পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও গৃহবাসী আপনজনদের সমন্বয়েই পরিবার গঠিত হয়। পরিবারকে পরিহার করে মানবজাতির বৃহত্তর কল্যাণ কল্পনা করা যায় না। মানুষ যেহেতু আল্লাহপাকের প্রতিনিধিত্বমূলক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অঙ্গীকারাবদ্ধ, তাই ইসলাম মানুষকে পরিবারভুক্ত হয়ে বসবাস করার জন্য উৎসাহিত করেছে এবং সুষ্ঠু ও কলুষমুক্ত পরিবার গঠনের প্রতি বারবার তাকিদ দিয়েছে। এই পৃথিবীর বুকে এক একটি মানব পরিবার মূলত: বৃহত্তর মানব সমাজেরই একটি ক্ষুদ্রতর অংশমাত্র। এ কারণে পরিবারকে বাদ দিয়ে স্বাভাবিক সামাজিক জীবন যাত্রা নির্বাহ করা কারও পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই, মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এবং আদিকাল হতেই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। মানুষ আপনজনও প্রিয়জনকে নিয়েই পারিবারিক জীবনের ভিত গড়ে তোলে এবং এই ভিত্তির উপরই প্রতিষ্ঠিত হয় সমাজ সংসারের অবকাঠামো। এই অবকাঠামোর মধ্যে দায়িত্ব, উন্নয়ন, উৎকর্ষ সাধন, শান্তি, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির দু’টি দিক স্বভাবতই নজরে পড়ে। প্রথমত: লক্ষ্য করা যায় যে, মানুষ আপনজন ও প্রিয়জনদের সমন্বয়েই পারিবারিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদনে অগ্রসর হয়। এর সাথে ছোট, বড়, রক্ত সম্পর্কিত বৈবাহিক সম্পর্কিত এবং পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সবারই কিছু না কিছু করণীয় থাকে। এই করণীয় কর্মসম্পাদনের আন্তরিকতাপূর্ণ চেষ্টা, যত্ম, পরিশ্রম যখন একই লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য পরিপূরণের দিকে এগিয়ে যায়, তখন সেখানে ফুটে উঠে মানসিক তৃপ্তি ও আনন্দ। এই তৃপ্তি ও আনন্দই মানুষকে সফলতার দুয়ার প্রান্তে পৌঁছে দেয়। সেখানে তাদের জীবন হয় ধন্য, সার্থক এবং সফল। দ্বিতীয়ত: পরিবারই এর সদস্যদের মাঝে উত্তম আদর্শ ও উন্নত এবং পবিত্র চরিত্রের গুণাবলীর বিকাশ সাধনে উন্নত পরিবারে যেমন উত্তম ও অনুকরণীয় আদর্শের ছাপ রয়েছে। তেমনি পবিত্র ও নির্মল নৈতিকতার দিকে নির্দেশনাও একে অলঙ্কৃত করে তোলেছে। ফলে, পারিবারিক তথা সমাজ জীবনে অবলীলাক্রমে নেমে আসে সুখ ও সমৃদ্ধির স্বচ্ছ জোয়ারধারা। এরই বদৌলতে পরিবার ও সমাজ হতে অযৌক্তিক ও অন্যায়-আচরণ বিলুপ্ত হয় এবং পরিবার ও সমাজের অখন্ডতা এবং সুখ শান্তি অটুট ও অজাহত থাকে।
মুসলিম সমাজ ও পরিবারের সদস্যদের জীবন যাত্রা ও কর্মানুষ্ঠানের দিক নিদের্শনা প্রদান করে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করবে না। তাকে লজ্জা ও লাঞ্ছনা দেবে না। তাকে হীন ও ছোট মনে করবে না। তারপর তিনি স্বীয় বক্ষস্থলের দিকে ইশারা করে তিনবার বললেন, তাকওয়া এখানেই, তাকওয়া এখানেই, তাকওয়া এখানেই। মানুষের খারাপ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলমান ভাইকে ঘৃণা করে। ছোট মনে করে। প্রকৃত পক্ষে প্রত্যেক মুসলমানের রক্ত, মাল-সম্পদ, ইজ্জত আব্রু অপর সকল মুসলমানের ওপর হারাম।’ (মুসনাদে আহমাদ: খন্ড ১২, পৃ. ৬৪০, মিসরে ছাপা সংস্করণ)। এই হাদীসের মূল প্রেরণা ও সুবিস্তৃত মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, এখানে মুসলমানদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবন দর্শনের মৌলিক অধিষ্ঠানগুলোর পথনির্দেশনা অত্যন্ত সহজ ও সুন্দরভাবে প্রদান করা হয়েছে। এই হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। ঈমানভিত্তিক বিশ্ব মুসলিমের অখন্ড ভ্রাতৃত্বের ভিত্তি এভাবে স্থাপন করা হয়েছে যে, সকল মানুষ এক আদমেরই সন্তান। সুতরাং তারা পরস্পর ভাই ভাই। এদের কেউ অপরজন হতে পৃথক ও ভিন্নতর নয়। তাছাড়া ঈমান ও আদর্শের ক্ষেত্রেও তারা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং অবিচ্ছেদ্য যোগসূত্রে গাঁথা। মুসলমানগণ এই ধর্ম-বিশ্বাসের ছায়া তলে অবস্থান করে এবং একই আদর্শের অনুসরণ করে। ফলে, তারা একে অপরের সহকর্মী ও সহযোগী। অবিচ্ছেদ্য ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও আদর্শ প্রচারে তারা একে অপরের মনে প্রাণে সহায়তা করে এবং যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা আপনোদনে তৎপর থাকে। সুতরাং এই অভিন্নতা ও অবিচ্ছিন্নতা এবং কর্ম-মুখরতা তাদেরকে একই সমতলে অবস্থানের সুযোগ এনে দেয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন