খুলনায় স্বামী-স্ত্রী ও কন্যাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার কোনো কূল কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। হত্যাকান্ডটি জটিল ধাঁধার মত হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশের কাছে। সোমবার দিবাগত গভীর রাতে ঘটে যাওয়া এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে ৪ জনকে প্রাথমিকভাবে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেও উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য বের হয়নি। এদিকে, আজ বুধবার বাদ মাগরিব নিহত তিনজনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সকালে জেলার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের বামিয়া গ্রামে পুকুর থেকে বাবা-মা ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া কন্যা শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন হাবিবুর রহমান (৩৬), তার স্ত্রী বিউটি খাতুন (২৬) ও একমাত্র মেয়ে সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী হাবিবুন্নাহার টুনি (১৩)।
নিহত হাবিবুর রহমান পেশায় দিনমজুর ছিলেন। স্বচ্ছল না হলেও তিনি অভাবী ছিলেন না। নিহত পরিবারটির সাথে এলাকায় কারো তেমন কোনো বিরোধ ছিল না, যা থেকে হত্যাকান্ড ঘটতে পারে। ধর্ষণ বা ডাকাতির কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। হত্যাকান্ডের স্থান অর্থাৎ নিহত হাবিবুর রহমানের বাড়ির খুব কাছাকাছি অন্য কোনো বাড়ি নেই। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এলাকার কেউ জানাতে পারেনি ওই রাতে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে বাড়ির আশেপাশে দেখা গেছে কি না। ধস্তাধস্তি বা তিনটি লাশ পুকুরে ফেলে দেয়ার শব্দও কেউ পাননি। পুরো বিষয় পর্যালোচনা করে বোঝা যাচ্ছে, হত্যাকান্ডটি সুপরিকল্পিত।
আজ বুধবার রাতে এসকল তথ্য জানিয়ে কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম হত্যাকান্ডটি খুবই রহস্যজনক। হাবিবুর রহমান ও তার শিশু কন্যা টুনির শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আর স্ত্রী বিউটি খাতুনকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন দিক সামনে রেখে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি দ্রুত হত্যাকারীদের ধরতে পারব। ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধারসহ প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত হাবিবুর রহমানের মা কোহিনুর খানম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামী করে মামলা করেছেন। নিহত হাবিবুর রহমানের প্রতিবেশী একটি পরিবারের সুলতানা (২৫), নাঈম (২২), জিয়া (২৭) ও কিবরাল (৩০) নামে ৪ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
বাগালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী বলেন, যে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে, তারা খুবই সোজা-সরল প্রকৃতির মানুষ। তবে কি কারণে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে এ সম্পর্কে কেউ কোনো তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি।
এলাকার কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাস দুয়েক আগে স্থানীয় একজন মহিলা নিহত হাবিবুর রহমানকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছিল। তার পরকিয়া সম্পর্ক দেখা ফেলার জের ধরে শত্রুতার সৃষ্টি হয়েছিল।
খুলনা জেলা পুলিশের এএসপি (ডি সার্কেল) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, অচিরেই হত্যাকান্ডটির ক্লু ও মোটিভ উদ্ধার করতে পারব বলে আমরা আশা করছি।
এদিকে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামে বাবা-মা ও মেয়ের লাশে আজ বুধবার মাগরিব বাদ দাফন করা হয়েছে। বাগালী ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন