মাগুরার শালিখা উপজেলার বিভিন্ন সরকারি খাল ও নদী দখল করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আড়বাঁধ ও সুতের জাল পেতে রেণুপোনা জাতীয় মাছ নিধন করছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী। বন্ধ হচ্ছে না রেণুপোনা নিধন। গত বছরের তুলনায় এ বছর আরো বৃদ্ধি পেয়েছে খাল ও নদীতে এসব আড়বাঁধ ও সুতের জাল পাতা। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে ফটকি ও চিত্রা নদী থেকে কয়েকটি আড়বাঁধ ও সুতের জাল উচ্ছেদ করা হলেও উপজেলার কানুদার খাল, কাজল বিলের খাল, বারাঙ্গার খাল কালিদাস খালির খালসহ প্রায় সকল খালে ও নদীতে প্রভাবশালীরা শতাধিক আড়বাঁধ ও সুতের জাল দিয়ে মা মাছ ধরা অব্যাহত রাখলেও অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কেউ কিছু বললেই ক্ষমতার দাপট দেখায় এসব প্রভাবশালীরা এ অভিযোগ এলাকাবাসীর। শালিখা উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ফটকি ও চিত্রা নদীসহ বিভিন্ন খাল এলাকায় দেখা গেছে, ছানি আড়পাড়ার বাবলু মেম্বর ও গজদুর্বা গ্রামের দাউদ মেম্বর অবৈধ আড়বাঁধ ও সুতের জাল দিয়ে মাছ ধরছে। এ ছাড়াও দীঘলগ্রাম এলাকায় খালের মুখে সুতের জাল পাশাপাশি ফটকি নদীতে আড়বাঁধ দিয়েছে প্রায় ৫২ জন প্রভাবশালী। নদী ও খাল দখল করে আড়বাঁধ দিয়ে দেশীয় জাতীয় রেণুপোনা মাছ ধরছে তারা। কোনো কোনো প্রভাবশালীরা কানুদার খালে আড়বাঁধ দিয়ে মাছ ধরছে। আবার নাঘোসা দেলোয়াবাড়ী ও বারাঙ্গার খালের চার পাশে বেড়িবাঁধ দিয়ে পুকুর তৈরি করে নিয়েছে। একইভাবে বরইচারা টু আসবা গ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত বুরুলের বিল দখল করে সুতের জাল ও আড়বাঁধ দিয়ে মাছ ধরছে তারা। এ ব্যাপারে জমির মালিকগণ কিছু বললে তাদের মামলা হামলাসহ খুন জখমের ভয়ভীতিও দেখানো হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সরকারি দলের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় থেকে আইন অমান্য করে এ ধরনের অপরাধ করে চলেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম রসুলের সাথে কখা বললে তিনি বলেন, উপজেলার ফটকি নদীতে অবৈধভাবে আড়বাঁধ দিয়েছিল গজদুর্বা গ্রামের ইউপি সদস্য দাউদ মন্ডল ও ছানি আড়পাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য বাবলু মোল্যাসহ কয়েকজন ব্যক্তি। অভিযোগের ভিত্তিত্বে অভিযান চালিয়ে আড়বাঁধগুলো ভেঙে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সুতের জালগুলোও জব্দ করে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। উপজেলার প্রত্যেকটি খাল ও নদীতে যেই আড়বাঁধ কিংবা সুতের জাল দিক না কেন, তা অভিযোগ পেলে উচ্ছেদ করা হবে। প্রয়োজনে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে দাউদ মেম্বর ও বাবলু মেম্বরের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, উপজেলা মৎস্য অফিসার নদী খাল থেকে আড়বাঁধের বাঁশ কেটে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই আবার আড়বাঁধ দিয়ে নদী খাল ঘিরে মাছ ধরে। আর সুতের জাল জব্দ করার কয়েক ঘণ্টা পরই আবার পাতা হয়।
এ ব্যাপারে আইন অধিকার বাস্তবায়ন ফোরামের উপদেষ্টা গবেষক শ্রী ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, অভিযান চালিয়ে শুধু আড়বাঁধ উচ্ছেদ কিংবা সুতের জাল জব্দ করলেই হবে না, পাশাপাশি জেল ও জরিমানা করতে হবে। তাহলেই নদী ও খালে কেউ আড়বাঁধ ও সুতের জাল দেয়া বন্ধ হতে পারে। এ ব্যাপারে মৎস্য বিভাগের উদাসীনতা রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন