পবিত্র কোরআনে সূরা ‘ইউসূফ’ এ বর্ণিত হজরত ইউসূফ (আ.) এর ঘটনাবলিকে খোদ আল্লাহতায়ালা ‘আহসানুল কাছাছ’ (কাহিনীগুলোর মধ্যে অতি উত্তম) বলে আখ্যায়িত করেছেন। হজরত ইউসূফ (আ.) এর উপর যে সব আপদ আপতিত হয়েছিল এবং তা থেকে তিনি উদ্ধার পেয়ে রাষ্ট্রের উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন তার বিশদ বিবরণ কোরআনে বিধৃত হয়েছে। ঘটনাবলরি মূল কারণও তাতে বর্ণিত হয়েছে।
সে কাহিনী বর্ণনা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, হজরত ইউসূফ (আ.) কেন এ মহাপরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন এবং পরিণতি কী হয়েছিল তাই এখানে বলা হচ্ছে। বিশিষ্ট নবী হজরত ইয়াকুব (আ.) এর একাদশ পুত্রের মধ্যে হজরত ইউসূফ (আ.) ছিলেন দশম এবং পিতার সবচেয়ে আদরের। তাঁর একাদশ ছেলে ছিলেন বিন ইয়ামিন। ইউসূফ ও বিন ইয়ামিন দু’জনই ছিলেন এক মায়ের এবং বাকি ন’জন অপর মায়ের। শৈশবে হজরত ইউসূফ (আ.) তাঁর ঐতিহাসিক স্বপ্নের কথা পিতাকে জানালে তিনি এ স্বপ্নের কথা তার অপর ভাইদেরকে জানাতে নিষেধ করে ছিলেন। কিন্তু তাঁর ভ্রাতারা এ স্বপ্নের কথা কোনো প্রকারে জেনে ফেলেন। আর এটাই হজরত ইউসূফ (আ.) এর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হজরত ইউসূফ (আ.) পিতার অতি আদরের দুলাল হয়ে পড়েছিলেন, স্বপ্নের ব্যাখ্যাও তাদের কাছে অজানা ছিল না। এ কারণেই তিনি ভাইদের হিংসার লক্ষ্যে পরিণত হয়েছিলেন। যার করুণ পরিণতি কেনানের ক‚পে নিক্ষিপ্ত হওয়ার দুঃখজনক ঘটনা।
নবী ঘরানায় এ হিংসাপরায়ণতা হজরত ইউসূফ (আ.) কে নানা কঠিন পরীক্ষায় নিক্ষেপ করলেও তিনি ধাপে ধাপে সব ক্ষেত্রেই উত্তীর্ণ হন এবং সম্মানিত ও রাষ্ট্রীয় উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হন। পক্ষান্তরে তাঁর হিংসাপরায়ণ ভাইয়েরা নিন্দিত, অপদস্ত হন এবং অনুতপ্ত হয়ে পরবর্তীতে ক্ষমাপ্রাপ্ত হন। হজরত ইউসূফ (আ.) তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেন এবং ঘোষণা করেন, ‘লা তাছরিবা আলাইকুমুল ইয়াওমা’। অর্থাৎ- আজ তোমাদের প্রতি কোনো অনুযোগ নেই। এর খোলাসা হচ্ছে, হজরত ইউসূফ (আ.) এর অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত এ বিপর্যয় ছিল তাঁর প্রতি ভাইদের হিংসার এক অপরিহার্য নির্মম পরিণতি এবং এ বিপদে পিতার অসীম ধৈর্য্য (ছবরে জামিল) ও হজরত ইউসূফ (আ.) এর প্রতিশোধ গ্রহণ না করার মানসিকতা এবং প্রতিহিংসাপরায়ণদের প্রতি দয়া, করুণা ও ক্ষমা প্রদর্শন তাকে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী করে।
অপরদিকে হিংসুটে ভাইগণও একপর্যায়ে পিতার ক্ষমা লাভ করেন। এই মর্মে ‘বাল সাওয়ালাত লাকুম নাফসুকুম’ (বাঘে খাওয়ার তোমাদের বানানো মিথ্যা কাহিনী) অবিশ্বাস্য। এ ক্ষেত্রে নবীপুত্র হিসেবে তাদের মর্যাদাকেও ক্ষুন্ন করা হয়েছে। অর্থাৎ হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারীরা লাভবান হওয়ার পরিবর্তে বাস্তবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং যার প্রতি হিংসা প্রদর্শন করা হয়েছিল প্রকৃতপক্ষে তিনিই লাভবান ও আল্লাহর নিকট অসীম মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন। উল্লেখ্য, আমাদের মহানবী (সা:) ও হজরত ইউসূফ (আ.) এর অনুসরণে মক্কা বিজয়ের সময় সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন