যাবতীয় সৃষ্টিকুলের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ, মানবতার মুক্তিদূত মহানবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) নিজে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। এটি তার সুন্নত। এক হাদীসে তিনি বলেছেন, ‘পৃথিবীতে আমাকে মুগ্ধ করে সুগন্ধি, মাতৃকুল আর নামাজ। নামাজ সে তো আমার চক্ষু শীতলকারী।’
পবিত্র কোরআন শরীফেও আল্লাহ তায়ালার পছন্দের কথা বলা হয়েছে। তিনি পবিত্র পরিচ্ছন্ন মানুষ ও বস্তুকে পছন্দ করেন। হাদীস শরীফে আরও আছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ নিজে পবিত্র আর তিনি পবিত্র বস্তুই কবুল করেন।’ বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ সুন্দর তিনি সুন্দরতাকে পছন্দ করেন।’ প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কষ্টদায়ক বস্তু খেয়ে বা ব্যবহার করে মসজিদে এসো না। এতে ফেরেশতাদের কষ্ট হয়।’
অন্য হাদীসে পেঁয়াজ, রসুনের নামও উল্লেখ করেছেন। এসব কাঁচা খেয়ে উত্তম রূপে মুখ পরিষ্কার না করে মসজিদে যাওয়া মাকরূহ। যে জন্য পরবর্তীযুগের উলামায়ে-কেরাম কেরোসিনের বাতি মসজিদে মাকরূহ বলতেন। মসজিদে জ্বালানো হতো, চর্বি মোম বা জয়তুনের চেরাগ। সিগারেট, বিড়ি যারা পান করেন, তাদের জন্য মুখের দুর্গন্ধ দূর না করে মসজিদে প্রবেশ করাও মাকরূহ।
হাদীসের আলোকে দেখা যায়, জুমার দিনে পালনীয় জরুরি বিষয়ের মধ্যে একটি হচ্ছে গোসল করা। যাদের শরীর মোটামুটি গন্ধহীন ও পরিচ্ছন্ন থাকে, তাদের জন্য গোসল সুন্নত। আর যাদের দুর্গন্ধের আশঙ্কা থাকে তাদের জন্য গোসল ওয়াজিব। মদীনা শরীফের অধিকাংশ মানুষ পানি স্বল্পতার জন্য নবীজির যুগে সারা সপ্তাহ গোসলের সুযোগ পেত না, সুতরাং সপ্তাহের এ বড় সমাবেশে তিনি গোসল আবশ্যিক করে দিয়েছিলেন।
তাছাড়া কোনো দুর্গন্ধযুক্ত রোগে আক্রান্ত, ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত, দেখতে খারাপ লাগে এমন রোগে আক্রান্ত, মানুষের মনযোগ নষ্ট হয় এমন শব্দ বা উহ্-আহ করা রোগী প্রভৃতি সমস্যাকবলিত মানুষের জন্য নামাজের জামাতে আসা জরুরি নয়। ক্ষেত্র বিশেষে নিষিদ্ধ। পাশাপাশি দামি বা নতুন না হোক, অবশ্যই ধোয়া ও পরিচ্ছন্ন কাপড় গায় দিয়ে মসজিদে যেতে হবে।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘খুজু জীনাতাকুম ইনদা কুল্লি মাসজিদ’। অর্থাৎ নামাজের সময় তোমরা উৎকৃষ্ট অবস্থা ধারণ কর। (আল কোরআন)। মুসলমানদের নামাজে বিশেষ করে ঈদ ও জুমায় সুগন্ধি ব্যবহার করার হুকুম এসব উৎস থেকেই এসেছে। মসজিদে, মাদরাসায়, খানকায় কিংবা দীনি মাহফিলে ওদ, আগর, গোলাপজল ইত্যাদি ব্যবহারের ঐতিহ্য এ ধারণা থেকেই এসেছে।
বর্তমানে মক্কা ও মদীনার দুই পবিত্র মসজিদে যে ধরনের পারফিউম রাজকীয় ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার করা হয়, আমাদের জানা নেই, দুনিয়ার আর কোনো ধর্মস্থানে কন্টিনিওয়াসলি এমন করা হয় কি না। মহানবী (সা.) মুসলমানদের পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার ওপর যে গুরুত্ব দিয়েছেন, তাতে বোঝা যায় ইসলাম পবিত্র সৌরভের ধর্ম। মহান সৌন্দর্যের ধর্ম। দাঁত ও মুখ পরিষ্কারের কথাই ধরুন।
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যদি আমার উম্মতের কষ্ট হবে বলে মনে না করতাম, তাহলে প্রতি ওজুতেই তাদের মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’ অপর হাদীসে আছে, ‘মেসওয়াক ছাড়া নামাজের তুলনায় মেসওয়াক করা নামাজের সওয়াব ২৫ গুণ বেশি।’ প্রিয় নবীজি (সা.) এর জীবনেও আমরা দেখতে পাই, তিনি তার বালিশের পাশে মেসওয়াক রেখে দিতেন। ঘুমের আগে ও ঘুম থেকে জেগে মেসওয়াক ব্যবহার করতেন। সফরেও তার সাথে মেসওয়াক থাকতো। এমনকি মৃত্যু শয্যায়ও তিনি মেসওয়াক করছিলেন।
এরপর পরই তিনি তার প্রধান বন্ধু মহান রবের ডাকে সাড়া দেন। মেসওয়াকের গুরুত্ব অনেক। তবে সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য মুখের দুর্গন্ধে যেন অপর ভাই কষ্ট না পায়। এমনকি ফেরেশতারাও যেন দূরে সরে না থাকে। আমাদের দেশে ছোট বড় যেমন মসজিদই হোক, যদি এর খেদমতগাররা, (হোন তিনি সভাপতি, সেক্রেটারি, দাতা, মুতাওয়াল্লি, ইমাম, খতিব, খাদেম, মুয়াজ্জিন বা সমাজের যে কোনো শ্রেণি পেশার মানুষ।) খুব খেয়াল করেন, বিশেষ করে আমার লেখার ভেতর দিয়ে যে বার্তাটি আমি দিতে চাচ্ছি তা অনুধাবন করেন, তাহলে তাদের সচেতনতা বাড়বে।
মসজিদ যেমনই হোক, এর অজুখানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধমুক্ত রাখার চেষ্টা করলে অন্তত অমুসলিমরা এভাবে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে পারবে না। আমাদের মসজিদগুলো যদি সুগন্ধিতে ভরে থাকে, যদি সব মুসল্লি সাধ্যমত পরিচ্ছন্ন শরীর পোশাক ও সুগন্ধি নিয়ে নামাজে আসে তাহলে মসজিদগুলোর পরিবেশই বদলে যাবে। এতে আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.)-এর উদ্দেশ্য আমাদের মাধ্যমে পূরণ হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন