর সমুদ্র গভীর হতে গভীরতর হয়ে উঠত।
এজন্য ইসলামে প্রাত্যহিক জীবনের ঘটনার বিক্ষিপ্ত ঘটনাবলীর ফায়সালার দ্বারা এভাবে উন্মুক্ত করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সা.-এর আদালতে প্রত্যহ এ জাতীয় মোকদ্দমা ও ঘটনাবলী পেশ করা হত এবং তিনি ওহীয়ে কিতাবের মৌলিক বিধানের আলোকে দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞা-মণীষার দ্বারা এগুলোর ফায়সালা করতেন। এমনকি খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলেও সদ্য সমুপস্থিত ঘটনাবলীর ও সমস্যাবলীর ফায়সালার জন্য প্রথমত: কিতাবী ওহীকে এবং তারপর রাসূলুল্লাহ সা.-এর ওই সকল ফায়সালা ও সিদ্ধান্তকে মানদন্ড হিসেবে গ্রহণ করতেন যা তার নবুওতী প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা এবং আল্লাহর অনুমোদন মূলত: সম্মতির মাধ্যমে প্রকাশ পেত। আর এটাই ছিল সমস্য সমাধানের মোক্ষম উপায়।
পরবর্তীকালে ফুকাহা ও মুজতাহেদীনে কেরাম এই নিয়মতান্ত্রিকতাকেই গ্রহণ করেছিলেন এবং আংশিক ও বিচ্ছিন্ন ঘটনাবলীর চ‚ড়ান্ত ফায়সালা, কিতাবে ইলাহী ও ফায়সালায়ে নবুবীর সাথে সঙ্গতি রেখে প্রদান করেছেন। যদি তাদের সামনে এমন কোনো সমস্যা পেশ করা হত, যার সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না, অথবা যার উদাহরণ লাভ করা খুবই মুস্কিল। এসকল ক্ষেত্রে তারা সাধারণ ন্যায়-নীতি ও ইনসাফ মোতাবেক এবং উপস্থিত বুদ্ধি-বিবেচনা ও মঙ্গলকর অবস্থার পর্যালোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। এই সিদ্ধান্তসমূহের সমষ্টিকেই বর্তমানে ফিকাহ শাস্ত্র বলা হয় যা শরীয়তের একমাত্র মানদন্ড হিসেবে সুপরিচিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Farid Zaman ১০ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:৩১ এএম says : 1
nice writing
Total Reply(0)
saif ১০ অক্টোবর, ২০১৮, ৯:৩৯ এএম says : 1
আল্লাহ লেখক সাহেব ও ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে এর উত্তম প্রতিদান প্রধান করুন।
Total Reply(0)
Hasan ১০ অক্টোবর, ২০১৮, ১:৩৮ পিএম says : 3
Mashallah Good article
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন