বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আম্বিয়ায়ে কেরামের মু’জিযাহ

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:০৮ এএম, ১৬ অক্টোবর, ২০১৮

যে সকল কাজ সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম ও সাধারণ জনগণ কর্তৃক সংঘটিত হওয়া অসম্ভব, তা আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত কোনো নবীর মাধ্যমে প্রকাশ করলে তাকে মু’জিযাহ বলে। মু’জিযাহ ‘ইজ্জুন’ শব্দ হতে উদ্ভূত। অর্থ- অক্ষম করা, অপারগ করা, এটি কুদরতের বিপরীত শব্দ। মূলত: মু’জিযা হলো ইজ্জুন এর কর্তন। যিনি অন্যের মধ্যে অক্ষমতা সৃষ্টি করেন। আর তিনি হলেন আল্লাহ। (মিরকাত : খন্ড ২, পৃ. ৫৩০)। দর্তব্য যে, মু’জিযাহ শব্দটি মূলত: আকাইদের পরিভাষা। কোরআন-হাদিসে ইহাকে আয়াত, বুরহান, আলামত এবং দলীল শব্দে প্রকাশ করা হয়েছে। (ক) সূরা আনআম : আয়াত ৩৭; (খ) সূরা নিসা : আয়াত ১৭৫; (গ) সহীহ বুখারী : খন্ড ১, পৃ. ৫০৪; (ঘ) ফাতহুল বারী: খন্ড ৬, পৃ. ৭২১।
কোনো নবীর নবুওতের মৌলিক প্রমাণ হলো, তার সত্তা, তার গুণাবলি ও জনগণের সামনে তার উপস্থাপিত শিক্ষা। এগুলো দেখেই সুস্থ মস্তিষ্ক, জ্ঞানসম্পন্ন মেধা ও ধীশক্তির অধিকারী ব্যক্তি ঈমান আনয়ন করে। আপামর জনসাধারণ যারা বাহ্যিক ও অনুভবযোগ্য নিদর্শনে প্রভাবিত হয়ে থাকে। আল্লাহপাক তাদের জন্য মু’জিযাহ প্রকাশের ব্যবস্থা করে থাকেন। যাদের ভাগ্যে বঞ্চনা ছাড়া আর কিছুই নির্ধারিত নেই, তারা মু’জিযাহ দেখেও ঈমান আনার সৌভাগ্য লাভ করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে- অত:পর আমরা যখন দৃষ্টি করলাম মু’জিযাহ প্রত্যাশীদের প্রতি, দেখলাম তারাই মু’জিযাহ তালাশ করে যাদের ঈমানি শক্তি দুর্বল। অন্যরা মু’জিযার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। বরং তারা রাসূল যে বাণী নিয়ে এসেছেন, তার প্রতি প্রথম আহ্বানেই ঈমান আনে। কেননা, তাদের ঈমানের অংশটি সবল। কাজেই অতি সহজেই তারা নবীর আহ্বানে সাড়া দিতে পারে। পক্ষান্তরে যার মধ্যে ঈমানের কোনো যোগ্যতা নেই, সে মু’জিযাহ প্রত্যক্ষ করেও ঈমান আনয়ন করতে পারে না। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন- আল্লাহ যাকে পথহারা করতে চান, তার বক্ষকে সঙ্কুুচিত করে দেন। তার কাছে ব্যাপারটি এমন কষ্টসাধ্য হয় যেন সে ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করছে। (সূরা আনআম : আয়াত ১২৫)। বস্তুত: কোনো নবীর সত্যতা প্রমাণের জন্য তার হাতে আল্লাহর নির্দেশে কোনো মু’জিযাহ প্রকাশ পাওয়া আসমানি দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। কেননা, আম্বিয়ায়ে কেরামের নবুওয়াতের অকাট্য প্রমাণ হলো তাদের মু’জিযাসমূহ।
মু’জিযাহ এমন কর্ম যা আল্লাহপাক সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম পদ্ধতিতে নবুওয়াতের দাবিদারের হাতে প্রকাশ করে থাকেন। এর দ্বারা তার নবুওয়াতের দাবির সত্যতার স্বীকৃতি দেয়া হয়। এ জাতীয় কাজের বহি:প্রকাশ যেন তার প্রতি আল্লাহপাকের এই উক্তির স্থলাভিষিক্ত ‘তুমি আমার রাসূল, তোমার দ্বারা মু’জিযাহ প্রদর্শন তোমার দাবির সত্যায়ন।’ (আল ইয়াওয়াকিতু ওয়াল জাওয়াহিরু : খন্ড ১, পৃ. ১৫৮)। নবীগণের যে সকল মু’জিযাহ অকাট্য প্রমাণাদি দ্বারা প্রমাণীত তার ওপর ঈমান আনয়ন করা ফরজ। এরূপ মু’জিযার কোনো একটি অস্বীকার করলে মানুষ ইসলামের গন্ডি হতে বের হয়ে যাবে। যেমন- নূহ আ. এর কিস্তির মু’জিযাহ, সালেহ আর এর উটের মু’জিযাহ, ইবরাহিম আ. এর জন্য অগ্নিকুন্ড ফুলবাগিচায় পরিণত করা, দাউদ আ. এর হাতে লোহা মোমের মতো নরম হওয়া, সোলায়মান আ. এর পশু-পাখির ভাষা বুঝা, মানব-দানব তার অধীনস্ত হওয়া, মাসের দূরত্ব ঘণ্টায় অতিক্রম করা, মূসা আ. এর হাতের লাঠি, ঈসা আ. এর বিনা পিতায় জন্মলাভ, জন্মের পরই কথা বলার ক্ষমতা পাওয়া, মাটির পাখিতে ফুঁ দিয়ে জীবিত পাখির মতো উড়িয়ে দেয়া, জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে চক্ষুদান ও সুস্থ করে তোলা। মহানবী সা. এর জন্য কোরআন মাজিদ, মেরাজের ঘটনা রাসূলের হাতে নিক্ষিপ্ত ধূলি তার ঘর বেষ্টনকারী কাফেরদের চক্ষুতে নিক্ষিপ্ত হওয়া ইত্যাদি মু’জিযাসমূহের ওপর ঈমান আনয়ন বাধ্যতামূলক। যে সকল মু’জিযাহ অকাট্য দলীল দ্বারা সাব্যস্ত নয় সেগুলোও সত্য। এগুলোর অস্বীকৃতি কুফরি না হলেও নিশ্চিত ভ্রান্তি ও পথ ভ্রষ্টতা। এতে কোনোই সন্দেহ নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
মামুন ১৬ অক্টোবর, ২০১৮, ৩:১৩ এএম says : 0
লেখাটির জন্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)
saif ১৬ অক্টোবর, ২০১৮, ৯:৪৪ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা লেখক সাহেব ও ইনকিলাব সংশ্লিষ্টদের এর উত্তম প্রতিদান প্রধান করুন। সাক্ষ্যদেই যে, রাসুল (সাঃ) যেমন সত্য তাঁর মোজেজাও তেমন সত্য, উল্লেখিত মোজেজা ছাড়াও আরো অনেক মোজেজা আছে আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ), যেমন মৃত গুহু (এক ধরনের গুইশাপ জাতীইয় প্রানী যা আরবরা বক্ষন করে) কথা বলা এবং সাক্ষ্য দেয়া, শিতের দিনে খাজুর গাছে খাজুর ধরা, মৃত খাজুরের দানা কন্দন করা, বৃক্ষ রাজি তাঁর আহব্বানের কথা শুনে তাঁর কাছে নিজ জায়গা থেকে ছুটে আসা, আমি তো বলি এক জন বিবেক বান ব্যক্তি যদি তাঁর জীবনের এক একটি ঘটনাকে দেখে এবং উপলব্দি করার চেষ্টা করে তবে বুঝতে পারবে তাঁর মহান জীবনের এক একটি মহুর্তই মোজেজার ছেয়েও বড় কিছু। বোঝার জন্যে কেবল ছাই তাঁর প্রতি ঈমান ও অশেষ ভালোবাসা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন