হাতের কবজি থেকে হাতের তালু ও আঙুলগুলো অবশ হয়ে আসা, ঝিঁনিঝিনঁ করা, আবার কখনো ব্যথা হওয়া বা ফুলে যাওয়া এই সমস্যাগুলি সাধারণত যে রোগের কারনে দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম হলো কারপাল টানেল সিনড্রোম। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি। বিশেষ করে গর্ভকালীন ও মেনোপজ পরবর্তী সময়ে এই সমস্যা বেশী দেখা দেয়।
কেন হয়? : যে হাড়গুলি একত্রিত হয়ে আমাদের কবজি গঠন করে সেই হাড়গুলিকে মেডিকের পরিবাষায় কারপাল বোনস বলা হয়, কবজিতে সেই হাড়গুলির মধ্যে একটি ছোট্ট টানেল বা গহŸর আছে, যার নাম কারপাল টানেল। এই টানেলের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন শিরা ও স্নায়ু হাতে প্রবেশ করে। এর অন্যতম হলো মিডিয়ান নার্ভ। কোনো কারণে এই টানেলের মধ্যেকার নাভর্টি চাপে পড়লে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়া ফুলে যাওয়া, পানি জমা ইত্যাদি কারণেও এমনটি হতে পারে। স্থ‚লতা, থাইরয়েডের সমস্যা, ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও এস এল ই (সিস্টেমিক লুপাস ইরাইথেমাস) ইত্যাদি রোগ এর ঝুঁকি বাড়ায়। কখনো একই ধরনের হাতের কাজ বারবার করার কারণে টানেলের ওপর চাপ পড়ে। যেমন - লেখালেখি করা, সেলাই করা, টেনিস খেলা, গলফ খেলা বা বেহালা বাজানো ইত্যাদি
লক্ষণগুলো : আঙুল ঝিনঝিন বা অবশভাব, জ্বলে যাওয়া, খাবার খেতে, হাত মুষ্টিবদ্ধ করতে বা কোনো জিনিস ধরতে সমস্যা। লক্ষণগুলো রাতে বেশি দেখা যায় এবং সবচেয়ে বেশি হয় হাতের বুড়ো আঙুল, তর্জনী এবং মধ্যমাতে। ঝিনঝিন অনুভ‚তি ও ব্যথার কারণে রাতে ঘুম ভেঙে যায়, যা হাতে ঝাঁকুনি দিলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এসব লক্ষণ ওপরের দিকে ছড়িয়ে বাহুতে চলে যেতে পারে। চিকিৎসা না করালে আঙ্গুলের মাংসপেশি শুকিয়ে যেতে পারে।
রোগ নির্ণয়: রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসক ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশনের পাশাপাশি আক্রান্ত হাতের এন সি ভি (নার্ভ কনডাকশন ভেলোসিটি) টেষ্টের মাধ্যমে রোগটি সঠিকভাবে নির্ণয করা যায়।
চিকিৎসা ঃ কারপাল টানেল সিনড্রোমের চিকিৎসায় - স্নায়ুর ব্যথা কমানোর ওষুধ ও পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এবং হাতের বিশ্রামের জন্য স্পিøন্ট ব্যাবহার করতে হয় । এই রোগে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা খুবই উপকারী। ওষুধ ও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় সম্পুর্ন নিরাময় না হলে কখনো কখনো সার্জারীও প্রযোজন হতে পারে।
উপদেশ ঃ যাঁরা টেবিলে বসে দীর্ঘক্ষণ কাজ করেন, লেখেন কিংবা কম্পিউটারে টাইপ করেন, তাঁরা প্রতি ৩০ মিনিট পরপর সামান্য বিরতি নিতে পারেন। হাতের বাহু যেন কাজের সময় বিশ্রামে থাকে। টেবিল ও হাতের ব্যবধান ঠিক করে নিন যাতে হাত টেবিলের সমান্তরালে থাকে। মাঝে মাঝে টাইপ করা বা লেখার বিরতিতে বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের নির্দেশিত হাতের ব্যায়ামগুলি করুন।
বাত, ব্যাথা, পারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
চেয়ারম্যান ও চীফ কনসালটেন্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা ।
কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান - ফিজিওথেরাপি বিভাগ
প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
মোবা : ০১৭৮৭-১০৬৭০২।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন