একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদিকে সক্রিয় হয়ে ওঠছে পেশাদার সন্ত্রাসীরা। কদর বাড়ছে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের। জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারে অস্ত্রের মজুদ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। যার কারণে সন্ত্রাসীদের ধরতে তৎপরতা বাড়িয়েছে তারা।
র্যাব-পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সূত্রে জানা যায়, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে অস্ত্র ব্যবসায়ী, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের তালিকা ইতোমধ্যে হালনাগাদ করা হয়েছে। তালিকা অনুসারে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার অভিযান শুরু করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নিয়মিত অভিযানে গত ২ মাসে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে ৪৬টি আগ্নেয়াস্ত্র। অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে যুক্ত পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, সা¤প্রতিক সময়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডে ক্ষুদ্রাস্ত্রের চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি সীমান্তের ফাঁক গলে বিম্ফোরকের চালানও ঢুকছে কুমিল্লাসহ বিভিন্ন শহরে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীরা বিম্ফোরককে ‘মাটি’ বলে অভিহিত করে। বিম্ফোরক বিক্রির দেনদরবারের সময়ে নিজেদের মধ্যে কথোপকথনে এ বিশেষ কোড ও সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে থাকে। পাশাপাশি রিভলবারকে সন্ত্রাসী গ্রæপগুলো ‘চাকতি’ এবং পিস্তলকে ‘সাতের মাল’ ও পাঁচের মাল’ বলে অভিহিত করছে।
কুমিল্লা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, স¤প্রতি জেলার কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের সময়ে তারা এ বিশেষ কোড ও সাংকেতিক ভাষা ব্যবহারের সন্ধান পেয়েছিলেন। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়া সন্ত্রাসীদের জিজ্ঞাসাবাদেও আন্ডারওয়াল্ডের অস্ত্র বাজারের এমন বিশেষ কোড ব্যবহারের তথ্য মিলেছে। এর আগে বড় অস্ত্রকে ‘হাতি’ পিস্তল বা রিভলবারকে ‘ঘোড়া’ এবং গুলিকে ‘কলাগাছ’ নামে বিশেষ কোড দিয়ে হাতবদল করার তথ্য রয়েছে।
আধিপত্য বিস্তারের সংঘর্ষ, খুন, গুপ্তহত্যা, অপহরণ, ডাকাতি, ভূমি দখল, চাঁদাবাজি ইত্যাদি। অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণকারী এক শ্রেণির গডফাদার এসব অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র তাদের গোপন উৎস থেকে সরবরাহ করে থাকে বলেও তথ্য মিলেছে। গত মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে অস্ত্র উদ্ধারের সংখ্যা বেশি। সেপ্টেম্বর মাসে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ৩৫টি ও অক্টোবর মাসে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ১১টি। সেপ্টেম্বর মাসে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ১টি রাইফেল, ১টি বন্দুক, ২টি রিভলবার, ১টি পাইপগান, ২টি এলজি, ১ শুটার গান, ১৪টি গুলি, ১০টি কার্তুজ ও ৩টি দেশীয় অস্ত্র। অক্টোবর মাসে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ১টি পিস্তল, ৪টি গুলি ও ৬টি কার্তুজ।
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, মানুষের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ তৎপর। সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকাÐ রুখতে পুলিশের এ তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর হওয়ায় আহবান জানিয়েছেন সচেতন কুমিল্লাবাসী। একইসঙ্গে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন সেদিকে খেয়াল রাখার জন্যও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন