পিয়ারা নবী মোহাম্মদ (সা.) দ্বীন এবং দুনিয়া উভয় জাহানের হুকুমত ও বরকতসহ আগমন করেছিলেন। তিনি শুধু কেবল আসমানি বাদশাহীর খোশ খবরই প্রদান করেননি, বরং আসমানি বাদশাহীর সাথে দুনিয়ার বাদশাহীর শুভ সংবাদও প্রদান করে দেন। যাতে করে এই পৃথিবীতে আল্লাহর বন্দেগি ও সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রাকে ভয় ও শঙ্কাহীন করা যায় এবং আল্লাহর একক বাদশাহীকে আল্লাহপাকের বিধান মোতাবেক পৃথিবীতে কায়েম করা সহজতর হয়। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব (খিলাফত) দান করবেন, যেমন তিনি তাদের পূর্ববর্তীদের প্রতিনিধিত্ব (খিলাফত) দান করেছিলেন এবং অবশ্যই তিনি তাদের জন্য তাদের দ্বীনকে (ইসলামকে) সুদৃঢ় করবেন, যা তিনি তাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং ভয় ভীতির পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন, তারা ইবাদত করবে, আমার কোনো শরিক করবে না, অতঃপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই সত্যত্যাগী’ (সূরা নূর : আয়াত ৫৫)। এই আয়াতে কারিমার অর্থ ও মর্মের দিকে গভীরভাবে লক্ষ করলে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, (ক) খিলাফত বা প্রতিনিধিত্বশীল দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহপাকের এক বড় নেয়ামত। এ নেয়ামত তিনি ঈমানদার ও সৎকর্মশীল বান্দাদেরকে দান করেন। (খ) তাদের দ্বারা আল্লাহপাক তাদের দ্বীনকে (ইসলামকে) সুদৃঢ় করেন। (গ) তাদেরকে তিনি ভয়-ভীতির শঙ্কা থেকে নিরাপত্তা দান করেন। (ঘ) তাদের বৈশিষ্ট্য হলো, তারা হবে ইবাদতগুজার এবং তারা আল্লাহর সাথে কোনো শরিক করবে না। (ঙ) কিন্তু যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারাই হবে সত্যত্যাগী। এই নিরিখে স্পষ্টতঃই বলা যায় যে, চলমান দুনিয়ার প্রতিনিধিত্ব লাভকারী ব্যক্তিসত্তাদের অধিকাংশই হচ্ছে অকৃতজ্ঞ ও আল্লাহ ও রাসূলের নীতি ও আদর্শের বিপরীত কর্মকান্ডে পরিলিপ্ত এবং তারা প্রকৃতই সত্যত্যাগী। তবে, এই শ্রেণির নাফরমানদেরকে এমনিতেই ছেড়ে দেয়া ঈমানদারের কাজ নয়। বরং সাধ্য অনুসারে ও বৈধ পন্থায় সত্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে তাদেরকে কাজ করে যেতে হবে এবং ইসলামকে কায়েম ও দায়েম রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। আল কুরআনে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, ‘এবং তাদের সাথে সংগ্রাম করতে থাকো, যেন অশান্তি না থাকে এবং সকল হুকুম আল্লাহর জন্যই হয়ে যায়’ (সূরা আনফাল : আয়াত ৩৯)।
কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহপাক কোনো কোনো নেক বান্দার দোয়া উল্লেখ করে ইরশাদ করেছেন, ‘এবং তাদের মধ্যে যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে ইহকালে কল্যাণ দিন এবং পরকালেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করুন’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২০১)। এই আয়াতে বর্ণিত কল্যাণ কী এবং কেমন, তা অল্প বিস্তর অনেকেরই জানা আছে। কিন্তু দুনিয়ার কল্যাণ ও ইহকালের মঙ্গল বলতে কী বোঝায়, সে সম্পর্কে আমাদের মুফাসসিরিনে কিরাম উল্লেখ করেছেন, তা হলো : (ক) ইলম, (খ) ইবাদত, (গ) সুস্বাস্থ্য, (ঘ) রুজি-রোজগার, (ঙ) মাল-দৌলত, (চ) বিজয়, (ছ) সাহায্য, (জ) নেক-সন্তান, (ঝ) ওইসকল বস্তু যা আল্লাহর শরিয়তে বৈধ করা হয়েছে, (ঞ) হুকুমত ও সালতানাত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন খোলাসা করে আল কুরআনে আরো ইরশাদ করেছেন, ‘যারা অত্যাচারিত হওয়ার পর আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, আমি তাদেরকে অবশ্যই দুনিয়ায় উত্তম আবাস প্রদান করব এবং আখিরাতের পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ। তারা যদি উপলব্ধি করতে সক্ষম হতো’ (সূরা নাহল : আয়াত ৪১)। সুতরাং দুনিয়ার উত্তম নিবাসস্থল বলতে বৈধ নেয়ামত, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও হুকুমত ও সালতানাতকে বোঝায়, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা, হযরত মূসা আ.-এর প্রার্থনায় এই বিশেষত্বটিই মূর্ত হয়ে ফুটে উঠেছে। তিনি দ্বীন ও দুনিয়া উভয় জাহানের নেয়ামত লাভের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। আল কুরআনে সেই প্রার্থনাটি এভাবে ব্যক্ত হয়েছে, ‘এবং হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের জন্য দুনিয়ার জীবনে এবং আখিরাতের জীবনে কল্যাণ নির্ধারণ করুন।’ (সূরা আরাফ: আয়াত ১৫৬)। এতে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, আখিরাতের কল্যাণ লাভ করার উদ্দেশ্যে দুনিয়ার সালতানাতের খেদমত করা পুণ্যের কাজ। তবে তা হতে হবে আল্লাহপাকের বিধান মোতাবেক বৈধ পন্থায়। অন্যথায় অকৃতজ্ঞ ও সত্যত্যাগী হিসেবে জাহান্নামের অধিবাসী হতে হবে। যার অন্যথা হওয়ার নয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন