বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মানবাধিকারের নামে আল্লাহর বিধান ভাঙার শাস্তি

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

পাশ্চাত্য সমাজে ধর্মীয় নীতিমালা বাদ দিয়ে নিজেদের মনগড়া আইন ও ব্যবস্থা চালু করায় অনেক অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। মানবাধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতার লাগামহীন ব্যাখ্যা তাদেরকে মানুষ থেকে পশুতে নামিয়ে এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যে শতকরা ৫৬ জন মানুষ তাদের পিতৃপরিচয় জানে না। শতকরা ৩৪ জন তরুণী বিয়ের আগেই সন্তানের মা হয়। কোনো কোনো সমাজে শতকরা ১৪ জন পিতা নিজ ঔরসজাত কন্যার সাথে যৌন সম্পর্ক রাখে। তাদের সংসার টেকে না। এক জীবনে বহু সঙ্গী বদল হয়। তারা বিবাহ ছাড়াই একসাথে বসবাস করে।
আমাদের বাংলাদেশে এ ধরনের সমস্যা নেই বললেই চলে। পিতৃপরিচয়হীন জারজ সন্তান এদেশে অত্যন্ত বিরল। দুর্ঘটনাক্রমে দুয়েকটি থাকলেও সমাজ ও ধর্ম এসবকে সবসময়ই নিরুৎসাহিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। কুমারী মাতা বিষয়টি বাংলাদেশে খুবই সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত। পিতা কন্যার যৌন সম্পর্ক এ দেশে ধারণাও করা যায় না। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশের মানুষ এসব অপসংস্কৃতি থেকে মুক্ত। বিয়ে, সংসার, সন্তান ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশ যথেষ্ট রক্ষণশীল ও আদর্শ। যদিও বহু বছর ধরে পশ্চিমা দেশ ও তাদের বাংলাদেশি এজেন্টরা এ দেশেও বিবাহ বহির্ভূত যৌন জীবন, লিভ টুগেদার, কুমারী মাতা, পিতৃপরিচয়হীন সন্তান, সমকামিতা ইত্যাদি জনপ্রিয় করার জন্য নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে বাল্য বিবাহ রোধে নানা কঠোর ও অমানবিক আইন প্রয়োগও উপরোক্ত মিশনেরই অংশ।
বাংলাদেশে নারী নির্যাতন, ইভটিজিং, আত্মহত্যায় বাধ্যকরণ, ধর্ষণসহ হাজারো অপরাধ রাত দিন সংঘটিত হচ্ছে। সংবাদ পাওয়া মাত্রই ডিসি, এসপি, ওসি, দারোগা, ইউএনওসহ অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তারা ছুটে এসে নারীকে উদ্ধার করেছেন, অপরাধীকে পাকড়াও করে শাস্তি দিয়েছেন এমন নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। অনেক সময় লোকমুখে অপরাধের কথা শুনেও তারা নড়েন চড়েন না। জিজ্ঞেস করলে বলেন, কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। মিডিয়া থেকে খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছেন এমন দৃষ্টান্তও বেশি নেই। আদালত নির্দেশ পাঠালে অথবা উচ্চআদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে হুকুম দিলে তবে তাদের কুম্ভকর্ণের ঘুম কিছুটা ভাঙে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, একটি বিষয় বাংলাদেশে আছে যা রোধ করা বা জড়িতদের তছনছ করে দেয়ার ব্যাপারে প্রশাসন, পুলিশ, এনজিও ও তথাকথিত সমাজকর্মীরা একপায়ে খাড়া থাকেন। সেই কঠিন অপরাধটির নাম বিবাহ। তাদের ভাষায় বাল্য বিবাহ। আপনি গত তিন বছরের সংবাদপত্র ঘেটে দেখুন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসন, বিচার ও আইন-শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ যে অভিযানগুলো চালিয়েছেন তার শতকরা ৯৮ ভাগ হবে বিয়ে বাড়িতে হানা। বাল্য বিবাহ রোধে ম্যাজিস্ট্রেট সাথে এসআই। বাল্য বিবাহ রোধে ইউএনও সাথে ওসি। বিবাহ রোধে উপজেলার কোনো কর্মকর্তা সাথে এনজিও ও পুলিশ। বর গ্রেফতার, তার বাবা গ্রেফতার, কনে তাদের হেফাজতে, তার মা গ্রেফতার, বাবা ও কাজি গ্রেফতার, বিয়ের আয়োজন লন্ডভন্ড, পালিয়ে গেছে বরবাত্রীরা। নতুন আইন হচ্ছে বাল্য বিবাহ দেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের তিন বছরের জেল ও পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা।
১৮ বছরের একদিন আগে মেয়ে বিয়ে দিলেও বাবা-মাকে জেল খাটতে হবে। গুনতে হবে জরিমানা। কারণ মেয়েটি সরকারের আইনে নাবালিকা। কিন্তু ১৩ বছর থেকে ১৮ পর্যন্ত যদি সে ছেলে বন্ধুর সাথে যৌন সম্পর্ক তৈরি করে, ১৪-১৫ বছরে গর্ভে সঞ্চারিত সন্তান নষ্ট করে কিংবা ১৬-১৭ বছরে কুমারী মাতা হয়ে সন্তান লালন করে তা হলে এ নিয়ে উল্লিখিত কর্তাব্যক্তিদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তাদের সব উদ্বেগ কেবল এই মেয়ের বিয়ে হলে। এখানে কম বয়সে বিয়ে ও মা হওয়ার যেসব সমস্যা হতে পারে যার ক্ষেত্রে বিয়ে না হলে আরো বেশি সমস্যা, তার বিয়ে হতে দিতে সমস্যা কোথায়? প্রধানমন্ত্রী নতুন আইনে রেখেছেন পিতা-মাতা ও আদালতের নির্দেশে ১৬ বছরেও বিয়ে হতে পারবে। এ সুযোগটি রদ করার জন্যে এক শ্রেণির নারী-পুরুষ বলা যায় কোমরে গামছা বেঁধে নেমেছে। সত্যিই অবাক লাগে মানুষের বিবেকহীনতা ও দৃষ্টির সঙ্কীর্ণতায়।
পশ্চিমাদের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা নেয়ার পরিণতি কী এতই করুণ যে, নিজ দেশের শত সাধনার অর্জন চরিত্র, সততা, পরিবারের বন্ধন, জন্মের পরিচয়, মা ও সন্তানের দৃঢ় সম্পর্ক, বিয়ে-শাদীর শান্তিময় পরিণতি, নারী-পুরুষের যৌন পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে যে কোনো মূল্যে তারা বাংলাদেশকেও একটি পশুর সমাজে পরিণত করতে চান। বিবাহপূর্ব যৌন মিলন, ঘরে ঘরে ব্যভিচার, ব্যাপক জারজ সন্তান, কুমারী মাতা, সমকাম ও পিতা-কন্যার নোংরামী বাংলাদেশে আমদানি করার ইচ্ছা নিয়েই কি তারা সবকিছু বাদ দিয়ে বিশেষভাবে বাল্য বিবাহ রোধের মুখরোচক স্লোগান তুলে মূলত বিবাহ রোধে নেমেছেন?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (15)
লোকমান ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৩:০০ এএম says : 1
লেখাটি খুব ভালো লেগেছে। লেখককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
Total Reply(0)
তামান্না ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৩:১৭ এএম says : 1
বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা।
Total Reply(0)
Abdul kuddus ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৩:১৮ এএম says : 1
যারা বাল্য বিবাহ নিয়ে কু কথা বলে । তাদের ঘড়ে ঘড়েই যিনা বেবিচার চলে তারা সেটাকে জায়েয মনে করে।
Total Reply(0)
মারিয়া ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৩:১৯ এএম says : 1
বিষয়টি নিয়ে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকল মহলের গভীরভাবে ভাবনা চিন্তা করা উচিত বলে আমি মনে করি।।
Total Reply(1)
আঃজাববার ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৪:২০ পিএম says : 4
জি,,,আপনাকে ধন্যবাদ
তোফায়েল ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৩:২০ এএম says : 1
দেশ রাষ্ট্র সমাজ ও পরিবারে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরায় লেখক উবায়দুর রহমান খান নদভী হুজুরকে অসংখ্য মোবরকবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
রুবেল ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৩:২১ এএম says : 1
যেহেতু ইসলাম একটি পুর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। সুতরাং এখানে সকল ধরনের সমস্যার সমাধান আছে সেগুলো মানলেই ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি লাভ করা সম্ভব।
Total Reply(0)
সুলতান ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৩:২১ এএম says : 1
আল্লাহ আমাদের সবাইকে দীনের সহি বুঝ দান করুক। আমিন
Total Reply(0)
হাসিব ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৩:২১ এএম says : 1
দৈনিক ইনকিলাবের এই ধরনের লেখা আমাদের চোখ খুলে দেয়। তাই তো এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রিয় পত্রিকা ইনকিলাব।
Total Reply(0)
শফিক ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৭:১৩ এএম says : 1
এই লেখাটি ব‍্যপকভাবে প্রচার করা দরকার।
Total Reply(0)
ফারুক ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৯:৪১ এএম says : 1
বাস্তব সত্য
Total Reply(0)
মোঃ হাবিবুর রহমান ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১০:০৩ এএম says : 0
একমাত্র ইসলামী বিধান ছাড়া মানবতার প্রকৃত আদর্শ প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। খোদায়ী বিধান দ্বারাই একসময় অন্ধকার যুগটা দূরীভূত হয়েছিল। আর এ বিধান থেকে যে জাতি যত দুরে সরে যাচ্ছে তারা তত অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে।
Total Reply(0)
Salim ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:৫৭ পিএম says : 0
ইসলামী শরীয়া অনুসারে সাবালক/সাবালিকা'কে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করিয়ে দেয়ার বিধান রয়েছে । ইসলামী আইন'কে ছোট করে মানুষের সৃষ্টি আইন বাল্য বিবাহ'কে কেন এত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে । ইসলাম যা শিক্ষা দেয় তার চেয়ে কি ভাল কিছু পশ্চিমাদের কাছে আশা করেন, আমাদের দেশের আইন সংশোধন কারীরা । কন্যাদায় গ্রস্থ পিতাই বুঝে একটি ভাল ছেলের কাছে মেয়েকে উঠিয়ে দেয়া কতটা জরুরী, এটা ফরজও । অতএব বর্তমান আইনের সংশোধন হওয়া উচিৎ । সাবালক/সাবালিকা হওয়ার পর যত তাড়াতাড়ী সম্ভব বিয়ের ব্যবস্থা করে দেয়াটা সর্বোত্তম ।
Total Reply(0)
আবদুল মোতালেব ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ২:৫০ পিএম says : 0
যারা বিবাহের বিরোধিতা করে তাদের অনেকেই ......... ........। বিবাহ আল্লাহর নিয়ামত।
Total Reply(0)
Anwar Hossain ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৫:০৭ পিএম says : 0
Thanks to Writer >>>>>>>>> (Good Writing) Thanks to Writer >>>>>>>>> (Good Writing) Thanks to Writer >>>>>>>>> (Good Writing)
Total Reply(0)
সোহরাব ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৭:৩৯ পিএম says : 0
আইন এবংমহিলাদের ইজ্জতের ব্যাপারে সরকারের * ইসলামি দৃষ্টি* কামনা করছি
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন