বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বদান্যতা ও দানশীলতার মতো পরাম্মুখতা ও আত্মতুষ্টিও মানুষের উচ্চতর সম্ভ্রান্ত চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত। বরং বলা যায়, এ দু’টি বিষয় মানব চরিত্রের একই পবিত্র বৈশিষ্ট্যের দু’টি দিক।
এস্তেগানা তথা পরাম্মুখতা ও কানা’আত তথা আত্মতুষ্টি অর্থ মানুষ নিজের বৈধ উপায় এবং নিজের পরিশ্রমের ফলে আল্লাহর তরফ থেকে যা কিছু পাবে, তাকেই নিজের প্রাপ্য অংশ এবং যথেষ্ট বলে মনে করবে। অপরের জিনিসের প্রতি লালসার দৃষ্টি ফেলবে না। কিংবা সৃষ্টির কারো কাছে মুখাপেক্ষিতার হাত প্রসারিত করবে না। কুরআনের হেদায়াত হলো, প্রত্যেকটি মানুষই আল্লাহ তায়ালার বান্দা এবং আল্লাহ তায়ালাই তার করুণাময়-দয়ালু পালনকর্তা। কাজেই তার কর্তব্য হলো, নিজের অভাব-অনটনের জন্য তাকে ছাড়া কারো সামনে নিজের হাত প্রসারিত না করা। আল্লাহর ভান্ডারে সবকিছুই রয়েছে। আর তার করুণা ও রহমতই বান্দার জন্য যথেষ্ট। এ বিষয়ে বিভিন্ন আয়াত কুরআনে কারিমে বর্ণিত হয়েছে।
এখানে কয়েকটি আয়াত উদ্ধৃত করা হলো। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহই কি তার বান্দাদের জন্য যথেষ্ট নন? (তা হলে কেন তারা অন্যের সামনে হাত পাতবে?)।’ (সূরা যুমার : আয়াত ৩৬)। আল্লাহ তায়ালা অন্যদের পৃথিবীতে যা কিছু দিয়ে রেখেছেন, তার প্রতি লোভ না করতে এবং সেগুলোর প্রতি লোভাতুর দৃষ্টিতে না তাকাতে সরাসরি নির্দেশ দান প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘আর কখনো চোখ তুলে তাকাবে না সেসব বস্তু-সামগ্রীর প্রতি, যার মাধ্যমে আমি তাদের মাঝে বিভিন্ন লোককে সমৃদ্ধ করে রেখেছি।’ (সূরা তোয়াহা : আয়াত ১৩১)।
অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘আর সে বস্তুর প্রতি লোভ করো না, যাতে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের মধ্যে কাউকে কারো ওপর বাড় ও অগ্রাধিকার দান করেছেন।’ (সূরা নিসা : আয়াত ৩২)। অর্থাৎ যে বস্তু আল্লাহ তায়ালা কাউকে দিয়েছেন আর তোমাদেরকে দেননি, তোমরা তার লোভ করো না। এমন কি তার প্রতি চোখ তুলেও তাকিও না। এরই নাম তুষ্টি।
তাওয়াক্কুল হলো আত্মতুষ্টি ও পরাম্মুখতার মৌল ভিত্তি। আল্লাহ তায়ালার যে বান্দার তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহ তায়ালার রহমত ও পালন কর্তৃত্বের ওপর বিশ্বাস ও ভরসা নসিব হয়েছে, তার অন্তর এ ব্যাপারে আশ্বস্ত থাকবে যে, আমার যাবতীয় প্রয়োজনের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনিই আমার করুণাময় দয়ালু পালনকর্তা ও কার্যনির্বাহী।
এ ধরনের লোকের মাঝে পরাম্মুখতা ও তাওয়াক্কুল পরিপূর্ণ মাত্রায় সৃষ্টি হওয়া সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তা ছাড়া তাওয়াক্কুল নিজস্বভাবে ও যথাস্থানে বলিষ্ঠতর একটি ঈমানী বৈশিষ্ট্য। যে বান্দার ভাগ্যে তাওয়াক্কুল জুটেছে, সে আল্লাহ, তার কুদরত, তার যাবতীয় ভান্ডার ও বাহিনীকে সর্বক্ষণ নিজের সাথে অনুভব করে এবং প্রত্যক্ষ করে।
সুতরাং কুরআন তার মান্যকারীদেরকে নিজেদের ভেতরে তাওয়াক্কুলের গুণ সৃষ্টি করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত করে। এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেন, তা হলে কেউই তোমাদের ওপর জয়ী হতে পারে না। আর যদি তিনি সাহায্যের হাত তুলে নেন, অতঃপর কে তোমাদের সাহায্য করতে পারে? আর ঈমানদারদের আল্লাহর ওপরই তাওয়াক্কুল ও ভরসা করা উচিত।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৬০)।
আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘আল্লাহকে ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই (শুধুমাত্র তিনিই মালিক ও উপাস্য)। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা শুধুমাত্র আল্লাহর ওপরই তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে।’ (সূরা তাগাবুন : আয়াত ১৩)।
অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা ভরসা কর সেই চির জীবন্ত সত্তার ওপর, যার লয় ও মৃত্যু নেই (এবং তাকে ছাড়া সবই নশ্বর)’। (সূরা ফুরকান : আয়াত ৫৮)। আরেক জায়গায় ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে বান্দা আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। নিঃসন্দেহে আল্লাহ নিজ কাজ সম্পন্নকারী।’ (সূরা তালাক : আয়াত ৩)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Ameen Munshi ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০২ এএম says : 0
আল্লাহ্ তাআলার উপর ভরসা ইসলামে একটি বিরাট বিষয়। এর গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। আল্লাহর প্রতি ভরসা ছাড়া কোন বান্দাই কোন মূহুর্ত অতিবাহিত করতে পারে না। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও বটে। কেননা এর মাধ্যমে আল্লাহর তাওহীদের সাথে সম্পর্ক গাড় ও গভীর হয়।
Total Reply(0)
Saiful Islam ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৩ এএম says : 0
দুনিয়া-আখেরাতের যাবতীয় বিষয়ের কল্যাণ লাভ ও ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য সঠিক ভাবে অন্তর থেকে আল্লাহর উপর নির্ভর করা। বান্দা তার প্রতিটি বিষয় আল্লাহর উপর সোপর্দ করবে। ঈমানে এই দৃঢ়তা আনবে যে, দান করা না করা, উপকার-অপকার একমাত্র তিনি ছাড়া আর কারো অধিকারে নেই।
Total Reply(0)
Mohammad Mosharraf ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৩ এএম says : 0
وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ “যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হবেন।” [সূরা ত্বলাক- ৩]
Total Reply(0)
করিম বিন জলিল ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৪ এএম says : 0
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, বিশুদ্ধভাবে আল্লাহর উপর ভরসার সাথে আবশ্যক হল, জীবিকার উপায়-উপকরণ অনুসন্ধান করা ও কাজ করা- ভরসা করে বসে না থাকা।
Total Reply(0)
Saiful Bin Habib ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৫ এএম says : 0
আল্লাহ্ আমাদেরকে তাঁর প্রতি সঠিকভাবে ভরসা করার তাওফীক দান করুন। আমীন॥
Total Reply(0)
Jamal Khan ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৬ এএম says : 0
আল্লাহর উপর ভরসা মানব জীবনে একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ স্তর। এর প্রভাব-প্রতিপত্তিও সুদূরপ্রসারী। ঈমানের যেসব বিষয় ফরয বা আবশ্যকীয়, এটি তন্মধ্যে শ্রেষ্ঠ। দয়াময় আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে যে সকল আমল ও ইবাদত রয়েছে তন্মধ্যে এটি উত্তম। আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতিদানে তাওয়াক্কুলের মত উঁচু স্তর দ্বিতীয়টি মেলে না। কেননা যাবতীয় কাজ আল্লাহর উপর ভরসা ও তাঁর সাহায্য ছাড়া অর্জন করা সম্ভব নয়।
Total Reply(0)
Mohammed Shah Alam Khan ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৭ এএম says : 0
যখন ইসলাম বিরোধীরা মুসলমানদের হুমকি দেয় এবং শত্রুপক্ষের জনশক্তি ও অস্ত্র শক্তির ভয় দেখায়, তখন এই তাওয়াক্কুলই মুমিনদের একমাত্র অস্ত্র হয়ে দাঁড়ায়।
Total Reply(0)
Mohammad Yousuf ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৫:২৬ এএম says : 0
আল্লাহর উপর একমাত্র ভরসা রাখতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন