মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বিশ্বাস ও আস্থার গুণ

আল্লামা মুহিব খান | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনময় লালিত আরো একটি অন্যতম সুন্নত হলো আমানতদারী। রাসূলুল্লাহ (সা.) সত্যবাদিতা ও আমানতদারীর কারণেই তাঁর যুগের ভালো-মন্দ সকলের কাছে ‘আল-আমিন’ উপাধিতে এক ডাকে পরিচিত ছিলেন।
এটি এমন একটি সুন্নত, যা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে কাফির ও মুনাফিকদের ভেতর পাওয়া দুষ্কর ছিল। আর এখন এই সুন্নত খোদ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের মধ্যে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। আজ সারা পৃথিবীজুড়ে মুসলমানদের সংখ্যা যত বাড়ছে, আমানতদার মুসলমানের পরিমাণ ততই যেন কমছে। বস্তুত আমানত রক্ষা ও আদায় করা যে কত বড় দায়িত্ব, এ অনুভ‚তি ও বোধটুকুই যেন আমাদের চিন্তা ও অন্তর থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অন্যের কোনো কিছু নিজের হাতে আসার অর্থই যেন নিজের হয়ে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় অন্যের রাখা আমানতে নিজেরও হক আছে বলে মনে করে থাকি। অনেক সময় শুরুতেই আর ফেরত না দেয়ার মনস্থ করে আমানত গ্রহণ করে থাকি। আবার অনেক সময় মনে মনে বাসনা করি, আমানতদার যেন আর কখনোই ফেরত না চায়; তা হলেই তো জিনিসটা আমার হয়ে যায়। কখনো-বা আমানত গ্রহণের কথা অস্বীকার করেই বসে থাকি। এমনকি ফেরত চাওয়াটাকেই অন্যায় বা অনুচিত বলে অভিহিত করার চেষ্টা করি।
ধরুন, আমানতদাতা একজন সচ্ছল ব্যক্তি আর গ্রহীতা একজন দরিদ্র ব্যক্তি। এ ক্ষেত্রে এই দরিদ্র ব্যক্তিটির মনে এ রকম চিন্তাও কাজ করতে পারে যে, তার তো অঢেল রয়েছে আর আমার তো নেই, কাজেই তার রাখা আমানত আর ফেরত না দিলেই-বা দোষ কী? বরং ফেরতের জন্য তাগিদ করাটাই তার অন্যায়। এ ধরনের চিন্তাকে অনেক সময় তৃতীয় পক্ষের লোকজনও যেন সমর্থন জুগিয়ে থাকে। ফলে আমানতের খেয়ানতকারী ব্যক্তিটি মনস্তাত্তি¡কভাবে মজলুম সেজে বসে থাকে। আর প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিটিকেই উল্টো জালিম প্রতিপন্ন করা হয়। নাউজুবিল্লাহ। এটা অন্যায় ও অসততা ছাড়া কিছুই নয়। এসব ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে, সব দুর্বল দরিদ্র ব্যক্তিই জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়ার যোগ্য নাও হতে পারে। বরং দরিদ্র দুর্বল মানুষেরাও জালিম হতে পারে। ধনাঢ্য প্রভাবশালী লোকেরাও হতে পারে মাজলুম।
অন্য দিকে, শক্তি ও প্রতাপশালী লোকদের প্রতারণায় পড়ে অসংখ্য দুর্বল দরিদ্রের আমানত নষ্ট হওয়ার ঘটনাও এ সমাজে নেহায়েত কম নয়। অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ করলে এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। সুন্নত আমরা অনুসরণ করি বটে, তবে তা কেবল পোশাকি সুন্নতেই সীমাবদ্ধ। আমাদের সুন্নতি পোশাক ও অবয়ব দেখে লোকজন যদি আমাদের কাছে আমানত গচ্ছিত রাখতে আগ্রহ ও নিরাপদ বোধ করে, তবে তা সুন্নতেরই অবদান। পক্ষান্তরে আমরা যদি কেবল পোশাকি সুন্নতকে লেবেল হিসেবে ব্যবহার করে লোকজনের রাখা আমানতের খেয়ানত করে বসি, তবে তা হবে সুন্নতের তথা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এরই অবমাননা।
প্রিয় নবী (সা.) নবুওয়াত লাভের পূর্বে তো বটেই, নবুওয়াতের পরও কাফির ও মুশরিকদের চক্ষুশূলে পরিণত হওয়া সত্তে¡ও, আরবের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও আমানতদার মানুষ হিসেবে সকলের কাছে স্বীকৃত ছিলেন। যে মুশরিকরা তাকে পদে পদে অপদস্থ ও অত্যাচার করত, এমনকি হত্যার ষড়যন্ত্রও করেছিল। তারাও তাদের যে কোনো আমানত নিজেদের আত্মীয়-পরিজন বন্ধু-বান্ধবের কাছে না রেখে তাদের আদর্শিক দুশমন নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছেই গচ্ছিত রেখে নিশ্চিন্ত ও নিরাপদ বোধ করত। সুবহানাল্লাহ! এমনকি হত্যার হুমকি মাথায় নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মক্কা ছেড়ে মদিনায় গোপনে হিজরতের সময়ও তাঁর কাছে মক্কাবাসীর অনেক আমানত সংরক্ষিত ছিল। সেসব যথাযথ লোকদের কাছে বুঝিয়ে দেয়ার জন্যই তিনি তাঁর প্রিয় সাহাবী হযরত আলী রাযি.কে দায়িত্ব দিয়ে মক্কায় রেখে গিয়েছিলেন। এ কাহিনী বুখারী শরিফের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এবং বিষয়টি সকলেই অবগত। এটা ছিল তাঁর চরিত্রমাধুর্য এবং জীবনময় বৈশিষ্ট্য; যা আমাদের জন্য অবশ্য পালনীয় সুন্নত। যদিও আমরা অধিকাংশই এর ধারে-কাছে নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Ameen Munshi ২৫ নভেম্বর, ২০১৮, ১:২৯ এএম says : 0
আরবি ‘আমানত’ শব্দের অর্থ গচ্ছিত রাখা, নিরাপদ রাখা। পরিভাষায়— কারও কাছে কোনো অর্থসম্পদ, বস্তুসামগ্রী গচ্ছিত রাখাকে আমানত বলা হয়। যিনি গচ্ছিত বস্তুকে বিশ্বস্ততার সঙ্গে সংরক্ষণ করেন, যথাযথভাবে হেফাজত করেন এবং মালিক চাওয়ামাত্রই কোনো টালবাহানা ছাড়া ফেরত প্রদান করেন তাকে আল-আমিন তথা বিশ্বস্ত আমানতদার বলা হয়।
Total Reply(0)
আমিন গাজী ২৫ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৩০ এএম says : 0
ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিটি স্তরে প্রতিটি বিষয়ে আমানত রক্ষা করা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহ আমাদের আমানত রক্ষা করার তৌফিক দিন।
Total Reply(0)
Monir ২৫ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৩২ এএম says : 0
এত গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখার জন্য লেখককে ধন্যবাদ। ইনকিলাবের মঙ্গল কামনা করছি।
Total Reply(0)
Mohammad Mosharraf ২৫ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৩২ এএম says : 0
সব ক্ষেত্রে আমানত রক্ষা করা একজন মুমিনের পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য।
Total Reply(0)
আরিয়ান রাসেল চৌধূরী ২৫ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৩২ এএম says : 0
আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এরা সেই লোক যারা আমানতের প্রতি লক্ষ্য রাখে এবং স্বীয় অঙ্গীকার হেফাজত করে।’ (সূরা আল মুমিনুন : ৮)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যেন আমানত তার মালিককে যথাযথভাবে প্রত্যর্পণ কর।’ (সূরা নিসা : ৫৮)।
Total Reply(0)
আসমা বেগম ২৫ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৩৩ এএম says : 0
কোরআন-সুন্নাহর আমলের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রকৃত আমানতদার হিসেবে কবুল করুন।
Total Reply(0)
ALOMGIR HOSSAIN ২৫ নভেম্বর, ২০১৮, ১০:৩৩ এএম says : 0
Allah sobaika amanat rakkha karar toufiq din amin
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন