সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা করা ছিল মস্ত বড় ভুল। সউদী আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের সাংবাদিক ব্রেট বাইয়েরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা স্বীকার করে বলেছেন, তবে এই খুনের ব্যাপারে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জড়িত নয়।
এদিকে, তুরস্কে সউদী দূতাবাসে খুন হওয়ায় খাশোগির ছেলেকে ফোন করে সমবেদনা জানিয়েছেন সউদী বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। সোমবার সউদী সরকারকে উদ্ধৃত করে এই তথ্য জানায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
সউদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সউদী আরব মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত করছে। তাকে হত্যায় জড়িত ১৮ ব্যক্তিকে যথাযথভাবে শাস্তি দেওয়া হবে। খুনের ঘটনায় দায়ীদের খুঁজে বের করতে এবং শাস্তি দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কর্তৃপক্ষের জ্ঞাতসারে তারা এটি করেননি। অবশ্যই এর মাধ্যমে তারা মারাত্মক ভুল করেছে। পরে তারা সেই ভুলকে আবার ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাও করেছে। তিনি আরও বলেন, তারা জানতো না খুনের পর তাকে কোথায় ফেলা হয়েছে। তাছাড়া যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশেও তারা এ কাজ করেননি। এমনকি শীর্ষ গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ দুর্বৃত্তদের কর্মকান্ড সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না।”
আল-জুবায়ের বলেন, “খুনের অপারেশনে জড়িত ব্যক্তিরা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাদের যে দ্বায়িত্ব, সেটির বরখেলাপ করেছেন।”
বারবার অস্বীকার করে আসলেও শুক্রবার খাশোগির হত্যাকান্ড সম্পর্কে স্বীকার করেছে সউদী কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনায় জড়িত ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে বলেও দাবি তাদের।
ঘটনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সউদী আরবকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়ী করেনি তুরস্ক। তুর্কি তদন্তকারীরা বলে আসছেন, তাদের কাছে অডিও ও ভিডিও প্রমাণ আছে, যেখানে দেখা গেছে কনস্যুলেটের ভেতরে সউদী এজেন্টদের একটি দল খাশোগিকে হত্যা করছে। তুর্কি পুলিশ ইস্তানবুলের পার্শ্ববর্তী বেলগ্রাড জঙ্গলে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, খাশোগিকে হত্যার পর তার মরদেহ জঙ্গলে পুঁতে ফেলা হয়েছে। সউদী কনস্যুলেট ভবন ও সউদী কনসাল জেনারেলের বাসায়ও অভিযান চালানো হয়েছে।
এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন খাশোগির প্রেমিকা হ্যাতিস চেঙ্গিজ। আর এ কারণে হ্যাতিসকে ২৪ ঘণ্টা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিতে যাচ্ছে তুর্কি সরকার। এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে ফক্স নিউজ জানায়, ইস্তাম্বুল গভর্নর কার্যালয় থেকে এ সম্পর্কিত এক নির্দেশনা দেওয়া হয়। আর সেখানে বলা হয়েছে, সাংবাদিক খাশোগির প্রেমিকা হ্যাতিস চেঙ্গিজকে নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। মূলত এই নির্দেশনার ফলেই ইস্তাম্বুল পুলিশ ডিপার্টমেন্ট তাকে নিরাপত্তা প্রদান করবে।
এদিকে, তুরস্ক প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পে এবং এরদোয়ানের মধ্যে একটি ফোনালাপ হয়। যেখানে দুই নেতাই খাশোগি হত্যার সবরকম বিষয় খোলাসা করার ব্যাপারে একমত প্রকাশ করেন। সূত্র: ফক্স নিউজ, বিবিসি।
খাশোগির অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার:
মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টে নিহত সাংবাদিক খাশোগির একটি অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার শনিবার প্রকাশ করেছে। সেখানে খাশোগি বলেছিলেন, ‘আমাদের নেতারা ভাবেন, তারাই সব জানেন। আর আমরা শুধু প্রতিবন্ধকতা তৈরি করি।’
কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াশিংটন পোস্টের কার্যালয়ে বৈশ্বিক মতামতবিষয়ক সম্পাদক (গ্লোবাল ওপেনিয়ন এডিটর) কারেন আতিয়াহর সঙ্গে একটি ধারণকৃত আলোচনায় অংশ নেন সউদী সাংবাদিক খাশোগি। তিনজনের সেই আলোচনায় আরও ছিলেন ওই বিভাগের ইরানবিষয়ক মতামত লেখক ইরানি সাংবাদিক জেসন রেজাইয়ান, যাকে ইরানের কারাগারে ৫৪৪ দিন বন্দী থাকতে হয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্য, সউদী আরব ও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ব্যাপারে বিশদ আলোচনা হয় তাদের মধ্যে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে খাশোগি বলেন, “এমনকি কিছু মানুষ যারা আমার লেখার সঙ্গে অমত প্রকাশ করেন না, তারাও আমাকে বলবেন, এটা বলার জন্য এখন সঠিক সময় নয়। আমরা গণতন্ত্র থেকে অনেক দূরে। আমেরিকা, ফিনল্যান্ড ও ডেনমার্কের গণতন্ত্রে, নেতারা নত হন। এটা একজন নেতাকে সড়কে চলা একজন ক্ষুদ্র মানুষের প্রতিও দায়বদ্ধ করে। আমাদের নেতারা? না। আমাদের নেতারা নিজেদের এমন ভাবেন যে, তারাই সব জানেন এবং আমি ও জেসনের মতো মানুষ শুধু তাদের সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করি।”
খাশোগিকে নিয়ে এক টুইট পোস্টে সম্পাদক কারেন আতিয়াহ বলেছেন, “তারা হয়তো আমার বন্ধুকে নীরব করে দিতে পেরেছে, কিন্তু তার শব্দকে তারা হত্যা করতে পারবে না...।”
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন