কাছাকাছি সময়ে এ ক’বছর মুসলমানদের ঈদুল আযহা-কোরবানি এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়েছে। বর্তমানে শুধু রাজধানী ঢাকাই নয় বরং পুরো বাংলাদেশজুড়েই পূজার আয়োজন চলে মহা-সমারোহে। প্রস্তুত হয় হাজার হাজার পূজামন্ডপ।
এবার মন্ডপের সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজারেরও বেশি। মোট মন্ডপ ৩০ হাজারের ওপর। এসকল মন্ডপে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই ভিড় করে না। বরং বহু মুসলমানও যায় পূজা দেখতে, কেউবা আনন্দ উপভোগ করতে। আর বেশি যান নেতানেত্রীরা। ছোট থেকে সর্বোচ্চ স্তরের নেতানেত্রীগণও যান। অথচ কয়েক বছর আগেও দৃশ্যপট এমন ছিল না। এদেশের হিন্দুগণ তাদের এই ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন বহু বহু বছর থেকেই। তখন তা সীমিত থাকত ঢাকেশ্বরী মন্দির ও নির্দিষ্ট কিছু মন্দির-মন্ডপ পর্যন্ত। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের একান্ত ধর্মীয় বিষয় বলে মুসলমানরা সেখানে যেতো না। সরকারি-বেসরকারি মুসলিম নেতাদের উপস্থিতিও ছিল কম। কিন্তু বিগত কয়েক বছর থেকে যেভাবে পূজো উদযাপন হচ্ছে এবং সর্বপ্রকারের মিডিয়ায় যেভাবে এর প্রচার-প্রচারণা হচ্ছে তা সম্পূর্ণই ভিন্ন। এখন পূজার সময় মনে হয় না, এটি এদেশের ছোট্ট একঅংশ নাগরিকের একটি উৎসব। যেমন ছোট ছোট আরও বহু ধর্মের নাগরিক এদেশে আছে। মুসলিম আছে প্রায় ৯২ ভাগ। চলমান অবস্থা দেখে মনে হতে পারে এ যেন হিন্দু-প্রধান একটি দেশ।
সে যাই হোক। পূজা যাদের, তারা সেটা নিরাপদে আর আনন্দেই পালন করুক। এসমস্ত পূজামন্ডপে গিয়ে কিংবা পূজাকেন্দ্রিক কোনো উৎসবে উপস্থিত হয়ে জাতীয় নেতাদের কেউ কেউ বিভিন্ন নীতিবাক্য ও উপদেশও উচ্চারণ করে থাকেন। সংখ্যালঘুরা যেন এদেশে বুক ফুলিয়ে চলতে পারেন, তারা যেন তাদের সব অধিকার নিজেরাই আদায় করে নেন- সেসব কথাও বলা হয়। বলা হয় তাদেরকে দেয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা এবং তাদের পাশে যে এ দেশের নেতারা সজাগ ও সক্রিয় আছেন- সেকথাগুলোও তারা বলেন। এরই সঙ্গে সম্প্রতি তারা আরেকটি কথাও বলতে শুরু করেছেন। সেটি হচ্ছে, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’ কোনো কোনো নেতা বলেছেন, ধর্ম সম্প্রদায়ের উৎসব সকলের। আমাদের আলোচনায় আমরা পূজাকেন্দ্রিক উৎসব নিয়ে নেতাদের মুখে উচ্চারিত এ দুটি বাক্য কিংবা এ দুটি বাক্যের মূলকথা বা নির্যাস নিয়েই কিছু আরয করতে চাই। শুরুতেই আমাদের নিবেদন হচ্ছে, যেহেতু এসব পূজা-উৎসব কিংবা অপর ধর্মীয় কোনো বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রটিতে ঈমানের প্রশ্ন জড়িত, তাই এ বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষণটি শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে হওয়াই প্রয়োজনীয়। অন্য কোনো রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক তত্ত্ব কিংবা ভাবাবেগের সাহায্য এক্ষেত্রে গ্রহণ করা সমীচীন নয়। সে হিসেবে প্রথমেই আমরা যে কথাটি পেশ করতে চাই সেটি হচ্ছে, সাধারণ যুক্তিতে কিংবা শরীয়তের আলোকে এই বাক্য দুটিকে বাস্তবসম্মত বলে সাব্যস্ত করা যায় না। কারণ, বিগত কয়েক বছর যাবৎ আমরা এই যে কথাটা শুনছি, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এটি কেবল পূজার সময়ই এবং পূজাকে উপলক্ষ করেই বলা হচ্ছে। মুসলমানদের কোনো উৎসব নিয়ে এ জাতীয় বাক্য উচ্চারিত হতে শোনা যায়নি। আর পূজার বিষয়টি সম্পূর্ণই ধর্মীয় বিশ্বাসনির্ভর। যা সংশ্লিষ্ট ধর্মের লোকেরা তাদের নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস ও নীতির ভিত্তিতে করে থাকে। এ উপলক্ষে তাদের যে উৎসব-আনন্দ সেটি সম্পূর্ণই পূজাকে কেন্দ্র করে। পূজাকে কেন্দ্র করে ‘প্রতিমা’ তৈরি করা হয়। প্রসাদ বিতরণ করা হয়। বহু রকম কেনাকাটা ও আয়োজনের সমারোহ চালানো হয়। এভাবেই পূজাকেন্দ্রিক মহা এক উৎসবের ব্যবস্থা হয়। সুতরাং এ উৎসব-আনন্দ আর ধর্মীয় বিশ্বাস প্রত্যেকটাই একটা অপরটার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই এখানে উৎসব-আনন্দের বিষয়টিকে পৃথক করে দেখা এবং পূজার বিষয়টিকে পৃথক করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়গুলো আসলে পৃথক নয়। আগে মন্ডপ ছিল দুইভাগ। একভাগ উচ্চবর্ণের হিন্দুদের, আরেকভাগ নিম্ন বর্ণের অচ্ছ্যুত হিন্দুদের। অচ্ছ্যুতরা বা অস্পৃশ্যরা সব মন্ডপে যেতে পারত না। পরে একসময় কোনো কোনো জমিদার এমন মন্ডপ চালু করলেন, যেখানে সব জাতের হিন্দু যেতে পারে। এর নাম সার্বজনীন দুর্গাপূজা। কোনো অজ্ঞ ব্যক্তি যেন এ কথা মনে না করে যে, একটি দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব সার্বজনীন হওয়ার অর্থ হলো এতে মুসলমানরাও অংশ নিতে পারবে। অন্য ধর্মের লোকেদের সাথে মানবিক ও সামাজিক সদাচরণ ইসলামে স্বীকৃত। তবে তাদের পূজা অর্চনায় আর্থিক, দৈহিক, মানসিক, নৈতিক ইত্যাদি কোনোরূপ অংশগ্রহণ জায়েজ নেই। এমন করা মুসলমানের জন্য হারাম। কারণ, তাওহীদের বিশ্বাসী মুসলমান শিরক মিশ্রিত ধর্মের বিশ্বাস ও ইবাদতে অংশ নিতে পারে না। যেমন ‘দুর্গোৎসব’, বড়দিনে যীশু খৃষ্টের ‘জন্মোৎসব’ ইত্যাদিতে শরিক হলে ঈমান থাকবে না। কারণ, মুসলমানদের বিশ্বাস আল্লাহর কোনো সন্তান নেই। তাহলে আল্লাহর পুত্র যীশুর ‘জন্মোৎসব’ অন্য ধর্মের জন্য উৎসব হতে পারে, তাওহীদে বিশ্বাসী মুসলমানের জন্য এটি উৎসব তো নয়ই বরং ঈমান হারানোর বিপজ্জনক পথ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন