রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ঈদ উৎসবও সবার হওয়া সম্ভব নয়

মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:০৮ এএম, ১৮ অক্টোবর, ২০১৮

মুসলমানদের ঈদুল আজহায় ঈদের নামাজ ও কোরবানি, প্রধান দুটি কাজ। এই দুই কাজের ওপর ভিত্তি করেই আনন্দ-উৎসব করা হয়। তাই ঈদুল আজহার আনন্দ-উৎসবকে ঈদের নামাজ ও কোরবানি থেকে পৃথক করে দেখার সুযোগ নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে যে ব্যক্তি ঈদের নামাজ ও কোরবানি করবে না (ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও), তার জন্য কোনোক্রমেই ঈদুল আজহার আনন্দ-উৎসব করার অধিকার নেই।
সে হিসেবে ঈদুল আজহার ব্যাপারে এখন কেউ যদি বলে, ধর্মীয় কাজগুলো মুসলমানদের হলেও এ উৎসবটা সকলের, স্পষ্টতই তা বাস্তবসম্মত হবে না। তাই তো কোনো ঈদের জামাতের আশেপাশে বা জাতীয় ঈদগাহ ইত্যাদিতে ব্যাপকভাবে কোনো হিন্দু ধর্মাবলম্বী বা অন্য ধর্মের লোকদের সমবেত হতে দেখা যায় না। ব্যাপারটা আরো পরিষ্কার করে বোঝার জন্য ঈদুল আজহা নিয়ে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মানসিক অবস্থা বিচার করলেও যথেষ্ট হবে। তাদের কাছে গরু হলো পবিত্র পশু। এই গরু নিয়ে কত করুণ কান্ডই না ঘটে যাচ্ছে আমাদের প্রতিবেশী হিন্দু-প্রধান দেশে। সেখানে ক্ষমতাশালী লোকদের হাতে নিহত, নিগৃহীত হচ্ছে সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজ; শুধু গরুর গোশত রাখার অপরাধে বা অভিযোগে। এ হচ্ছে গরু সংক্রান্ত হিন্দুদের বিশ্বাস। অপর দিকে, মুসলমানরা সেদিন গরু জবেহের মাধ্যমে আল্লাহর হুকুম পালন করে আনন্দ করে থাকে। তা হলে দেখা যাচ্ছে, মুসলমানদের এই আনন্দের দিন ও উৎসবটা হিন্দুদের জন্য আনন্দের নয়। অপর দিকে, আমাদের জন্য ঠিকই আনন্দের। উট-দুম্বা-ছাগল-ভেড়া-মহিষ কোরবানির সুযোগ থাকলেও পাক-ভারত উপমহাদেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোরবানি দেয়া হয় গরু। এ জন্য এতদঞ্চলে কোরবানির ঈদকেও ‘বকরিদ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয। এখানে ‘বকর’ মানে গরু। এতে এ বিষয়টি স্পষ্ট হলো যে, এক ধর্মাবলম্বীদের ধর্মভিত্তিক উৎসবকে অন্য ধর্মাবলম্বীদের উৎসব হিসেবে সাব্যস্ত করা যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না।
এ বিষয়ে মৌলিক ও দ্বিতীয় আরেকটি কথা হচ্ছে, ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের কথা বা আক্বীদায় বিশ্বাস করার কোনো সুযোগই নেই। কারণ, ঈমান ও ইসলাম হচ্ছে একক ও নিরঙ্কুশ বিষয়। এখানে কোনো প্রকারের মিশ্রণের ন্যূনতম সুযোগ নেই। আমরা যদি আমাদের দুই ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার পটভ‚মির দিকে তাকাই, তা হলে বিষয়টি আমাদের সামনে আরো স্পষ্ট হয়ে যাবে। মদিনায় ইসলামপূর্বে দু’টি উৎসব চালু ছিল। নওরোজ (বর্ষবরণ) ও মেহেরজান (নবান্ন উৎসব) নামে। সাহাবিগণ ওই দুটি উৎসব পালন করতে চাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পালনের অনুমতি দেননি। বরং এর উত্তম বিকল্প হিসেবে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র দুটি ধর্মীয় উৎসব- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উপহার দিয়েছেন। এ থেকে এ সত্যটি অনুধাবন করা যায় যে, যদি মুসলমানদের জন্য অন্যদের উৎসব পালন করার সুযোগ থাকত; তাহলে তিনি ওই উৎসব পালন করা থেকে সাহাবিদের বিরত করতেন না।
এ ক্ষেত্রে আরেকটি উদাহরণ আমরা গ্রহণ করতে পারি। সেটি হচ্ছে- ১০ মুহাররম বা আশুরার রোজা। ইহুদিদের সাথে যেন সামঞ্জস্যপূর্ণ বা সাদৃশ্যপূর্ণ না হয়ে যায় সে জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার রোজার সাথে আগে কিংবা পরে আরো একটি রোজা রাখতে বলেছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্ন ধর্ম বা ধর্মানুসারীদের সাথে সাদৃশ্য বা সামঞ্জস্য হওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ হাদিস শরিফে বারবার দেয়া হয়েছে। ইহুদিদের সাথে সামঞ্জস্য অবলম্বন না করতে কিংবা ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে বিভিন্নভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হাদিস শরিফে বেশ কিছু ক্ষেত্রে (ইহুদিদের সঙ্গে ভিন্নতা অবলম্বন করো, মুশরিকদের কাজকর্মের সাথে ভিন্নতা অবলম্বন করো) বাক্যটি ধ্বনিত হয়েছে। নামাজে আহ্বানের ক্ষেত্রে ইহুদি, নাসারাদের ঘণ্টা বাজানো ও সিঙ্গায় ফুঁঁ দেয়ার প্রথা গ্রহণ না করা, অগ্নি উপাসকদের মতো দেখা যাবে অগ্নি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে নামাজে আহ্বান নিষিদ্ধ হওয়া, অভিবাদনের ক্ষেত্রে মাথা ঝোকানো, কুর্ণিশ করা, হস্ত উঠানোর বিকল্প হিসেবে সালাম গ্রহণ করা, সপ্তাহের পবিত্র দিন হিসেবে শনি, রবির পরিবর্তে জুমাবারকে গ্রহণসহ এ ধরনের বহু ক্ষেত্র বিদ্যমান, যেখানে ইসলামের আচরণকে অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে পৃথক ও স্বতন্ত্র করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
রুবেল ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ৫:০৩ এএম says : 0
ইসলামের প্রতিটি বিধান আমাদেরকে মানতে হবে।
Total Reply(0)
সুফিয়ান ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ৫:০৪ এএম says : 0
লেখক ও দৈনিক ইনকিলাবকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
Abul Kashem ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ৯:৩০ এএম says : 0
পূজায় গযব নাজিল হয় ============ হযরত উমার বিন খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন: “তোমরা মুশরিকদের উপাসনালয়ে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে প্রবেশ করো না।। কারণ সেই সময় তাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হতে থাকে।।” [বায়হাক্বী] আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়্যিম এই সনদকে সহিহ বলেছেন।। সূত্রঃ ‘আহকামুল জিম্মাহ ১/৭২৩-৭২৪।। ফক্বীহদের মতে এমন কাঠামোতে যেখানে আল্লাহ ভিন্ন অন্য কোন কিছুর উপাসনা করা হয় সেখানে প্রবেশ করা কঠিন ভাবে নিষিদ্ধ।। দ্রষ্টব্যঃ রাদ্দুল মুহতার-১/৩৮০।। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যে কেউ কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্যতা ধারণ করলো, সে তাদের-ই অন্তর্ভুক্ত।। সূনান আবু দাউদ- ৪/৪৪।। . তাদের পূজার উৎসবে শুভেচ্ছা জানানো, তাদের সাথে সাদৃশ্যতা।। কেননা তারাও একে অপরকে শিরক-কুফরের অনুসারী হওয়ার কারণেই শুভেচ্ছা জানায়, আনন্দ করে।। . এছাড়া, অপর ধর্মের উৎসবের স্বীকৃতি দেয়া মানে- তার সেই শিরক বা কুফরের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা অথবা কমসে কম তার সেই শিরক বা কুফরের উপর থাকাতে খুশী প্রকাশ করা।। একজন মুসলিম কখনোই শিরক বা কুফরের ঘটনায় সন্তুষ্ট হতে পারে না।।
Total Reply(2)
Mmtajul islam ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:২৯ পিএম says : 4
Thanks lot of
Harun ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ২:৫৯ পিএম says : 4
Thanks inqilab and Abul Kashem vai
KAMRUL ISLAM BEG ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:১৯ পিএম says : 0
Islam is my best compliments
Total Reply(0)
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:২৪ পিএম says : 0
এ ধরনের লেখা ইমানকে মজবুত করে।ধন‍্যবাদ লেখক প্রকাশক আর সকল পাঠককে
Total Reply(0)
Ibrahim ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ২:৫১ পিএম says : 0
যদি মুসলমানদের জন্য অন্যদের উৎসব পালন করার সুযোগ থাকত; তাহলে তিনি ওই উৎসব পালন করা থেকে সাহাবিদের বিরত করতেন না।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ২:৫৭ পিএম says : 0
কোরআন ও হাদিসের দেখানে পথে আমাদের চলতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন