বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

পরিবার শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতীক

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও গৃহবাসী আপনজনদের সমন্বয়েই পরিবার গঠিত হয়। পরিবারকে পরিহার করে মানবজাতির বৃহত্তর কল্যাণ কল্পনা করা যায় না। মানুষ যেহেতু আল্লাহপাকের প্রতিনিধিত্বমূলক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অঙ্গীকারাবদ্ধ, তাই ইসলাম মানুষকে পরিবারভুক্ত হয়ে বসবাস করার জন্য উৎসাহিত করেছে এবং সুষ্ঠু ও কলুষমুক্ত পরিবার গঠনের প্রতি বারবার তাকিদ দিয়েছে। এই পৃথিবীর বুকে এক একটি মানব পরিবার মূলত: বৃহত্তর মানব সমাজেরই একটি ক্ষুদ্রতর অংশমাত্র। এ কারণে পরিবারকে বাদ দিয়ে স্বাভাবিক সামাজিক জীবন যাত্রা নির্বাহ করা কারও পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই, মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এবং আদিকাল হতেই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। মানুষ আপনজনও প্রিয়জনকে নিয়েই পারিবারিক জীবনের ভিত গড়ে তোলে এবং এই ভিত্তির উপরই প্রতিষ্ঠিত হয় সমাজ সংসারের অবকাঠামো। এই অবকাঠামোর মধ্যে দায়িত্ব, উন্নয়ন, উৎকর্ষ সাধন, শান্তি, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির দু’টি দিক স্বভাবতই নজরে পড়ে। প্রথমত: লক্ষ্য করা যায় যে, মানুষ আপনজন ও প্রিয়জনদের সমন্বয়েই পারিবারিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদনে অগ্রসর হয়। এর সাথে ছোট, বড়, রক্ত সম্পর্কিত বৈবাহিক সম্পর্কিত এবং পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সবারই কিছু না কিছু করণীয় থাকে। এই করণীয় কর্মসম্পাদনের আন্তরিকতাপূর্ণ চেষ্টা, যত্ম, পরিশ্রম যখন একই লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য পরিপূরণের দিকে এগিয়ে যায়, তখন সেখানে ফুটে উঠে মানসিক তৃপ্তি ও আনন্দ। এই তৃপ্তি ও আনন্দই মানুষকে সফলতার দুয়ার প্রান্তে পৌঁছে দেয়। সেখানে তাদের জীবন হয় ধন্য, সার্থক এবং সফল। দ্বিতীয়ত: পরিবারই এর সদস্যদের মাঝে উত্তম আদর্শ ও উন্নত এবং পবিত্র চরিত্রের গুণাবলীর বিকাশ সাধনে উন্নত পরিবারে যেমন উত্তম ও অনুকরণীয় আদর্শের ছাপ রয়েছে। তেমনি পবিত্র ও নির্মল নৈতিকতার দিকে নির্দেশনাও একে অলঙ্কৃত করে তোলেছে। ফলে, পারিবারিক তথা সমাজ জীবনে অবলীলাক্রমে নেমে আসে সুখ ও সমৃদ্ধির স্বচ্ছ জোয়ারধারা। এরই বদৌলতে পরিবার ও সমাজ হতে অযৌক্তিক ও অন্যায়-আচরণ বিলুপ্ত হয় এবং পরিবার ও সমাজের অখন্ডতা এবং সুখ শান্তি অটুট ও অজাহত থাকে।
মুসলিম সমাজ ও পরিবারের সদস্যদের জীবন যাত্রা ও কর্মানুষ্ঠানের দিক নিদের্শনা প্রদান করে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করবে না। তাকে লজ্জা ও লাঞ্ছনা দেবে না। তাকে হীন ও ছোট মনে করবে না। তারপর তিনি স্বীয় বক্ষস্থলের দিকে ইশারা করে তিনবার বললেন, তাকওয়া এখানেই, তাকওয়া এখানেই, তাকওয়া এখানেই। মানুষের খারাপ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলমান ভাইকে ঘৃণা করে। ছোট মনে করে। প্রকৃত পক্ষে প্রত্যেক মুসলমানের রক্ত, মাল-সম্পদ, ইজ্জত আব্রু অপর সকল মুসলমানের ওপর হারাম।’ (মুসনাদে আহমাদ: খন্ড ১২, পৃ. ৬৪০, মিসরে ছাপা সংস্করণ)। এই হাদীসের মূল প্রেরণা ও সুবিস্তৃত মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, এখানে মুসলমানদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবন দর্শনের মৌলিক অধিষ্ঠানগুলোর পথনির্দেশনা অত্যন্ত সহজ ও সুন্দরভাবে প্রদান করা হয়েছে। এই হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। ঈমানভিত্তিক বিশ্ব মুসলিমের অখন্ড ভ্রাতৃত্বের ভিত্তি এভাবে স্থাপন করা হয়েছে যে, সকল মানুষ এক আদমেরই সন্তান। সুতরাং তারা পরস্পর ভাই ভাই। এদের কেউ অপরজন হতে পৃথক ও ভিন্নতর নয়। তাছাড়া ঈমান ও আদর্শের ক্ষেত্রেও তারা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং অবিচ্ছেদ্য যোগসূত্রে গাঁথা। মুসলমানগণ এই ধর্ম-বিশ্বাসের ছায়া তলে অবস্থান করে এবং একই আদর্শের অনুসরণ করে। ফলে, তারা একে অপরের সহকর্মী ও সহযোগী। অবিচ্ছেদ্য ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও আদর্শ প্রচারে তারা একে অপরের মনে প্রাণে সহায়তা করে এবং যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা আপনোদনে তৎপর থাকে। সুতরাং এই অভিন্নতা ও অবিচ্ছিন্নতা এবং কর্ম-মুখরতা তাদেরকে একই সমতলে অবস্থানের সুযোগ এনে দেয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Ameen Munshi ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪১ এএম says : 0
এ ধরণীতে মানুষের জীবনের সূচনা তার জন্মের মাধ্যমে এবং জীবনের ইতি আসে মরণের হীম শীতল স্পর্শে। জন্ম মৃত্যুর মাঝের এই অল্প সময়টুকু মানুষ একাকী কাটাতে পারে না। সে বেড়ে ওঠে স্বাভাবিকভাবে পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশে। তাই প্রত্যেকটি মানুষের জন্য পারিবারিক জীবন তার অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য।
Total Reply(0)
জিএম কাবের ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪২ এএম says : 0
মানব জীবনের সূচনা লগ্ন থেকেই জগতে কোন না কোনভাবে পারিবারিক ব্যবস্থা চালু ছিল। অতীতের সকল আম্বিয়ায়ে ক্বেরামের জীবনে ও সময়কালে পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়। যেমন হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর পরিবারের জন্য দোয়া করেছিলেন: “পরওয়ার দিগার! আমাদের উভয়কে তোমার আজ্ঞাবহ করো এবং আমাদের বংশধরদের থেকেও একটি অনুগত দল সৃষ্টি করো। নিশ্চয়ই তুমি তওবা কবুলকারী, দয়ালু।” (সূরা বাকারা-১২৮)
Total Reply(0)
রুহুল আমিন ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৩ এএম says : 0
অনেক অনেক শুকরিয়া। প্রতিটি পরিবারে সুখের সুবাতাস প্রবাহিত হোক এ কামনা করছি।আমীন
Total Reply(0)
করিম শেখ ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৪ এএম says : 0
আমরা জানি, একটি পরিবার থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। কারণ সমাজের প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মানুষ তার পরিবার থেকেই সমাজ ও রাষ্ট্রের রীতিনীতির সঙ্গে প্রাথমিক পরিচয় লাভ করে। পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় হলে সামাজিক সম্পর্কে এর প্রভাব পড়ে। এ কারণে পরিবারে স্বামী-স্ত্রী এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সুসম্পর্ক অত্যন্ত জরুরি।
Total Reply(0)
হাসান ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৬ এএম says : 0
সুখী পরিবারের অন্যতম মূলনীতি হলো সমঝোতার মনোভাব। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করতে হবে। যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পরস্পরের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।তবেই পরিবারে শান্তি ও নিরাপত্তা মিলেবে।
Total Reply(0)
গাজী ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৭ এএম says : 0
ইসলামে পরিবার ব্যবস্থায় পরিবারের এক সদস্যের সাফল্য-ব্যর্থতা ও উন্নতি-অবনতি অপর সদস্যের সাফল্য-ব্যর্থতা ও উন্নতি-অবনতি হিসেবে গণ্য হয়। এখানে ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা ও আনন্দ সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায় না। পরিবারের সব সদস্যের সার্বিক কল্যাণকে ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়। এই পারিবারিক রূপরেখায় পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের যেমন কিছু অধিকার রয়েছে, তেমনি কিছু দায়িত্বও রয়েছে। যে দায়িত্ববোধ মানুষের মনে সৃষ্টি করে সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা, জন্ম দেয় নৈতিকতা, যা একটি কাঙ্ক্ষিত সুখী পরিবারের মূল চালিকাশক্তি। আর এভাবে ইসলামি পরিবারে পাওয়া যাবে শান্তি ও নিরাপত্তা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন