বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাহিত্য

ফররুখ আহমদের ছড়া : শিশু-ভাবনা

ড. আশরাফ পিন্টু | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৫ এএম

(পূর্বে প্রকাশিতের পর)

এভাবে শিশু শুধুমাত্র একটি বর্ণের সাথে পরিচিত হচ্ছে না, সঙ্গে সঙ্গে সে তার পরিচিত পরিবেশে পরিদৃশ্যমান বিভিন্ন বিষয়ের সাথেও পরিচিত হয়ে উঠছে। এভাবে একটি বর্ণের সাথে পরিচয় ঘটাতে গিয়ে কবি সে বর্ণ দিয়ে তৈরি অনেকগুলো শব্দের সাথে বা তার পরিচিত পরিবেশের অনেকগুলো বিষয়ের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন।
‘‘নতুন লেখা’’ ছড়াগ্রন্থে’ মোট ৬৮টি ছড়া-কবিতা সঙ্কলিত হয়েছে। উল্লেযোগ্য ছড়াগুলো হলো : মেঘের ছড়া, বৃষ্টির ছড়া, পয়লা আষাঢ়, বর্ষার গান, চিতল বোয়াল, ইলশেগুড়ি, ইলিশ, রুই-কাতলা, শ্রাবণের বৃষ্টি, শরতের সকাল, হৈমন্তী সুরে, পউষের কথা, সৌখিন পাখী, শ্রমিক পাখী, শীতের পাখী, পাখীর ঝাঁক, মেঘের শীতে, ফাল্গুনে, চৈত্রের কবিতা, রং-তামাসা, সবাই রাজা, দাদুর কথা, সহিস ও মহিষ, ফেলুর ছড়া, হোঁদুল কুৎকুৎ, হাসি, কান্না, উদো-বুধোর ঝগড়া, পালোয়ানী কিস্সা, ঘোড়া, হাতি, মাছি, মশা, ছাগল, ষাঁড়, গণ্ডার, বন্ধু নির্বাচন, ছুঁচো, বাঘের মাসী, লালু মিঞার দুঃখ, টাকার বান্দা, বিচিত্র অভিজ্ঞতা, রাক্ষস খোক্ষস, সবুজ নিশান, সবুজের স্বপ্ন, ঈদের কবিতা, কচি-কিশোর, পথের গান, কিস্সা শোনার সন্ধ্যা, দুষ্টু জিনের কিস্সা, সিন্দাবাদ ও বুড়োর কিস্সা, নৌফেল ও বাদশা হাতেম তায়ীর কিস্সা, রাসূলে খোদা, মক্কা শহর আঁধার যুগে, সত্যের সন্ধানী, সত্যাসত্য, শিশুদের নবী, ইত্যাদি
চিড়িয়াখানায় থাকে বিচিত্র প্রাণীর সমাবেশ। এ গ্রন্থেও কবি ¯’লচর, জলচর, উভচর, সরিসৃপ দিয়ে ৩২টি প্রাণীর সচিত্র সমাবেশ ঘটিয়েছেন। প্রাণী ছাড়া অন্য বিষয় নিয়ে কোনো ছড়া নেই এ গ্রন্থে। প্রাণিজগতের সবচেয়ে সুন্দর ও ভীতু প্রাণী হলো হরিণ। হরিণের এমন বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে নিচের ছড়াটিতে-
হরিণ ঘাটা নদীর বাঁকে/ দল বেঁধে ভাই হরিণ থাকে,
একটু খানি শব্দ হ’লে/ হাওয়ার আগে হরিণ চলে
বিজলি আলো ঝিলিক দিয়ে,/ মিলায় যেন চোখ ধাঁধিয়ে।
(হরিণ : চিড়িয়াখানা)
মানুষের অনেক বৈশিষ্ট্যে সাথে প্রাণিজগতের বিভিন্ন জীব-জš‘র স্বভাবের মিল পাওয়া যায়। হরিণের মতো ভালো বা ভতু স্বভাবের প্রাণী যেমন রয়েছে জীবগতে তেমনি শিয়ালের মতো ধূর্ত-চালাক প্রাণীও রয়েছে। আর ফররুখ আহমদের নজরও সেদিক এড়ায় নি। তাঁর ছড়ায়ও ফুটে উঠেছে শিয়ালের বৈশিষ্ট্য-
মুর্গী নিয়ে পাতিশিয়াল যায় যে পালিয়ে,
চুরি-স্বভাব শিয়ালগুলো খায় রে জ্বালিয়ে।।
(শিয়াল : চিড়িয়াখানা)
ফররুখ আহমদের শিশুতোষ ছড়া-কবিতার বিষয়বস্তুর দিকে লক্ষ্য করলে এটা স্পষ্টত উপলব্ধি করা যায় যে, বাংলাদেশের প্রকৃতি, নদী-নিসর্গ, ফুল-পাখি, জীব-জন্তু ও নানা বৈচিত্র্যময় অসংখ্য উপাদান নিয়ে কবি এসব ছড়া-কবিতা লিখেছেন। সর্বত্রই কেবল বাংলাদেশের মানুষ, প্রকৃতি, পরিবেশ ও অপরূপ সৌন্দর্যের হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা। তাঁর ছড়ায় ব্যবহৃত শব্দরাজি বিচার করলে এটা স্পষ্ট হয় যে, এতে তিনি খুব সহজ-সরল শব্দ ব্যবহার করেছেন। যুক্তাক্ষরযুক্ত কোন শব্দ তিনি যথাসম্ভব পরিহার করেছেন। ফলে এসব শব্দের উচ্চারণ, পঠন-পাঠন, অর্থ অনুধাবন শিশু-কিশোরদের জন্য খুবই সহজ। মূলত শিশু-মনস্তত্ত¡ সম্পর্কে কবি অতিশয় সচেতন এবং তাদের মন-মানস, চিন্তা-বুদ্ধি-কল্পনা যেসব বিষয়কে কেন্দ্র করে সহজে বিকাশ লাভ করে, সেসব বিষয় নিয়েই কবি তাঁর ছড়া-কবিতার ডালি সাজিয়েছেন। বিষয়ের মধ্যে বৈচিত্র্য ও নানা বর্ণ-সুষমার সমাবেশ ঘটেছে। বৈচিত্র্য, রং ও বর্ণিলতা শিশু-কিশোর মনকে সহজেই আকৃষ্ট করে থাকে। কবি অত্যন্ত সজাগ ও নিপুণতার সাথে তা প্রকাশ করেছেন।
পরিশেষে বলা যায়, ফররুখ আহমদ শিশুমনস্তত্ত¡ বুঝতে পেরেই শিশুদের জন্য অসংখ্য ছড়া-কবিতা রচনা করেছেন। এগুলো বিষয়বস্তুর দিক থেকে যেমন বৈচিত্র্যপূর্ণ তেমনি শিশু-কিশোরদের মন-মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে সম্পূর্ণ উপযোগী। এতে তারা যেমন আনন্দ পায়, তেমনি নানা বিষয়বস্তুর আকর্ষণ তাদেরকে এগুলো পাঠ করতে উৎসাহ যোগায়। আনন্দ লাভের সাথে সাথে তারা অনেক শিক্ষণীয় বিষয়ও জানতে পারে। সার্বিক বিচারে শিশুতোষ ছড়া রচনার ক্ষেত্রে বাংলা শিশুসাহিত্যে ফররুখ আহমদের অবদান অবিস্মরণীয় এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন