বাংলাদেশের শতকরা ৯২ ভাগেরও বেশি মুসলমান। তাদের জন্য আল্লাহর দেয়া আইন-ই প্রধান আইন। সাময়িক প্রয়োজনে তাদের জন্য যদি কোনো বিধি-বিধান তৈরির দরকার হয়, তা হলেও তা শরিয়তের মূল নীতির আলোকেই হতে হবে। কোনো মুসলমানই শরিয়তের আইন অমান্য বা অস্বীকার করতে পারে না।
আল্লাহ ও রাসূলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারে না। দীর্ঘ দেড় হাজার বছরের মধ্যে তেরশ’ বছর যাবতই বাংলাদেশের মুসলমান শরিয়তের আইন মানার সুযোগ পেয়েছে। মুসলিম শাসন ধ্বংস করে ব্রিটিশ খ্রিস্টানরা বাংলাদেশের শাসনক্ষমতায় এলে মুসলমানরা শরিয়তের আইন থেকে বঞ্চিত হয়। বিগত দুইশ’ বছর যাবতই সারা বিশ্বের মুসলমানরা এ সমস্যায় ভুগছে। বিশ্বব্যাপী ব্রিটিশ খ্রিস্টানদের আইন, বস্তুবাদী পশ্চিমাদের সংস্কৃতি, তাদের ধর্মবিবর্জিত রাষ্ট্র ও বিচারব্যবস্থা পৃথিবীর মুসলমানদের বিশ্বাস ও চেতনাকে ধুলিস্যাৎ করে দিচ্ছে। বাংলাদেশে যেমন মুসলমানরা নানা ক্ষেত্রে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শরিয়ত পালন করতে পারছেন না, দুনিয়ার অন্যান্য দেশে মুসলমানদেরও একই অবস্থা। ইংরেজদের ১৯০ বছর শাসনকাল শেষ হলেও এ দেশের মানুষ তাদের ধর্মীয় অধিকার ফিরে পায়নি। পাকিস্তানের ২৪ বছর এ দেশে শরিয়তের আইন পালনের সুযোগ মুসলমানদের হয়নি। বাংলাদেশের ৪৭ বছরেও প্রায় একই অবস্থা। পাকিস্তান আমলে মুসলিম পার্সনাল ল’ বিকৃত করে আইয়ুব খান নতুন মুসলিম আইন জারি করে। যা শরিয়তের অবমাননা ছাড়া আর কিছুই নয়। বাংলাদেশেও শাসকরা নির্বিচারে শরিয়তের আইন ভঙ্গ করে নতুন নতুন বিধান তৈরি করতে দ্বিধা করেনি। স্বাধীন দেশে ৯২ ভাগ মুসলমান তাদের ধর্মীয় অধিকার পাবে এটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু এক শ্রেণির নামধারী মুসলমানের অজ্ঞতা ও জেদের কারণে শরিয়তের আইন এখানে অবহেলিত। বাংলাদেশে গণভোট দেয়া হলে প্রায় সকল মুসলমান শরিয়তের আইন চালুর পক্ষে রায় দেবে। যারা দেবে না ইসলামি মতে তারা আর মুসলমান থাকে না। তা ছাড়া শরিয়তের আইনে যারা ভীতসন্ত্রস্ত তাদের দুই অবস্থা-
এক. এরা নিজেরাই পাপাচার, দুর্নীতি ও অপরাধে লিপ্ত। শরিয়া আইন চালু হলে তারা শাস্তি পাবে বলে এ আইনের বিরোধিতা করে।
দুই. আরেক দল শরিয়া আইন সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখে না। তারা কেবল খুন, ব্যভিচার, ও চুরির সাজাকেই শরিয়তের আইন বলে মনে করে। কিন্তু ইসলামি সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় যে এসব অপরাধ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পূর্বব্যবস্থা মজুদ রয়েছে এবং সুশাসন, ন্যয়বিচার, সামগ্রিক সংস্কার ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজ কলুষমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ করাই যে ইসলামের প্রধান কাজ; তা তারা জানার সুযোগ পায়নি। সম্পূরক ব্যবস্থা হিসেবে যে কটি শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে দুশমনরা শুধু সেগুলোই মানুষের সামনে আলোচনা ও চর্চা করে থাকে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের আইন নিয়ে ছিল ব্যাপক অস্থিরতা। আমেরিকার একটি জরিপ প্রতিষ্ঠান বলেছে যে, বাংলাদেশের শতকরা ৮৮ ভাগ মুসলমান শরিয়া আইন পছন্দ করে। এটি অমুসলিমদের গবেষণা। মূলত প্রকৃত মুসলমানদের ১০০ ভাগই শরিয়া আইন চায়। যারা চায় না তারা হয় প্রকৃত মুসলমান নয় নতুবা ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখে না কিংবা ব্যক্তিগতভাবে পাপাচার ও অপরাধে জড়িত। এদের ব্যাপারে শরিয়তের সহনশীলতা ও কল্যাণপূর্ণ নীতি বিদ্যমান। আন্তর্জাতিক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশ বিশ্বের সেরা বাল্যবিবাহের দেশ। এ নিয়ে বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্র, সংস্থা ও দাতা প্রতিষ্ঠান খুবই উদ্বিগ্ন। এ উদ্বেগে বাংলাদেশের দায়িত্বশীলরাও ভীষণভাবে আক্রান্ত। অথচ এ বিষয়ে ৯২ ভাগ মুসলমানকে ইসলামের আলোকে পথ প্রদর্শনই সরকারের দায়িত্ব। সংবিধান, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার এটাই বলে। যারা এ দেশকে বাল্যবিবাহের দেশ বলে হেয় করছে, তাদের সমাজেও বাল্যবিবাহ প্রচলিত আছে। শুধু প্রচলিত নয়, আইনসিদ্ধও আছে। আমাদের মুসলিম সমাজে যৌন নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্যই মূলত তারা বাল্যবিবাহ রোধের ধূয়া তোলে। তারা বাল্য যৌনতার অনুমতি দেয়। বিবাহ বহিভূর্ত যৌন মিলন ও সন্তান ধারণের অনুমতি দেয়। বাল্য যৌন বন্ধুত্ব ও একাধিক সম্পর্কের অনুমতিও দেয়। যত সমস্যা সব বাল্যবিবাহে। বাল্য বা বালিকা কত বয়সে হয় বা থাকে তা শরিয়ত নির্ধারিত আছে, এটা অমান্য করে তারা নিজেরা আমাদের দেশের জন্য বাল্য বয়সের সীমা নির্ধারণ করে দিতে চায়। যদিও পশ্চিমাদের এ সীমা অনেকটাই ইসলামসম্মত। ব্যতিক্রম সব চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে মুসলিম সমাজের ওপর। এ সমাজের সব সৌন্দর্য ভেঙে দেয়ার জন্য। ইসলামের দেয়া সব অর্জন নস্যাৎ করার জন্য।
মন্তব্য করুন