বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

দাজ্জাল নিয়ে যত কথা-১

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

কিয়ামতের বড় নিদর্শনাবলির মধ্যে অন্যতম হলো দাজ্জালের আগমন। দাজ্জাল সম্পর্কে বিশ্বজোড়া মানুষের মধ্যে নানা কথা, নানা কাহিনী ঘুরে বেড়াচ্ছে। এগুলোর আগা-গোড়ার তপ্ত-তালাশ কোনো কালেই সম্ভব হবে না। আর হবে না বলেই এগুলোকে পরিত্যাজ্য বলে পরিহার করাই শ্রেয়।
দাজ্জাল শব্দের অর্থ : দাজ্জাল শব্দটি আরবি বিশেষণ, বিশেষ্য নয়। দাজ্জাল শব্দের অভিধানগত অর্থ- প্রতারক, মিথ্যাবাদী, সত্য-মিথ্যার মিশ্রনকারী। আর দাজ্জাল শব্দের মূল অর্থ মিশ্রিত করা। যেমন- কোনো বস্তু খলত-মলত ও মিশ্রিত হলে আরবিতে বলা হয় ‘দাজ্জাল’। দাজ্জাল শব্দটি আরবিতে ‘আদ দাজ্জাল’ অথবা ‘মাসিহুস দাজ্জালও’ বলা হয়। উভয় শব্দের অর্থ মিথ্যাবাদী ও কানা মিথ্যাবাদী। দাজ্জাল শব্দটি আতিশয্য জ্ঞাপক বিশেষণ রূপে মহা-প্রতারক, মহা-প্রবঞ্চক, মহা-মিথ্যাবাদী, মহা-কূটকৌশলী অর্থেও ব্যবহৃত হয়।
আরবি অভিধানের এই বিশ্লেষণ ও দৃষ্টিকোণ থেকে এ কথা অবশ্যই বলা যায় যে, উপরোল্লিখিত বিশেষণযুক্ত যে কোনো ব্যক্তিকে (নারী-পুরুষ নির্বিশেষে) দাজ্জাল বলা যেতে পারে। এই নিরিখে দাজ্জালের গুণ ও বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ব্যক্তি, শ্রেণী দল ও গোষ্ঠীর অস্তিত্ব আগেও ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
তবে, এই দাজ্জালেরা আসল কানা দাজ্জালের পথ-ঘাট, কর্মতৎপরতাকে খোলাসা করার কাজে সর্বদাই সহযোগিতা করতে থাকবে। তাই প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি সমাজে, প্রতিটি দেশে, মোট কথা- এই ভূমন্ডলের সর্বত্রই দাজ্জালদের বিচরণ ছিল, বর্তমানেও আছে, ভবিষ্যতে আরো বিস্তৃত পরিসরে পরিদৃষ্ট হবে এবং তারাই আসল কানা দাজ্জালের আবির্ভাবকে ত্বরান্বিত করে তুলবে। (লিসানুল আরব : ১২/২৮৪-২৮৫)।
হাদিসের কিতাবসমূহে অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে দাজ্জালের প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। প্রত্যেক নবীই স্বীয় উম্মতগণকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) শেষ জামানায় কানা দাজ্জালের কতিপয় চিহ্ন বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন। হাদিসে মুতাওয়াতির এবং উম্মতে মোহাম্মাদির ইজমা দ্বারা কানা দাজ্জালের বিষয়টি প্রমাণিত। এতে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশও নেই। (শরহে আকিদায়ে সিফারানিয়্যাহ : ২/৮৬,৯৯)।
কিয়ামতের আলামত অধ্যায়ে সঙ্কলিত হাদিসসমূহের আলোকে প্রতীয়মান হয় যে, শেষ জামানার কানা দাজ্জাল হলো এক বিশেষ কাফির ব্যক্তি। সে ইহুদি বংশোদ্ভূত হবে, সে খোদা হওয়ার দাবি করবে। তার দু’চোখের মাঝে কাফ-ফে-রে অর্থাৎ কাফির বা কুফর লেখা থাকবে। হজরত কাতাদাহ বলেন, হজরত আনাস (রা.) আমাদেরকে হাদিস শুনিয়েছেন, রাসূলে আকরাম (সা.) বলেছেন, দাজ্জালের দু’চোখের মাঝে কাফ-ফে-রে, অর্থাৎ কাফির লেখা থাকবে। (সহিহ মুসলিম : ২/৪০০)। তার ডান চক্ষু দৃষ্টিহীন হবে।
শাম ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থান থেকে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে। সেখান থেকে সে ইস্পাহান যাবে। সেখানকার ৭০ হাজার ইহুদি তার অনুসারী ও অনুগামী হবে। নিজের বিশাল বাহিনী সঙ্গে করে সে ভূপৃষ্ঠে ৪০ দিন বিচরণ করবে। তবে সে ৪০ দিনের প্রথম দিনটি হবে এক বছরের সমান। দ্বিতীয় দিনটি হবে এক মাসের সমান। তৃতীয় দিনটি হবে এক সপ্তাহের সমান। অবশিষ্ট দিনগুলো সাধারণ দিনের সমপরিমাণ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট হবে।
ইসলামি আরবি বর্ষপঞ্জি অনুসারে এক বছর হয় ৩৫৪ দিনে। একমাস হয় ৩০ বা ২৯ দিনে। এক সপ্তাহ হয় সাত দিনে। অবশিষ্ট ৩৭ দিন হবে সাধারণ দিনের মতো। এই হিসাব অনুসারে দাজ্জাল এক বছর দুই মাস ১৪ দিন অর্থাৎ ৪২৮ দিন সারা পৃথিবীতে তার তান্ডব চালাবে। গোটা পৃথিবীতে এমন কোনো লোকালয় থাকবে না, যেখানে দাজ্জালের ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে না। দাজ্জাল ও দাজ্জালিয়াতের দাপটে গোটা বিশ্ব প্রকম্পিত হতে থাকবে। ঈমানিয়াত ও আমালিয়াত সমৃদ্ধ মুসলিম মিল্লাতের মধ্যে এক করুণ অবস্থার সৃষ্টি হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
রিপন ২৯ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:৫৮ এএম says : 0
দাজ্জালের অনুসারীতে জনপদ সয়লাব এখন। মিথ্যা, ধোঁকা প্রতারণা, শঠতায় ছেয়ে গেছে চারিদিক। ঈমান বাঁচিয়ে রাখাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। মহাশঠ দাজ্জাল তো পরের কথা, তার এন্তার অনুসারী পাতি শঠদের জ্বালায় প্রাণ ওষ্ঠাগত। এদের উৎপাত থেকে বাঁচার কি কোনই উপায় নেই? পরের কোন এক পর্বে আশা করি সে বিষয়ে আলোকপাত করা হবে। সময়োপযোগী রচনাটির জন্যে ধন্যবাদ।
Total Reply(1)
সাইফ ২৯ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:২১ পিএম says : 4
আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) সর্বউত্তম ও সর্ব শ্রেষ্ট দয়াবান আমাদের প্রতি। আর তাই রোগের সম্পর্কে যখন বলেদিয়েছেন আমাদের কে জেনে রাখার জন্যে এবং এর থেকে বেছে থাকার জন্যে তেমনি এর ঔষদ এবং সেই ঔষদ শেবনের পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন, নিজের ভেতর থেকে, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্দেশ, ঘৃণা ত্যাগ করুন, আল্লাহর মাখলুকাত কে ভালোবাসুন সে যেই হোক যেমনই হোক, আর প্রতি শুক্রবার, সুরাহ কাহাফ তিলাওয়াত করুন, পরবর্তি জুমায় পূর্যন্ত আল্লাহ্‌ আপনাকে সকল ফিত্না থেকে হিফাজত করবেন, প্রতিদিন সুরাহ মুলক একবার তিলাওয়াত করুন, আয়াতুল কুর্সি নিয়মিত পাঠ করুন এবং বেশি বেশি দরুদশরিফ পড়ুন, আর অবশ্যই আল্লাহর কাছে আস্রয় ছাইতে হবে। আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে এই ফিতনা থেকে হিফাজত করুন।
কামাল ২৯ নভেম্বর, ২০১৮, ১:১৯ এএম says : 0
ধারাবাহিক এই লেখাটির পরবর্তী অংশের জন্য অপেক্ষায় আছি
Total Reply(0)
নাবিলা ২৯ নভেম্বর, ২০১৮, ১:১৯ এএম says : 0
লেখাটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)
সাইফ ২৯ নভেম্বর, ২০১৮, ৯:৪৭ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা লেখক সাহেব ও ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে এর উত্তম প্রতিদান প্রধান করুন। আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদের সকলকে দাজ্জালীয় ফিত্না থেকে আমাদেরকে হিফাজত করুন। সকল মুসলিম ভাইদেরকে এই দাজ্জালের ফিত্নাথেকে বাছার উপায় আল্লাহ্‌ ও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি শুক্র বার সুরাহ কাহাফ পাঠ করবে সে পরবর্তী জুমায় পূর্যন্ত সকল ফিত্না থেকে আল্লাহ্‌ হিফাজতে থাকবেন এমন কি দাজ্জালের ফিত্না থেকেও
Total Reply(0)
আতাউল্লাহ বাশার ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৮:৪০ এএম says : 0
চারদিকে যা হচ্ছে এ সবই দাজ্জাল আবির্ভাবের লক্ষণ
Total Reply(0)
আলআমিন ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:০৪ এএম says : 0
মাহদীর আগমনের আলামত সম্পর্কে জানতে চাই
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন