শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কর্ণফুলীর নাব্যতায় ড্রেজিং

পাঁচ বছর পর ক্যাপিটাল ড্রেজিং শুরু চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যয় ২৪২ কোটি টাকা : বাস্তবায়নে নৌ-বাহিনী

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের ধারক কর্ণফুলী নদী মোহনার চ্যানেলে শুরু হয়েছে ক্যাপিটাল ড্রেজিং। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর হচ্ছে কর্ণফুলীতে প্রত্যাশিত এই ক্যাপিটাল ড্রেজিং কার্যক্রম। ‘সদরঘাট থেকে বাকলিয়া চর পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক এ প্রকল্পে ২৪২ কোটি টাকা ব্যয় হবে। অর্থায়ন করা হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) বছর বছর মুনাফালব্ধ নিজস্ব তহবিল থেকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
এই প্রকল্পে শুরুতে বাকলিয়া এলাকা সংলগ্ন কর্ণফুলীর বালি ও মাটি খনন কাজ করা হচ্ছে। সেখান থেকে মোট ৪২ লাখ ঘনমিটার বালি ও মাটি উত্তোলন হবে। সেই পলি-বালি-মাটি দ্বারা হামিদচরে বন্দর কর্তৃপক্ষের জায়গা ভরাটের কাজ চলবে। গত সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ক্যাপিটাল ড্রেজিং শুরু করেছে। প্রায় চার বছরে পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। এর ফলে চবক আশা করছে চট্টগ্রাম বন্দর তথা কর্ণফুলী নদীর পলি-বালি-মাটি জমে ভরাট হয়ে যাওয়া নেভিগেশনাল চ্যানেলের নাব্যতা বা ড্রাফট বৃদ্ধি পাবে। আবারও ভিড়তে পারবে আমদানি-রফতানিমুখী পণ্যবাহী জাহাজ বহর।
পোর্ট-শিপিং সংশ্লিষ্টরা জানান, পাহাড়ি খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীর পার্বত্য অঞ্চলের উজানভাগ থেকে অবিরাম ভাটির দিকে আসছে পলি-বালি ও মাটি। বালি-মাটি জমা হচ্ছে কর্ণফুলী মোহনার তলদেশে। উজানের পলি-বালি সাগরের দিকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অপসারণের হার খুবই কম। আর এই নদীটিই দেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ প্রধান বন্দরের ধারক। বন্দরের নেভিগেশনাল কার্যক্রম তথা স্বাভাবিক জাহাজ চলাচলকে সচল রাখার লক্ষ্যে চ্যানেলের তিনটি অংশে নিয়মিত ড্রেজিং (মেনটেইনেন্স ড্রেজিং) এবং মূল ড্রেজিং বা ক্যাপিটাল ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা করা অপরিহার্য। চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলের তিনটি অংশ হচ্ছে- আউটার বার, ইনার বার এবং গুপ্তা বার।
বঙ্গোপসাগরের কিনারে কর্ণফুলী নদী মোহনার হাইড্রোগ্রাফিক প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগত দিকসমূহের নিরিখে চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলের নাব্যতা সচল ও স্বাভাবিক রাখার জন্য নিয়মিত মেনটেইনেন্স ড্রেজিং এবং মূল ক্যাপিটাল ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা করা অপরিহার্য। কিন্তু বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি, জটিলতার কারণে ড্রেজিং প্রক্রিয়া চালু থাকেনি। এতে করে বন্দরের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে চ্যানেলে ক্রমাগত পলি-বালির স্তুুপ জমে গেছে। যা বন্দরের নাব্যতা হ্রাস করেছে। বন্দরকে নাব্য করে জাহাজ চলাচল প্রক্রিয়াকে সচল করতেই অবশেষে পুরোদমে শুরু করা হয়েছে ক্যাপিটাল ড্রেজিং। প্রসঙ্গত এককালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ড্রেজার বিভাগও ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘সদরঘাট থেকে বাকলিয়া চর পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক এ প্রকল্পটিতে ৪২ লাখ ঘনমিটার বালি-মাটি ও পলিবালি খননের লক্ষ্যে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করেছে ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠান। গতকালও (মঙ্গলবার) যথারীতি ড্রেজিং কাজ চলেছে নগরীর সংলগ্ন বাকলিয়া এলাকায়। নৌবাহিনীর আওতাধীনে ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিঃ ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হল্যান্ড থেকে ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেজার ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করেছে।
এর মধ্যে আছে দুটি আইএইচসি ড্রেজার। এরমধ্যে একটির নাম ‘মিখাইল-১’। অপরটি ‘সাফির-১’। সর্বোচ্চ ১৪ মিটার গভীরতায় এর মাধ্যমে খনন কাজ করা সম্ভব। ৫ কিলোমিটার দূরত্বে খনন করা মাটি ফেলার জন্য ৫শ’ মিলিমিটার ব্যাসের রাবারের এইচডিপিই পাইপ, ফ্লোটার, রাবার হোস পাইপ ইত্যাদি আনা হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর ধারে ড্রেজিং কাজে নিযুক্ত ৩৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য তৈরি করা হয় ‘হাউস বোট’। তাছাড়া সংগ্রহ করা হয়েছে ওয়ার্ক বোট এবং ফাইবারে তৈরি রেসকিউ বোট। কর্ণফুলী মোহনা ও সমুদ্র উপক‚লে আবহাওয়া এখন শান্ত, স্বাভাবিক থাকার সুবাদে ড্রেজিং কাজ এগিয়ে চলেছে।
ক্যাপিটাল ড্রেজিং কার্যক্রম সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সদরঘাট ও সংলগ্ন কর্ণফুলী চ্যানেলের নাব্যতা বাড়বে এবং জাহাজ চলাচল ও বার্থিংয়ের (ভিড়া) জন্য থাকবে পর্যাপ্ত গভীরতা বা ড্রাফট। শাহ আমানত সেতুর আশপাশে ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনার পর সেখানে জাহাজ চলাচলের প্রতিবন্ধকতা দূরীভ‚ত হবে। সর্বোপরি বন্দরে জাহাজ চলাচলে আসবে গতিশীলতা। যা দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যকে আরও সচল করতে সহায়ক হবে।
ইতোপূর্বে ২০১১ সালের ৫ জুলাই কর্ণফুলী নদীর ‘ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও নদীতীর সংরক্ষণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। মালয়েশিয়ার একটি একটি প্রতিষ্ঠান ২২৯ কোটি ৫৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬ টাকা প্রকল্পের কার্যাদেশ পায়। মালয়েশিয়ান কোম্পানি স্থানীয় প্যাসিফিক মেরিন সার্ভিসেস নামক আরেকটি কোম্পানিকে কাজটি গছিয়ে দেয়। তখন থেকেই নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, ঘাপলার অভিযোগ ওঠে এবং সৃষ্টি হয় জটিলতা ও অচলাবস্থা। যা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ড্রেজিংয়ের মতো অত্যাবশ্যকীয় সমস্যা যেই তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই পড়ে থাকে। অবশেষে সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় বহুল প্রত্যাশিত ক্যাপিটাল ড্রেজিং কার্যক্রম দৃশ্যমান হলো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন